সড়ক-ফুটপাত দখলমুক্ত করার অভিযানে সাবেক মেয়র আরিফ

সিলেট মহানগরের সড়কগুলোতে শৃঙ্খলা ফেরাতে অবিরাম কাজ করছে সিটি করপোরেশন, ট্রাফিক পুলিশ ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। সড়ক ও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে এবার যুক্ত করা হয়েছে সেনাবাহিনীকে। এ অবস্থায় বসে থাকেননি সিলেট সিটি’র দুইবারের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও। সর্বশেষ সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) দেওয়া সময় (রবিবার- ২৭ অক্টোবর) পার হওয়ার পর সাঁড়াশি অভিযান পরিচালিত হচ্ছে সিলেটে।

 

 

 

রবি ও সোমবার পরিচালিত অভিযানে ছিলেন সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সোমবার (২৮ অক্টোবর) বেলা ১১টায় অভিযানের শুরুতে নগরভবনের পার্শ্ববর্তী সিটি সুপার মার্কেটের প্রত্যেকটি দোকানের সামনে থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এসময় দোকানের সামন দখল করে টানানো ত্রিপল, মালামাল ও মাল ঝুলিয়ে রাখার র‍্যাক সরিয়ে দেয় যৌথ বাহিনী। 

 

অভিযানে নেতৃত্ব দেন সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মতিউর রহমান ও এসএমপি’র ট্রাফিক ডিসি বি এম আশরাফ উল্যাহ তাহের।

 


সঙ্গে থাকা আরিফুল হক চৌধুরী এসময় সাংবাদিকদের বলেন- আমার মেয়াদকালে সিটি করপোরেশন কার্যালয়ের পেছনের লালদিঘীর পাড় মাঠে হকাদের পুনর্বাসন করে দেই। এ মাঠে যাওয়ার রাস্তা সিটি মার্কেটের ভেতর দিয়ে। কিন্তু রাস্তাটি প্রায় পুরোটাই মালামাল দিয়ে দখল করে রাখেন এ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। তাদেরকে বার বার দোকানের সামনে থেকে জঞ্জাল সরানোর জন্য বলা হলেও গড়িমসি করেন। এই রাস্তা দিয়ে হকার্স মার্কেটের ক্রেতা-বিক্রেতাদের পাশাপাশি সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও যাতায়াত করে। সর্বোপরি- যান চলাচলের বিঘ্ন ঘটায় এ রাস্তা দখলমুক্ত না করা হলে হকারদের প্রত্যাবর্তন ফলপ্রসূ হবে না। যে কারণে আজ (সোমবার) অভিযান চালিয়ে এ রাস্তা মুক্ত করা হচ্ছে। এছাড়া অভিযান চালিয়ে অন্যান্য রাস্তা ও ফুটপাত থেকে হকারদের সরানো হচ্ছে। যৌথ বাহিনীর এই অভিযানে জনদুর্ভোগ কমে যাবে বলে আমরা মনে করছি। 


অভিযানকালে বি এম আশরাফ উল্লাহ তাহের বলেন- যেখানেই জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হবে, সেখানেই আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমরা গতকাল (রবিবার) থেকে রাস্তাঘাট এবং ফুটপাত থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করেছি। হকারদের তাদের নির্ধারিত স্থানে যেতে বার বার বলছি। কিন্তু তাদের অভিযোগ- তাদের জন্য নির্ধারিত মাঠে যাওয়ার রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তাই ক্রেতারা সেখানে যেতে চান না। তাই এ সমস্যা দূর করতে হকার মার্কেটের ভিতর দিয়ে হকারদের মাঠে প্রবেশের যে রাস্তা সেটি দখলমুক্ত করতে আমরা সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করছি। দোকানের সামনে টানানো ত্রিপল, রাখা মালামাল ও মাল ঝুলিয়ে রাখার র‍্যাক সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। 

 

 

অভিযানে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও সিলেট সিটি করপোরেশনের স্বেচ্ছাসেবকরা ছিলেন। 

 

এর আগে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত  সিলেট মহানগরের ফুটপাত-সড়ক থেকে ভ্রাম্যমাণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের (হকার) সরে যেতে এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছিলো মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) ও সিটি করপোরেশন (সিসিক)। ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে অভিযানও শুরু করা হয়। দু-তিন দিন হকাররা ফুটপাত-সড়ক থেকে সরে থাকলেও ফের বসে পড়েন তারা।

 


 
বেলা গড়ানোর পর থেকেই মহানগরের ব্যস্ততম বন্দর, জিন্দাবাজার ও আম্বরখানাসহ বিভিন্ন জায়াগয় সড়ক ও ফুটপাত দখল করে পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন হকাররা, মধ্যরাত পর্যন্ত করেন বেচা-বিকি। ফলে রাত-দিন এসব এলাকায় সড়কে যানজট লেগেই থাকে। ভোগান্তি পোহান যাত্রীসাধারণ ও নগরবাসী। এছাড়া সড়কে অবৈধ পার্কিংয়ের ভোগান্তি তো আছেই।


 
ফুটপাত-রাস্তা দিয়ে স্বস্তিতে হাটতে পারেন না পথচারীরা। সড়কের আয়তন কমে যায় একটু পরপরই লাগছে যানজট। বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয় বন্দরবাজারস্থ সিলেট প্রধান ডাকঘরের সামনে দিয়ে গেলে। এখানে প্রতিদিন বিকাল থেকে প্রায় পুরো রাস্তা দখল করে বসে যান হকাররা। মধ্যরাত পর্যন্ত হাক-ডাক দিয়ে বেচা-বিকি করেন সবজি-মাছসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্য।


 
সিসিকের সাবেক দুই মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মহানগরের হকার পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। দুজনই নগরভবনের পেছনের লালদিঘীরপাড় মাঠে তাদের পুনর্বাসনের জন্য শেড তৈরি করে দিয়ে সেখানে বসিয়ে সড়ক ও ফুটপাতকে জঞ্জালমুক্ত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রথমে সেখানে গিয়ে কিছুদিন পরই তারা ফের সড়ক-ফুটপাত দখল করে নেন।
 

 

গত ৫ আগস্টের পর থেকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন হকররা। প্রত্যেক সড়কের- বিশেষ করে চৌহাট্টা পয়েন্ট থেকে তালতলা পয়েন্ট পর্যন্ত পুরোটাই সড়কের অর্ধেক এবং আস্ত ফুটপাত দখল করে রাত-দিন ব্যবসা চালাতে থাকেন হকাররা। এ অব্স্থায় আগস্ট মাসের শেষ দিকে প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণাধীন মেয়রবিহীন সিটি করপোরেশন হকারদের ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে কঠোর বার্তা প্রদান করে। বলা হয়- মহানগরের সড়ক ও ফুটপাত দখলমুক্ত করে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ১ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে পুলিশ প্রশাসন ও ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে উচ্ছেদ অভিযানে নামবেন সিটি কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে দেওয়া হয় বিজ্ঞপ্তি, দু-তিন দিন মহানগরে মাইকিংও করা হয়।


 
ঘোষণা অনুযায়ী ১ সেপ্টেম্বর অ্যাকশনে নামে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) কর্তৃপক্ষ। তবে ছাত্র-জনতা সঙ্গে ছিলো না। অভিযানে নেতৃত্ব দেন সিসিকের প্রশাসক ও সিলেট বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ ছিদ্দীকী (এনডিসি)। এদিনই শুধু অনেকটা হকারমুক্ত দেখা যায় মহানগর। কিন্তু দু-তিন দিন পর অবস্থা হয়ে যায় তথৈবচ।
 
পরবর্তীতে ১৭ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর- এই ৭ দিন হকারদের সময় বেঁধে দেন এসএমপি’র নতুন কমিশনার মো. রেজাউল করিম (পিপিএম-সেবা)। এ সময়েও মাইকিংও করা হয় মহানগরে। ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে অভিযান শুরু করে সিসিক। দু-তিন দিন হকাররা কিছুটা সরে থাকলেও আবারও তারা দখল করে নিয়েছেন সড়ক-ফুটপাত। দুপুর থেকেই তারা বসে যান পণ্য নিয়ে।


সর্বশেষ রবিবারের (২৭ অক্টোবর) আগ পর্যন্ত সিলেট মহানগরে সময় বেঁধে দেয় সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ও মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)। নির্দেশনা অনুযায়ী রবিবার থেকে মহানগরের ফুটপাত ও রাস্তা দখলমুক্ত এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছে। এবার অভিযানে অংশ নিয়েছে সেনাবাহিনী। নগরবাসীর প্রত্যাশা- এবার হয়তো দখলমুক্ত হতে পারে সিলেটের সড়ক ও ফুটপাত, কমতে পারে ভোগান্তি।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন