ওয়াশিংটন থেকে ফিরেই টাস্কফোর্স-৩-কে পাচারের টাকা ফেরানোর কাজের গতি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। যত দ্রুত সম্ভব পাচার হওয়া অর্থ ফেরতের সব প্রক্রিয়া শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বিষয়টি গতকাল বুধবার নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা।
তিনি জানান, বিগত সময়ে বিভিন্নভাবে দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
পাচার হওয়া অর্থ ফেরানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের দক্ষতার অভাব রয়েছে। এ জন্য আন্তর্জাতিক মহলের সাহায্য নেওয়া হবে।
শেখ হাসিনার শাসনামলে সাবেক প্রশাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে মিলে ব্যাংকিং খাত থেকে ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। সম্প্রতি ফিন্যানশিয়াল টাইমসকে (এফটি) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এই দাবি করেন।
আহসান এইচ মনসুরের হিসাব অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো অধিগ্রহণের সময় নতুন অংশীদারদের ঋণ ও আমদানি খরচ বেশি দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে দুই লাখ কোটি টাকা (১৬.৭ বিলিয়ন ডলার) পাচার করা হয়েছে।
টাস্কফোর্সের সঙ্গে বৈঠকে গভর্নর পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে অগ্রাধিকার দিয়ে কোন কাজগুলো করতে হবে, তা নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকসহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক মহল পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে কারিগরি সহযোগিতা দেবে বলে জানান গভর্নর।
বৈঠক প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরো জানান, সাম্প্রতিক সময়ে ওয়াশিংটন সফর করেছেন গভর্নর। এ সময় শুধু পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার জন্য আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে পাঁচটি বৈঠক করেছেন তিনি। অন্যদিকে ফেডারেল রিজার্ভের সঙ্গেও গভর্নরের বৈঠক হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ফেড টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
তিনি আরো জানান, বিশ্বব্যাংকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মাল্টিল্যাটারাল ইনভেস্টমেন্ট এজেন্সি রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলে এক বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
দেশের বিদ্যমান রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের সঙ্গে এই অর্থ যুক্ত হলে বাংলাদেশের রপ্তানি কার্যক্রম আরো ত্বরান্বিত হবে বলে আশাবাদী তিনি। প্রয়োজন হলে যেকোনো ধরনের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। শুধু বিশ্বব্যাংকই নয়, যুক্তরাজ্য সরকার, আইএমএফ, এডিবি, ইউএস ট্রেজারি—সবাই সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
টাস্কফোর্সের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এই মুহূর্তে প্রাথমিক কাজ শেষ হয়েছে। সন্দেহজনক লেনদেন স্থগিত করে তাদের অপরাধ শনাক্ত করা হচ্ছে। কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে এবং অসৎ কাজে ব্যবহূত হয়েছে তা নিরূপণ করা হচ্ছে। এরপর এই তথ্য দুদক ও পুলিশের বিশেষ শাখার কাছে পাঠানো হবে। এরপর তারা মামলাসহ বাকি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। পরের ধাপে আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়ায় বিদেশ থেকে টাকা ফেরত নিয়ে আসা হবে। প্রকৃতপক্ষে এর আগে কখনো এত বড় আকারের কাজ হাতে নেওয়া হয়নি। তাই আমরাও বুঝতে পারছি না ঠিক নির্ধারিত কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে টাকাগুলো ফেরত আসবে।’
মুখপাত্র জানান, সার্কভুক্ত দেশগুলোর সংগঠন সার্ক ফিন্যান্স গভর্ন্যান্স ফোরামের সভাপতি মনোনীত হয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
২৯ সেপ্টেম্বর বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে ফেরত আনতে বিদ্যমান টাস্কফোর্স পুনর্গঠন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। টাস্কফোর্সের সভাপতি করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে। আর সদস্য হিসেবে থাকবেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, অপরাধ তদন্ত বিভাগ, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়, কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) একজন করে উপযুক্ত প্রতিনিধি।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন