জিবিনিউজ 24 ডেস্ক //
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অন্তরঙ্গ ছবি ভাইরাল হওয়া বরিশালের বাবুগঞ্জের দুই প্রধান শিক্ষককে বরিশাল জেলার বাইরে শাস্তিমূলক বদলির নির্দেশনা নিয়েছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
বরখাস্ত হওয়া দুই শিক্ষক বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোক্তার হোসেন। তিনি উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়নের ইদেলকাঠী গ্রামের বাসিন্দা। একই উপজেলার মুশুরীকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীমা নর্গিস পাংশা গ্রামের বাসিন্দা। তারা বর্তমানে বিবাহিত দম্পতি। দুজনেরই এটি দ্বিতীয় বিবাহ।
এদিকে এ ঘটনায় উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আকবর কবীর সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. রোমাঞ্চ আহমেদকে প্রধান করে দুই সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। অপর তদন্তকারী হলেন সহকারী শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ মনীরুল হক। তাদের সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
তবে একটি সূত্রে জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ মিলছে। এ ছাড়া শিক্ষক মোক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে বদলি বাণিজ্য, বৃত্তি বাণিজ্যসহ ৩০টির বেশি অভিযোগ প্রমাণ পাওয়া গেছে।
শিক্ষক মোক্তার হোসেন বিভিন্ন সময় প্রধান শিক্ষিকাকে ফোন করে ডেকে নিয়ে বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব দিলে তিনি তা করে দিতেন। এভাবেই তাদের মধ্যে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রধান শিক্ষিকা ওই বাসায় গেলে তাকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রধান শিক্ষিকার শর্তসাপেক্ষে মোক্তার হোসেন তার প্রথম স্ত্রীকে গত ২৭ সেপ্টেম্বর নোটারির মাধ্যমে তালাক দেয় এবং ২৯ সেপ্টেম্বর নোটারির মাধ্যমে ১৫ লাখ টাকার কাবিনে তাকে বিয়ে করে।
এদিকে, বিয়ের পরও মোক্তার হোসেন প্রথম স্ত্রীর কাছে থাকায় দ্বিতীয় স্ত্রী স্বামীর অধিকার পেতে উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী ইমদাদুল হক দুলালের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয় শিক্ষক মোক্তার হোসেন। পরে বিয়ের আগে ওই শিক্ষিকাকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে তোলা অন্তরঙ্গ ছবি ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়া হয়। শিক্ষকের মোবাইল থেকে ছবি ছবিগুলো তার ফেসবুকে ওই নারী আপলোড করে দিলেও শিক্ষক তা মুছে ফেলেন। এরমধ্যেই ছবিগুলো মানুষজন সংরক্ষণ করে ছড়িয়ে দেয়। তবে স্থানীয় কয়েকজনের দাবি, ওই প্রধান শিক্ষিকাই ছবিগুলো মেসেঞ্জারে সরবার করেছেন নিজের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোক্তার হোসেন বলেন, ‘শামীমা নার্গিস তার বিবাহিত স্ত্রী। ভুল বোঝাবুঝির কারণে শামীমা তার সম্পর্কে উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে কিছু বলেছেন। তবে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলা হতেই পারে। এটা একটি পক্ষ ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।’
অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ফাঁসের বিষয়ে তিনি বলেন, এ ছবি কীভাবে ফাঁস হলো তিনি জানেন না।
মুশুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শামীমা নার্গিস বলেন, ‘মোক্তার হোসেন আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তিনি প্রথম স্ত্রীকে তালাক ও আমাকে বিয়ের কথা বলে আমার সঙ্গে সম্পর্ক গড়েন। কিন্তু প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিয়েও এখন তার সঙ্গেই বসবাস করছেন।’
এ বিষয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. জাহিদুর রহমান সিকদার বলেন, ‘সম্প্রতি নারী শিক্ষিকার সঙ্গে মোক্তার হোসেনের আপত্তিকর ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ওই ছবিতে নানা মন্তব্য করা হয়। এ নিয়ে এলাকায় সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। এতে শিক্ষক সমাজের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তাই দুপুরে উপজেলা প্রধান শিক্ষক সমিতি, সহকারী শিক্ষক সমিতি ও প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি যৌথ সভা করে প্রধান শিক্ষক মোক্তার হোসেন ও শামীমা নার্গিসকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে।’
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন