দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গকারী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে অবস্থান নিয়েছে সিলেট বিএনপি। কোন ধরণের অপকর্মে না জড়াতে সংগঠনের পক্ষ থেকে বারবার সতর্কবার্তা দিয়ে যাচ্ছেন নেতারা। এরপরও দলীয় কঠোর নির্দেশনা না মেনে কেউ কেউ জড়াচ্ছেন ছিনতাই, চাঁদাবাজি, লুটপাট ও চোরাকারবারের মতো অপকর্মে। কিন্তু যখনই দায়িত্বশীল নেতাদের কাছে প্রমাণ আসছে তখন সাথে সাথে বহিস্কার হচ্ছেন অভিযুক্ত নেতাকর্মী।
প্রথমে স্থানীয় নেতারা সাময়িক ও পরবর্তীতে কেন্দ্র থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হচ্ছে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও নীতি-আদর্শ বর্হিভূত কর্মকান্ড করে কেউ পার পাবে না বলে কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি নেতারা।
সরকারি সম্পদ লুটপাটের ঘটনায় সর্বশেষ বুধবার পদ হারিয়েছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শাহপরাণ। দলীয় সূত্র জানায়, ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর এক রাতে জাফলংয়ের পিয়াইন ও ধলাই নদীর উৎসমুখ থেকে শতকোটি টাকা মূল্যের প্রায় ১ কোটি ঘনফুট পাথর লুট হয়।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহপরাণের পদ স্থগিত করা হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী স্বাক্ষরিত শাহপরাণের পদ স্থগিতের চিঠিতে তার বিরুদ্ধে সরকারি সম্পদ পাথর ও বালু অবৈধভাবে উত্তোলনের সুষ্পষ্ট অভিযোগ থাকা এবং দলীয় শৃঙ্খলা এবং নীতি-আদর্শ পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করা হয়।
এর তিনদিন আগে ১৩ অক্টোবর রাতে ভারত থেকে অবৈধভাবে আসা চিনির ট্রাক ওসমানীনগর উপজেলার সাদিপুর সেতুর কাছে ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে জনতার হাতে আটক হন মহানগরীর ২৫নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. সুলেমান হোসেন সুমন ও ২৬নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান। অভিযোগ পাওয়ার পরপরই ওই রাতে সুমন ও আবদুল মান্নানকে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিস্কার করেন মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী। পরদিন কেন্দ্রের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভি স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ওই দুই নেতাকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হয়।
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে গত মঙ্গলবার জকিগঞ্জ পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছালেহ আহমদ ও বিএনপি নেতা সুলতান আহমদকেও সাময়িক বহিস্কার করেছে জেলা বিএনপি।
এর আগে অভ্যন্তরিণ বিরোধের জের ধরে মারামারির ঘটনায় ১৪ অক্টোবর মঙ্গলবার জকিগঞ্জ পৌর স্বেচ্ছাসেবকদলের সদস্যসচিব আবদুস সালামের পদ স্থগিত করা হয়েছে। একই সাথে তাকে কেন সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হবে না, এই মর্মে তিন দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলেছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আবদুল আহাদ খান জামাল ও সদস্যসচিব শাকিল মোর্শেদ।
এদিকে, দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় এমন কোন কর্মকান্ডে না জড়াতে কঠোরভাবে হুশিয়ারি দিয়েছে সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদল। নেতৃবৃন্দ এক বিবৃতিতে বলেন, ষড়যন্ত্রকারী মহলের ইন্ধনে বিচ্ছিন্ন কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা বিভিন্ন স্থানে ঘটছে। কিন্তু এসব ঘটনার সাথে যুবদলের কোন নেতাকর্মীর সম্পৃক্ততা নেই। যুবদলের কোন নেতাকর্মী কোন অপকর্মে জড়ালে তাকে সংগঠন থেকে বহিস্কার করা হবে।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী জানান, ‘দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কাজের ক্ষেত্রে দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করছি। কারো দ্বারা দলের সুনাম বা ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হলে আমরা বরদাশত করবো না। তিনি যত বড় নেতাই হোন না কেন- দোষ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে দ্রুত সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন