রাষ্ট্রপতি দণ্ড মওকুফ করার পরও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা আইনিভাবে মোকাবেলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ কারণে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে দুটি আবেদন করেছিলেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। আদালত দুটি আবেদনই মঞ্জুর করেছেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালত খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন।
এরপর আপিলের রায়ে হাইকোর্ট সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিল আপিল বিভাগে বিচারাধীন। আর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালত খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিলটি হাইকোর্টে বিচারাধীন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার আপিল দ্রুত শুনানি করতে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা আপিলের পেপারবুক তৈরির অনুমতি চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।
গতকাল রবিবার শুনানির পর আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. রেজাউল হকের চেম্বার আদালত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার আপিলটি শুনানির জন্য আগামী ১০ নভেম্বর তারিখ দেন। অন্যদিকে নিজ খরচে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা আপিলের পেপারবুক তৈরির অনুমতি দেন বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম, গাজী কামরুল ইসলাম সজল।
আইনজীবী জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া কোনো অনুকম্পা চান না। তিনি মামলা দুটি আইনিভাবে মোকাবেলা করতে চান।’
আইনজীবী কায়সার কামাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জানেন, সবাই জানে, মামলা দুটি ভিত্তিহীন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তার পরও তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আদালতের প্রতি বিশ্বাসী।
এ কারণে আমরা আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার জন্য। আমাদের দুটি আবেদন ছিল। একটি ছিল জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে বিচারাধীন আপিল শুনানির আবেদন। চেম্বার আদালত এই আবেদনটি গ্রহণ করে ১০ নভেম্বর আপিল শুনানির তারিখ দিয়েছেন। আর আরেকটি আবেদন ছিল জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার আপিলের পেপারবুক নিজ খরচে প্রস্তুত করার অনুমতির আবেদন। হাইকোর্ট আবেদনটি মঞ্জুর করে পেপারবুক প্রস্তুতের অনুমতি দিয়েছেন।’
পেপারবুক প্রস্তুত করতে কত সময় লাগতে পারে, জানতে চাইলে এই আইনজীবী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি। আশা করছি, সপ্তাহখানেকের মধ্যে পেপারবুক প্রস্তুত করতে পারব।’
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা : অনাথ শিশুদের জন্য অনুদান হিসেবে আসা দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমানসহ আরো চারজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আখতারুজ্জামান এ মামলার রায় দেন। রায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রায়ে খালেদা জিয়াসহ ছয় আসামির সবাইকে মোট দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া, কাজী সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদ হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেন। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর রায় দেন। রায়ে সাজা বাড়িয়ে খালেদা জিয়াকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানি আগামী ১০ নভেম্বর নির্ধারণ করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা : এই ট্রাস্টের নামে আসা প্রায় সোয়া তিন কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ চার আসামির সবাইকে সাত বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর রায় দেন বিচারিক আদালত। পাশাপাশি তাঁদের ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর ট্রাস্টের নামে কেনা কাকরাইলের ৪২ কাঠা জমি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করা হয়।
ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আখতারুজ্জামান এই মামলার রায় ঘোষণা করেছিলেন। ১৪ নভেম্বর রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি হাতে পাওয়ার চার দিন পর ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদার আইনজীবীরা। ৬৩৮ পৃষ্ঠার মূল রায়সহ প্রায় ৭০০ পৃষ্ঠার আপিলের সঙ্গে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনও করা হয়। বিচারিক আদালতের দেওয়া দণ্ড বাতিল ও খালাস চাওয়া হয় আপিলে। পরে ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। আপিলটি শুনানির জন্য পেপারবুক তৈরির প্রক্রিয়ায় ছিল।
রাষ্ট্রপতির দণ্ড মওকুফ : গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার দণ্ড মওকুফ করে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন রাষ্ট্রপতি।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন