কাশ্মীরে ২০ দিনে ৭ হামলা, কেন বাড়ছে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ

গত ২০ দিনের মধ্যে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরে সাতটি সন্ত্রাসবাদী হামলা করা হয়েছে। কেন বেড়ে গেল এই সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ?

গত সোমবার জম্মু ও কাশ্মীরের আখনুরে নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে সেনা অ্যাম্বুল্যান্সে গুলি চালায় তিন সন্ত্রাসী। বালতাল এলাকায় সন্ত্রাসীরা গুলি চালিয়ে কাছের একটি জঙ্গলে ঢুকে পড়ে। তারপর সেখানে শুরু হয় সেনা অভিযান।

সোমবারই একজন সন্ত্রাসী নিহত হয়। এরপর মঙ্গলবার সকালে দুই সন্ত্রাসবাদীর মৃত্যু হয়েছে। 

 

এর আগে গত সপ্তাহে গুলমার্গে সেনাদের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল সন্ত্রাসীরা। এতে দুই সেনা সদস্য ও দুই মালবাহক আহত হন।

পরে হাসপাতালে তাদের মৃত্যু হয়। এই আক্রমণের কয়েক ঘণ্টা আগেই পুলওয়ামার ত্রালে বাইরের রাজ্যের এক শ্রমিককে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। সেই শ্রমিক গুরুতর আহত হয়েছেন।

 

তার কিছুদিন আগে সোনমার্গে নির্মীয়মাণ একটি টানেলের কাছে সড়ক নির্মাণ সংস্থার সাইটে ঢুকে গুলি চালিয়ে ছয়জন বাইরের রাজ্য থেকে আসা শ্রমিক ও একজন কাশ্মীরি চিকিৎসককে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।

 

গত ১৮ অক্টোবর সোপিয়ানে বিহার থেকে আসা এক শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসবাদীরা। তার দেহে ১২টি বুলেট লেগেছিল। একটি ক্ষেতে তার দেহ পড়েছিল। তার আগে গত ৯ অক্টোবর দুই সেনা সদস্যকে অপহরণ করে সন্ত্রাসীরা। একজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।

অন্যজনের বুলেটবিদ্ধ দেহ পরে উদ্ধার করা হয়।

 

মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া
সদ্যঃসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনের পর ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লা জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথগ্রহণের পর একাধিক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে।

ওমর আবদুল্লা বলেছেন, সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় তিনি উদ্বিগ্ন। তিনি কঠোরতম ভাষায় এই হামলার নিন্দা করছেন।

গুলমার্গে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর কংগ্রেস বলেছে, এনডিএর ব্যর্থ নীতির জন্য এই অবস্থা হয়েছে। কংগ্রেসের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় এনডিএ সরকার জম্মু ও কাশ্মীরে নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের অবিলম্বে এর দায় নিতে হবে এবং সেনা, নিরাপত্তা বাহিনী ও সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে হবে।

‘পাকিস্তানের থেকে আসা সন্ত্রাসবাদী’
জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক ডিআইজি এস পি বেইদ বার্তা সংস্থা এএনআইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আইএসআই রাজৌরি পুঞ্চ থেকে অনুপ্রবেশ শুরু করে। কিছু মানুষকে অনুপ্রবেশ করায়। এর মধ্যে পাকিস্তানের সেনার লোক আছে। এসএসজি কমান্ডো আছে, যারা জঙ্গলে লড়াই করার ক্ষেত্রে খুবই দক্ষ।’

সাবেক ডিআইজির সঙ্গে এই বিষয়ে একমত ডিডাব্লিউর এ বি রউফ গনি। তার মতে, ‘যারা সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে মারা গেছেন, তারা সবাই বিদেশি। তাই অনুপ্রবেশ বেড়েছে বলে মনে হচ্ছে। আমাদের সামনে অনুপ্রবেশ বাড়ার কোনো তথ্য নেই। তবে এখন যে সন্ত্রাসবাদীরা সক্রিয় হয়েছে, তারা স্থানীয় মানুষ নয়। বরং তারা পাকিস্তান থেকেই এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই অনুপ্রবেশ বাড়ার কথাটা উঠছে।’

প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা বলেন, ‘পাকিস্তানের ঘরোয়া পরিস্থিতি যতই খারাপ হোক না কেন, তাদের কাশ্মীর নীতিতে কোনো বদল হয়নি। বরং তারা আরো বেশি করে কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ করিয়ে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বাড়িয়েছে।’

তার মতে, ‘এই চেষ্টা দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তান করে আসছে। মাঝখানে তারা স্থানীয় মানুষকে দিয়ে এই কাজ করাবার চেষ্টা করেছে। এখন আবার তারা অনুপ্রবেশের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদীদের ঢুকিয়ে এই কাজ করছে। সম্ভবত পাকিস্তানও তাদের ঘরোয়া বিষয় থেকে দেশের মানুষের দৃষ্টি অন্যত্র সরাতে চায়। আর তারা দীর্ঘদিন ধরে কাশ্মীরে অস্থিরতা তৈরি করে ভারতকে বিপাকে ফেলতে চাইছে।’

ডিডাব্লিউ উর্দুর সাংবাদিক সালাহউদ্দিন জৈন বলেছেন, ‘সন্ত্রাসবাদীরা দেখাতে চাইছে, কাশ্মীর সমস্যার সমাধান এখনো হয়নি। লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সমস্যা থেকেই গেছে।’

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন