হাকিকুল ইসলাম খোকন ,
মৌলভীবাজারের রাজনগরের কৃতি সন্তান ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন, তার পরিবারের সুনাম ক্ষুণ্ন করতে একটি স্বার্থান্বেষী মহল বিভিন্ন মিডিয়ায় মিথ্যা ও অসত্য সংবাদ প্রচার করাচ্ছে। এসব সংবাদ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং মানহানিকর। ‘রাজনগরে অন্যের জমি দখল করে টর্চার সেল/আয়নাঘর’ ইত্যাদি শিরোনামে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত ও প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানাতে গত ৯ নভেম্বর ২০২৪,শনিবার বিকালে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে একটি পার্টি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন এডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তার যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ভাই সাবেক জাতীয় ক্রীড়াবিদ এ রাজনীতিবিদ আব্দুর রহিম বাদশা ও ছোট ভাই আব্দুর রউফ পাশা, বোন ডা. সাহানারা আলী রেনু, জাহানারা আহমদ লক্ষী ও মনোয়ারা বেগম মনি।
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু বাংলাদেশের সাবেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন-এর সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, একটি হত্যা মামলায় অভিযুক্ত কুচকক্রী মহল হত্যা মামলাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টার পাশাপাশি তাদের বিপুল পরিমান সম্পত্তি গ্রাস করার হীন উদ্দেশ্যে তার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার ও চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছেন। তিনি এসবের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ন্যায় বিচার কামনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু বলেন, তাদের সম্পত্তির কেয়ারটেকার আব্দুল মালিক হত্যা মামলার আসামী নূরুল ইসলাম ও তার সঙ্গীরা মামলাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন। পাশাপাশি তাদের সম্পত্তি আত্মসাত করার হীন চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছেন। এডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু লিখিত বলেন, মৌলভীবাজার জেলাধীন রাজনগর উপজেলায় নিজগাঁও (পানিশাইল) গ্রামে আমার পিতা মৃত আলহাজ্ব বশির আলী, মাতা মোসাম্মৎ রাবেয়া খানম ও খালা মোসাম্মৎ রহিমা খানম দুইটি পৃথক দলিলমূলে (যার নাম্বার ৩৪৮৭/১৯৭৪ ও ৩৪৮৮/১৯৭৩) বসত ভিটা ও ফসলী জমিসহ প্রায় সাড়ে তিন একর জায়গা ভোগ দখল করে ক্রমান্বয়ে আরও প্রায় নয় একর জমি ক্রয় করেন। আমার পিতা সিলেট জেলাধীন ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানায় কর্মরত থাকায় উপরে বর্ণিত বাড়ি ও জমি দেখভাল করার জন্য নূরুল ইসলাম কলা মিয়াকে কেয়ারটেকার হিসাবে দায়িত্ব দেন। আমরা ভাই-বোন সবাই অধ্যয়নরত ও প্রবাসে থাকার কারণে আমাদের পিতা কেয়ারটেকারের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। আমার পিতার বিশ্বাস ও সরলতার সুযোগ নিয়ে কেয়ার টেকার নূরুল ইসলাম আমার পিতার অগোচরে নতুন জরিপকালে (১৯৯৫/১৯৯৬) সালে বাড়ীসহ জমির প্রতিটি দাগে দুই আনা অংশ তার নিজের নামে রেকর্ডভূক্ত করেন। আমার পিতা ২০০৬ সালে মার্চ মাসে মৃত্যুবরণ করার পর আমাদের পারিবারিক সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমি দেশে যাই এবং আমাদের সকল সহায় সম্পত্তি দেখাশোনার দায়িত্ব গ্রহণ করি। তখন কেয়ারটেকার নূরল ইসলামের এ হেন জালিয়াতি আমার দৃষ্টিগোচর হয়।
এমতাবস্থায় আমি আমার মা, ভাই-বোনদের সাথে আলোচনাক্রমে আমাদের আত্মীয় আব্দল মালিককে কেয়ারটেকারের দায়িত্ব অর্পন করি। মাসহ আমরা সকল ভাই-বোন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। আমাদের সম্পত্তির জাল-জালিয়াতির এই বিষয়টি সামাজিকভাবে নিস্পত্তির জন্য আমাদের দিক থেকে কয়েকদফা আলোচনা করি। কিন্তু নূরুল ইসলাম কেবলই কালক্ষেপণ করতে থাকেন। সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে আমরা সহকারী জজ আদালত মৌলভীবাজার ও সহকারী জজ আদালত রাজনগর, মৌলভীবাজার এ দু’টি পৃথক মামলা দায়ের করি (রাজনগর স্বত্ব মোকদ্দমা নাম্বার ১৮৯/২০১৪ ও রাজনগর মোকদ্দমা নাম্বার ১৫৮/২০২৩)। উভয় মামলার বিবাদী নূরুল ইসলাম কলা মিয়া এবং বাদী আমাদের মা মোসাম্মৎ রাবেয়া খানমসহ আমরা ভাই-বোনরা।
তখন থেকেই নূরুল ইসলাম আমাদের নতুন কেয়ারটেকার আব্দুল মালিকের প্রতি নানান ধরনের হুমকি-ধামকি, ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে এবং শারীরিকভাবে কয়েকবার মারাত্মক আঘাত করেন। এই পরিস্থিতিতে আব্দল মালিক বাদী হয়ে নূরুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রথমে জিডি এবং পরবর্তীতে রাজনগর থানায় মামলা দায়ের করেন।
এডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু লিখিত বক্তব্যে আরো বলেন, রাজনগর থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তদন্ত সাপেক্ষে নূরুল ইসলাম ও তার ছেলে আমিন ও শামিমকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। প্রায় সাড়ে চার মাস পর জেল হাজত থেকে বের হয়ে তারা আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন্ পরবর্তিতে ২০২১ সালের ১৭ই নভেম্বর নূরুল ইসলাম তার সঙ্গী সাথীদের নিয়ে দুই বছরের শিশু সন্তানের জনক আব্দুল মালিককে নৃশংসভাবে হত্যা করেন। এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। ঘটনার পর আমি নিজে বাদী হয়ে রাজনগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করি (রাজনগর থানার মামলা নং ৯/১৯২, জি আর নং ১৯২/২১)। রাজনগর থানা পুলিশ প্রথমে তিনজনকে গ্রেফতার করে এবং তাদের মোবাইল ফোন ট্যাকিং করে পরবর্তীতে আরও তিনজনকে গ্রেফতার করে। এখানে উল্লেখ্য যে, শেষের তিনজন পেশাদার খুনি এবং তাদেরকে রাজশাহী থেকে গ্রেফতার করা হয় এবং তারা তিনজনই রাজশাহীর বাসিন্দা। তারা সবাই দীর্ঘ প্রায় আড়াই বছর পরে জামিনে বের হয়ে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আব্দুল মালিকের স্ত্রী সাবরিনা আক্তার সাফিয়াসহ সাক্ষীদেরকে হুমকি ধামকি দিতে থাকেন। এই বিষয়ে আব্দুল মালিকের স্ত্রী রাজনগর থানায় ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ইং নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করেন (জিডি নং ২১৩)।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সম্প্রতি আব্দুল মালিকের হত্যাকারীরা এই মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টায় এবং আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি গ্রাস করার হীন উদ্দেশ্যে নানান রকমের বানোয়াট অপপ্রচারের মাধ্যমে আমাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার লক্ষে নানাবিধ অপকৌশল আর চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে।
এডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু বলেন, অ্যামোনিয়া গ্যাসপূর্ণ সিলিন্ডার মজুদ রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকারের বিস্ফোরক অ্যাক্ট ১৮৮৪ ও তদাধীন প্রণীত গ্যাস সিলিন্ডার বিধিমালা ১৯৯১ এর বিধানাবলী এবং শর্তাবলী অনুযায়ী আমাদের নির্মিত সেমিপাকা কয়েকটি মজুদাগার এই ভূমিতে রয়েছে, যা ইদানিং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তথা কথিত আয়নাঘর/টর্চার সেল বলে অপপ্রচার করা হচ্ছে।
তিনি প্রবাস থেকে আব্দুল মালিকের খুনীদের দ্রুত বিচার, হত্যাকারীদের অপতৎপরতা বন্ধ, গ্যাস সিলিন্ডার মজুদারগার, গাছ, বসতগৃহ সহ তাদের মূল্যবান সম্পত্তি সুরক্ষার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন