যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ‘ভূমিকম্প’ সৃষ্টি করেছে ট্রাম্পের জয়

ট্রাম্পের জয়ের অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে একটি ‘ভূমিকম্প’ সৃষ্টি করা। এমনটাই বলা হয়েছে আলজাজিরার একটি প্রতিবেদনে। নাটকীয় এক প্রত্যাবর্তন হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের। হোয়াইট হাউস ছাড়ার চার বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন তিনি।

 

মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেই অঙ্গরাজ্যগুলোতে হয়েছে, সেসব অঙ্গরাজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা ট্রাম্পের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। ভোটারদের অনেকেই ট্রাম্পকে ভোট দেওয়ার পেছনে অর্থনীতি ও অভিবাসনের মতো বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন।

এদিকে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা বলেছেন, ট্রাম্পের জয় এবং কংগ্রেসে তার দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে একটি ‘ভূমিকম্প’ সৃষ্টি করবে এবং বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তর ও বহির্বিশ্ব—দুই জায়গাতেই ব্যাপক পরিবর্তন আনবে।

বিশারা বলেন, ‘আমরা এমন এক প্রেসিডেন্টের কথা বলছি, যার দল সিনেট নিয়ন্ত্রণ করছে এবং তার নিয়োগ করা বিচারকরা সুপ্রিম কোর্টে আছেন।

এই পরিস্থিতিতে ব্যক্তি ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন কিছু করতে সক্ষম হবেন, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বেশির ভাগ প্রেসিডেন্টের পক্ষেই অসম্ভব ছিল।’ 

 

বিশারার মতে, ট্রাম্প ইউক্রেনকে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করতে ছাড় দেওয়ার জন্য চাপ দিতে পারেন। বৈশ্বিক বাণিজ্যে আরো বাড়তি শুল্ক আরোপের পক্ষে অবস্থান নিতে পারেন। অবশ্য ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারে বলেছিলেন, তিনি ক্ষমতায় থাকলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ঘটতেই দিতেন না।

ক্ষমতায় এসে তিনি এই যুদ্ধ বন্ধ করবেন।

 

তবে মারওয়ান বিশারার কথা থেকে এটি স্পষ্ট যে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে নিকট ইতিহাসে এক নজিরবিহীন সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবেন। মানে যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী প্রশাসনে এই বিবেচনায় তিনি একপ্রকার একচ্ছত্র আধিপত্য পেতে যাচ্ছেন। আর এ বিষয়ে জাতীয় থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক সব বিষয়ে তার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ‘আপার হ্যান্ড’ অর্থাৎ সুবিধাজনক অবস্থানে রাখবে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের বিগত কয়েক দশকের ইতিহাসে ট্রাম্পই এমন প্রেসিডেন্ট, যার হাতের মুঠোয় যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই, বন্দি থাকবে সারা বিশ্বের রাশ।

 

 

ট্রাম্পের নির্বাচিত হওয়া অনেকটা সুকুমার রায়ের ‘পাগলা দাশু’র নাট্যমঞ্চে প্রত্যাবর্তনের গল্পের সঙ্গে মিলে যায়। প্রাক-নির্বাচনী পর্বের সব নাটক সাঙ্গ হওয়ার পর এবার যেন ‘দাশু’র মতোই প্র্যাবর্তন হলো ট্রাম্পের। দাশুর সঙ্গে ট্রাম্পের চারিত্রিক মিলও আছে। তিনি নিজেই নিজেকে ‘পাগলাটে’ বলে থাকেন। দ্বিতীয় মেয়াদে কেমন হবে ট্রাম্পের শাসন, তা নিয়ে আগে থেকেই জল্পনা চলছিল।

কারণ ২০২০ সালে ট্রাম্প যখন ক্ষমতা থেকে বিদায় নেন, তখনকার যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে আজকের যুক্তরাষ্ট্রের বিস্তর ফারাক। এই সময়ের মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ হয়েছে। ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রত্যক্ষ সহায়তা করছেন ইউক্রেনকে। মধ্যপ্রাচ্যেও বিরাজ করছে অস্থিরতা।

এখন দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প কি আগের মতো ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ বা আমেরিকাই প্রথম নীতিতে চলবেন, নাকি ভিন্ন পথে হাঁটবেন তা নিয়ে আরো আগে থেকেই শুরু হয়েছিল জল্পনা-কল্পনা। অবশ্য দ্বিতীয় দফায় বাড়তি সুবিধা পাবেন ট্রাম্প। কারণ কেবল প্রেসিডেন্ট নির্বাচনই নয়, ট্রাম্পের দল এবার বাজিমাত করেছে দেশটির পার্লামেন্ট কংগ্রেসেও। কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট ও নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পথে তার দল।

যুক্তরাষ্ট্রের ২৪৮ বছরের ইতিহাসে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে এক মেয়াদের বিরতিতে দ্বিতীয়বারের মতো দোর্দণ্ড প্রতাপে হোয়াইট হাউসের মসনদে ফিরেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্য দিয়ে ডেমোক্র্যাটদলীয় প্রার্থী কমলা হ্যারিসের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হওয়ার আশায় গুড়েবালি দেখল বিশ্ব আর শীর্ষ ক্ষমতাধর দেশটিতে নতুন ইতিহাস গড়লেন রিপাবলিকান দলের নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প।

শুধু তাই নয়, মার্কিন সিনেটে এরই মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করেছে রিপাবলিকান পার্টি। দলটি সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ৫১টি আসন এরই মধ্যে পেয়ে গেছে। নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পথে আছে দলটি। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ২১৮টি আসনের মধ্যে এরই মধ্যে রিপাবলিকানরা ২০০টি আসন নিশ্চিত করেছে। অনুমান করা হচ্ছে, এখানেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে ট্রাম্পের দল।

 

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন