বাংলাদেশে গত কয়েক সপ্তাহে সংবিধান বাতিল কিংবা রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে রাজনৈতিকভাবে বিরোধিতার মুখে পড়েছে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। একইসঙ্গে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলার দিন আন্দোলনের দুই নেতার ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়েও বিতর্ক উঠেছে। বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলনের নেতাদের নানা বক্তব্য এবং সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্কের প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে যে, আন্দোলনের নেতারা কতটা সমন্বিতভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন?
বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সরকার গঠন থেকে শুরু করে দেশ পরিচালনার বিভিন্ন বিষয়ে সক্রিয় থেকেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। এসময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজের কাছ থেকে সমর্থনও পেয়েছে তারা।
তবে অভ্যুত্থানের তিন মাসের মাথায় এসে দেখা যাচ্ছে ছাত্রদের নানা সিদ্ধান্ত, বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
যেসব ইস্যুতে বিতর্ক, সমালোচনা
ছাত্রদের প্রথম যে বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়, সেটি রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ এবং সংবিধান বাতিল ইস্যুতে। এ দুটিসহ মোট পাঁচ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রপতি ভবন ঘেরাও করলে সেটার সমালোচনা হয়েছে। পরবর্তীকালে বিশেষত বিএনপি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হয়, এমন কোনো বিষয়ে দলটি সমর্থন জানাবে না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা করলেও এসব ইস্যুতে কোনো ঐকমত্য তৈরি হয়নি।
বরং বিএনপি প্রকাশ্যে বিরোধিতা করার পর অন্য কয়েকটি রাজনৈতিক দলকেও কমবেশি কৌশলী অবস্থান নিতে দেখা গেছে। এসব দাবির পেছনে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার মতো ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না, রাজনৈতিক মহলে এমন আলোচনাও উঠেছে।
দ্বিতীয় যে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে সেটি হচ্ছে, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হাইকোর্টে রিটের পদক্ষেপ।
আর তৃতীয় বিষয়টি হচ্ছে, জাতীয় পার্টির অফিসে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সেখানে না থাকলেও সংগঠনের শীর্ষ দুই নেতা জাতীয় পার্টিকে উৎখাতের আহ্বান জানিয়ে ফেসবুকে যে পোস্ট দেন সেটি বিতর্কের ঝড় তোলে। দেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ছাত্রনেতারা কতটা আইনের প্রতি সম্মান দেখাচ্ছেন সেটা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাশেদা রওনক খান মনে করেন, এ ধরনের বক্তব্য-বিবৃতি আসতে থাকলে সেটা জনপ্রিয়তা হারানোর কারণ হতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি বিভিন্ন সমন্বয়কদের মধ্যে রাজনৈতিক পরিচয় ভিন্ন, রাজনৈতিক মতাদর্শও ভিন্ন।
তারা যে জায়গায় কাজ করতে চাইছেন যে আওয়ামী লীগ বা এরকম দলকে নিষিদ্ধ করতে। কিন্তু সেখানে দেখা গেলো যে জাতীয় পার্টির অফিস পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এর দায়ভার কেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা নেবেন? অথচ আমরা দেখলাম, তারা দায় নিচ্ছেন কারণ তারা সায় দিচ্ছেন। তারাই ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে লোক জড়ো করছেন। এখানে একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে অভ্যুত্থান আর দেশ গঠন দুটো ভিন্ন জিনিস। অভ্যুত্থান আইন না মেনেই হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দেশ গঠন বা দেশ পরিচালনা কখনোই আইনের বাইরে হতে পারে না। এবং এ ধরনের কাজ করে তারা কিন্তু জনসমর্থন ধরে রাখতে পারবে না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলছেন, বিএনপি বা অন্য কোনও দল, তারা যদি রাষ্ট্রপতির অপসারণে ভিন্নমত পোষণ করে থাকে, সেক্ষেত্রেও এটি আসলে আমাদের কাছে কোনও ধাক্কা বলে মনে হয় না। আমাদের মনে হয় যে, তাদের মতামত একটা যথাযথ প্রক্রিয়া যেটার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারছি যে, তারা কী মনে করছেন। তারাও বুঝতে পারছেন যে, আমরা কী মনে করছি। এর ফলে আমাদের মধ্যে ডায়ালগ বা সংলাপটা আরো ভালোভাবে হবে।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন