পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে বিশ্বব্যাংক সন্তোষজনক সাড়া দিয়েছে: অর্থ উপদেষ্টা

চলমান বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ)-এর বার্ষিক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বিশ্ববাসী নতুনভাবে জানল বাংলাদেশকে। হলভর্তি বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী ও অতিথিদের সামনে জমাকীর্ণ মঞ্চে বসে থাকা আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা চেয়ার থেকে উঠে এসে বাংলাদেশের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদের হাত চেপে ধরে বললেন, সালেহ উদ্দিন আহমেদ আমার সাবেক সহকর্মী। ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বাংলাদেশ আমার আগেরই চেনা। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সেখানে ব্যাপক সংস্কার কার্ষক্রম নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

আমরা এই সংস্কার কার্যক্রমে জোরালো সহযোগিতা ও সমর্থন দিয়ে আসছি। সামনের দিনেও দেশটি প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাবে।

 

গতকাল বুধবার সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের বৈঠক শেষে বাংলাদেশের বৈঠক ও আলোচনাগুলোর বিষয়ে সাংবাদিকদের এভাবে বিস্তারিত জানাচ্ছিলেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ।  বিশ্বব্যাংক সদর দপ্তরে বাংলাদেশ কার্যলয়ে তিনি এ ব্রিফিং করেন।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্ণর ড. মো. হাবিবুর রহমান।

 

ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বাংলাদেশ নিয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, তারা লোন পরিশোধেও ভালো করছে। নানা রকম সংকটে থেকে কিস্তি খেলাপি হয়নি। দেশটি নতুন করে কিছু ঋণের প্রস্তাব দিয়েছে আমরা সেগুলো নিয়েও ইতিবাচক চিন্তা করছি।

জর্জিয়েভার এমন সম্বোধনে পুরো হল রুমে তখন মুহুর্মুহু হাত তালি। বৈঠকে আইএমএফ বিভিন্ন দাতা সংস্থার ঋণ পরিষদ করার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ দিয়েছে। 

 

বাংলাদেশ কত টাকা ঋণ সহায়তা পেতে যাচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা টাকার অঙ্ক তাদের কাছে তুলে ধরেছি। আলটিমেটলি তারা কত টাকা দেবে বিশ্বব্যাংক তাদের বোর্ডে সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাবে। তবে নতুন বাংলাদেশ গড়তে অর্থ চাওয়ার অঙ্ক শুনে বিশ্বব্যাংক আঁতকে উঠেনি।

নতুন বাংলাদেশ গঠনে যার যার কাছে যত টাকা চেয়েছি প্রত্যেকে পজিটিভ এবং সন্তোষজনক সাড়া দিয়েছে। তবে সহায়তার পরিমাণটা পরে জানানো হবে বলে জানান তিনি। বাংলাদেশের প্রতি তাদের আস্থা আছে। ১৯৯০-এর পরের সব সরকারই এ দেশের উন্নয়ন ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। এখানে কোনো সরকারকেই বাহবা দেওয়া বা কাউকে হেয় করার মতো একক কোনো বিষয় নির্ভর করে না।

 

বার্ষিক সভার দ্বিতীয় দিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিশ্ব অর্থনীতির ভবিষ্যৎ গতিপ্রকৃতি নিয়ে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক আউটলুক রিপোর্ট প্রকাশ করে আইএমএফ। যাতে সংস্থাটি বলেছে, এ বছর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে সাড়ে ৪ শতাংশ। এদিন প্রকাশিত গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্টে বলা হয়, এখনো বহু দেশে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে মুদ্রা ব্যবস্থাপনা ও চড়া সুদহার নিয়ে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বাংলাদেশকে এ খাতে স্থিতিশীলতা ফেরাতে সহায়তা দেবে আইএমএফ।

এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধির এই নিম্নগতি নিয়ে মোটেও চিন্তিত নয় সরকার। বরং ধাক্কা সামলে ভালো কিছুর প্রত্যাশা তার কথায়।

শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা বিবেচ্য হবে না জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার চেয়ে বেটার ছিল বেটার করবে। আমরা শ্রীলঙ্কা হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমরা ব্যাংকের একীভূত করব কিনা সেটি আগামী মাস থেকে পরিষ্কার হবে। এখন ব্যাংকগুলোর মূলধন, সম্পদ ও দায় এর তথ্য পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিকভাবে অডিটর দিয়ে এগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ব্যাংকগুলোর অ্যাসেট কোয়ালিটি অ্যাসেসমেন্ট আগামী মাসে শুরু করব। তথ্যগুলো পাবার পর আরো ব্যাংক একীভূত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমাদের রোডম্যাপ চক আউট করা আছে।

প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষ দূত অধ্যাপক ড. লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশ একটি স্ট্রাকচারাল রিফর্মসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেটি চাচ্ছি তার চেয়ে বেশি পরিমাণ অর্থ দিতে প্রস্তুত রয়েছে তারা। সঠিকভাবে ব্যয় করতে পারলে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে যেকোনো পরিমাণ অর্থ পাওয়া যাবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিশ্রুত সংস্কার বাস্তবায়নে আর্থিক এবং কারিগরি সহযোগিতা দিতে সম্মত হয়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা।

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন