ট্রাম্প-পুতিনের ফোনালাপের খবর অস্বীকার করে যা বলল ক্রেমলিন

নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ফোনালাপের প্রতিবেদন সোমবার অস্বীকার করেছে রাশিয়া। একই সঙ্গে তারা বলেছে, পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষ থেকে আলোচনার কোনো ইঙ্গিত তারা দেখছে না।

এর আগে ওয়াশিংটন পোস্ট রবিবার জানায়, ট্রাম্প বৃহস্পতিবার ফোনে পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তাকে যুদ্ধের তীব্রতা বাড়াতে না করেছেন। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ পরে সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, এই প্রতিবেদনটি ‘ভুল’।

 

অন্যদিকে ট্রাম্পের যোগাযোগ পরিচালক স্টিভেন চিউং লিখিত বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও অন্য বিশ্বনেতাদের মধ্যে ব্যক্তিগত কথোপকথনের বিষয়ে মন্তব্য করি না।’ এ ছাড়া ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, কিয়েভকে পুতিন ও ট্রাম্পের মধ্যে কোনো ফোনালাপের বিষয়ে অবহিত করা হয়নি।


 

হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন প্রায় তিন বছর ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে পরিবর্তন আনতে পারে। পাশাপাশি কিয়েভের প্রতি ওয়াশিংটনের কোটি কোটি ডলারের সহায়তা প্রশ্নের মুখে পড়েছে, যা দেশটির প্রতিরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ।

প্রচারাভিযানের সময় রিপাবলিকান ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই যুদ্ধ শেষ করতে পারেন। পুতিনের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার ইঙ্গিতও দেন তিনি। তবে তিনি ইউক্রেন নিয়ে শান্তি চুক্তি করতে কিভাবে পরিকল্পনা করছেন বা তিনি কী শর্ত প্রস্তাব করছেন, সে বিষয়ে কিছু বলেননি।

 

এদিকে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ট্রাম্প রবিবার শোলজের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন।

দুজন ‘ইউরোপে শান্তি ফেরানোর জন্য একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি। কিন্তু পেসকভ জানিয়েছেন, শোলজের সঙ্গে আলোচনার জন্য পুতিনের ‘কোনো প্রস্তুতি নেই’ এবং ইউক্রেন বিষয়ে ইউরোপের অবস্থান পরিবর্তন হয়েছে কি না, তা বলার সময় এখনো হয়নি।

 


 

রুশ মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা কিছুটা উদ্বেগ ও বিভিন্ন আশঙ্কা লক্ষ্য করছি ইউরোপীয়দের মধ্যে। কারণ ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন।’

তিনি আরো বলেন, পুতিন গত সপ্তাহে ‘পুনরায় বলেছেন, তিনি সব ধরনের আলোচনার জন্য উন্মুক্ত’।

তবে ‘এখনই কোনো প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে না। আমরা কোনো সংকেত পাইনি। যদি তারা বলে, কোনো সংকেত আসবে, তাহলে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।’

 

ক্রেমলিনের মুখপাত্র বলেন, এখন পর্যন্ত, ‘ইউরোপীয় নেতারা...রাশিয়ার কৌশলগত পরাজয় অর্জনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন’ এবং মস্কো ‘বিশেষ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, যতক্ষণ না সব লক্ষ্য অর্জন হয়।’


 

‘আলোচনা শুরু করুন’
ইউক্রেন দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপকে অনুরোধ করছে, যেন তারা রাশিয়ার গভীরে দূরপাল্লার অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। তবে পেসকভ জোর দিয়ে বলেন, ‘কোনো ধরনের অস্ত্রই’ যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে পারবে না, যেখানে রশ বাহিনী পূর্ব দোনেৎস্ক অঞ্চলে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে।

রাশিয়ার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও রাশিয়ার নিরাপত্তা কাউন্সিলের বর্তমান সচিব সের্গেই শোইগু গত সপ্তাহে বলেন, ‘যখন যুদ্ধের পরিস্থিতি কিয়েভের পক্ষে নেই, তখন পশ্চিমের সামনে সিদ্ধান্তের নেওয়ার সময় এসেছে—(কিয়েভকে) অর্থায়ন ও ইউক্রেনীয় জনগণের ধ্বংস অব্যাহত রাখা, অথবা বর্তমান বাস্তবতা মেনে নিয়ে আলোচনা শুরু করা।’


 

স্থানীয় সময় সোমবার ভোরেও ইউক্রেনজুড়ে বিমান হামলার সতর্কতা বেজে ওঠে এবং রুশ হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত হয়। এর আগে উভয় পক্ষ রেকর্ডসংখ্যক পাল্টাপাল্টি ড্রোন হামলা চালায়।

রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে ক্রেমলিন মুখপাত্র রবিবার বলেন, ‘ট্রাম্পের বিজয়ের পর সংকেতগুলো ইতিবাচক।’ কারণ ‘অন্তত তিনি শান্তি নিয়ে কথা বলছেন, সংঘাত নিয়ে নয়।’ ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ফোনালাপে ট্রাম্প পুতিনকে ইউরোপে ওয়াশিংটনের বড় সামরিক উপস্থিতির কথা মনে করিয়ে দেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যমে কথা বলা একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, ট্রাম্প ‘ইউক্রেনের যুদ্ধের দ্রুত সমাধানের জন্য আরো আলোচনার’ ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন এবং ভূখণ্ড নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা তুলেছেন।

রুশ প্রেসিডেন্ট পূর্ব ও দক্ষিণ ইউক্রেনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল থেকে ইউক্রেনের সেনা প্রত্যাহারের শর্ত দিয়েছেন, যা শান্তি আলোচনার পূর্বশর্ত হিসেবে রেখেছেন। ট্রাম্পের নির্বাচনের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি সতর্ক করেন, পুতিনকে ‘কোনো ছাড় দেওয়া উচিত নয়’। ইউক্রেন ও পশ্চিমাদেশগুলো আশঙ্কা করে, পুতিনকে লাভবান করা যেকোনো চুক্তি ক্রেমলিন নেতাকে আরো আক্রমণাত্মক করে তুলবে।

সূত্র : এএফপি

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন