ইইউ ও মধ্যপ্রাচ্যের ‘গিভ অ্যান্ড টেক’ কূটনীতি

ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও ছয় দেশের গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসি) শীর্ষ বৈঠক হলো। বুধবার সেখানেই লাল কার্পেটের ওপর দিয়ে হাঁটছিলেন সৌদি আরবের যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান। একবার তিনি সাংবাদিকদের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়লেন। তারপর ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সঙ্গে গভীরভাবে কিছু আলোচনা করতে শুরু করলেন।

 

একসময় সৌদি আরবের যুবরাজকে  নিয়ে হৈচৈ কম হয়নি। ২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাসোগির হত্যায় তার ভূমিকা নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো সোচ্চার হয়েছে। কিন্তু এখন তাকে নিয়ে আর যে ইইউর কোনো আপত্তি নেই, তিনি যে কূটনীতির মূল ধারায় চলে এসেছেন, সেটা বোঝা গেল।

কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন তার উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল।

ইইউর কূটনীতিকদের প্রশ্ন করা হয়, সৌদির যুবরাজের প্রথমবার ব্রাসেলস সফর নিয়ে কি বিতর্ক দেখা দিয়েছে? তাদের জবাব ছিল, এমন কোনো বিতর্কের কথা তারা শোনেননি।

 

তাদের মনোযোগ অবশ্য অন্য জায়গায় ছিল। কারণ দুই পক্ষই তাদের প্রতিবেশীদের সংঘাত নিয়ে একে অপরের ওপর চাপ দিতে ব্যস্ত ছিল।

রাশিয়ার কড়া নিন্দা চেয়েছিল ইইউ
ইইউ ও জিসিসি সূত্র জানাচ্ছে, বুধবারের শীর্ষ বৈঠকের কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।

ইইউ চেয়েছিল, এই শীর্ষ সম্মেলন থেকে ইউক্রেনে আগ্রাসনের জন্য রাশিয়ার কড়া নিন্দা করা হোক।

 

একজন ইউরোপীয় কূটনীতিক জানিয়েছেন, জিসিসির সদস্য দেশগুলো গৃহীত প্রস্তাবে রাশিয়ার নামই প্রথমে রাখতে চায়নি। জিসিসির সদস্য দেশের মধ্যে আছে সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, কুয়েত ও ওমান। শেষ পর্যন্ত নেতারা ২০২২ সালে জাতিসংঘের প্রস্তাবে যা বলা হয়েছিল, সেটাই প্রস্তাবে রাখতে একমত হন। জাতিসংঘের প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কঠোর নিন্দা করা হচ্ছে।

 

ইউরোপীয়ান কাউন্সিল অব ফরেন রিলেশনসের ভিজিটিং ফেলো সিনজিয়া বিয়ানকো চলতি মাসের গোড়ায় লিখেছেন, ‘কাতার, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত চেষ্টা করেছিল, ইউক্রেনের আটক শিশুদের রাশিয়া ছেড়ে দিক, বিনিময়ে ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধবন্দিদের মুক্তি দিক। কিন্তু এই সংঘাতের উৎপত্তি ও সমাধান নিয়ে নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে ইইউর দেশগুলোর মতে মেলেনি।’

ইইউ চেয়েছিল, রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টিও রাখতে। এর আগের দুইটি খসড়া প্রস্তাবে সেখানে এই প্রসঙ্গে সরাসরি উল্লেখ  ছিল। কিন্তু চূড়ান্ত প্রস্তাবে শুধু বলা হয়েছে, নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থাগুলো ও তার রূপায়ণ নিয়ে আলোচনা হবে।

মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে কঠোর প্রতিক্রিয়া চেয়েছিল জিসিসি
এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলও সহিংসতার কবলে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে জিসিসি চেয়েছিল, ইসরায়েলের কড়া সমালোচনা করা হোক। যৌথ ঘোষণাপত্রে গাজা ও লেবাননে যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছে এবং ইসরায়েল সরকারের বসতি সম্প্রসারণ করা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে তাদের বসতিকে আইনি ঘোষণার সিদ্ধান্তের নিন্দা করা হয়েছে।            

কিন্তু জিসিসির এক সূত্র জানিয়েছেন, ইউক্রেনের তুলনায় মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে যে ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে তারা হতাশ। সিনজিয়াও বলেছেন, ‘ইউরোপের দেশগুলো যেন লেকচার কম দেয় এবং আরো বেশি করে মধ্যপ্রাচ্যের কথা শোনে।’

কাতারের নেতা শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি ব্রাসেলসে প্রারম্ভিক ভাষণে সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, দ্বিচারিতা করলে তার ফল ভালো হবে না। কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, নীতি সবার জন্য এক হতে হবে।

ইরান ইস্যু
এ ছাড়া ইরানের ক্ষেত্রে ভাষা ব্যবহারে সংযত থেকেছে দুই পক্ষ। যৌথ ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ইইউ ও জিসিসি চায় ইরান যেন ওই অঞ্চলে উত্তেজনা কম করার চেষ্টা করে।

ইউ কূটনীতিকরা জানিয়েছেন, জিসিসি ইরানের বিরুদ্ধে কড়া ভাষার ব্যবহার চায়নি। জিসিসি সূত্র জানিয়েছেন, ইরান নিয়ে পরিস্থিতি খুবই স্পর্শকাতর ও বিপজ্জনক। জিসিসি দেশগুলো কূটনৈতিক পথে ইরানের সঙ্গে আলোচনা করছে। এটাই একমাত্র পথ বলে তারা মনে করে।

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন