সিলেটে জমে উঠেছে বইমেলা, লেখক-পাঠকের ভিড়

সিলেট নগরের আম্বরখানা এলাকার ইউনিমার্ট বিল্ডিংয়ের নিচতলায় অবস্থিত প্রথমা বিক্রয়কেন্দ্রে প্রথমা প্রকাশনের উদ্যোগে আয়োজিত ১০ দিনব্যাপী বইমেলার আজ শনিবার ছিল দ্বিতীয় দিন। এর আগে শুক্রবার মেলার উদ্বোধন হয়। মেলায় প্রচুরসংখ্যক লেখক-পাঠক ভিড় জমাচ্ছেন। সবার উপস্থিতিতে বইমেলা জমে উঠেছে।
 

শনিবার বেলা সাড়ে ৪টায় মেলার দ্বিতীয় দিনে ‘সিলেটের সাহিত্যচর্চা’ শীর্ষক আলোচনা সভা হয়। এতে বিশিষ্ট গল্পকার জামান মাহবুব, বিশিষ্ট কবি মোহাম্মদ হোসাইন এবং মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজের শিক্ষক ও কবি মোহাম্মদ বিলাল বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রথমা বিক্রয়কেন্দ্র সিলেটের ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল মামুন। মেলার দ্বিতীয় দিনে বিশিষ্ট অনুবাদক ও রবীন্দ্র-গবেষক মিহিরকান্তি চৌধুরী, কবি-শিক্ষক সঞ্জয় কুমার নাথ ও আয়েশা মুন্নীসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
 

 

 

আলোচনা পর্বে বক্তারা বলেন, সিলেটে সাহিত্যের ইতিহাস সুপ্রাচীন। চর্চাপদের অনেক কবিরা ছিলেন সিলেটি। এখানকার সাহিত্যিকদের লেখার প্রধান বিষয়বস্তু সমাজচিন্তা, অধিকারবোধ, অধ্যাত্মচেতনা। মরমিসাহিত্যে এই অঞ্চলের ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ। সাধকদের হাত ধরে সুফিবাদ ও বৈষ্ণববাদ আর সহজিয়া মতবাদের বিকাশ এখানে ঘটেছে।

মেলা শেষ হবে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা চলবে। মেলায় প্রথমা প্রকাশন ছাড়াও দেশি-বিদেশি বই বিশেষ ছাড়ে বিক্রয় হচ্ছে। বইমেলা আয়োজনে সহযোগিতা করছে সিলেট বন্ধুসভা।
 

এর আগে গতকাল শুক্রবার মেলায় বই নিয়ে স্মৃতিচারণা, আলোচনা আর প্রাণবন্ত আড্ডায় মেতে ওঠেন লেখক-পাঠকেরা। বেলা ৪টায় বইমেলার উদ্বোধনী পর্ব সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো সিলেটের নিজস্ব প্রতিবেদক সুমনকুমার দাশ। শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথমার ব্যবস্থাপক মো. জাকির হোসেন। বক্তারা বলেন, সুনির্বাচিত বই প্রকাশ করে প্রথমা এরই মধ্যে দেশ সেরা একটি প্রকাশনাসংস্থায় পরিণত হয়েছে।

 

উদ্বোধনী পর্বে বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমি পদকপ্রাপ্ত ভ্রমণলেখক শাকুর মজিদ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) অধ্যাপক নাজিয়া চৌধুরী ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ ছলিম মো. আবদুল কাদির, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ (কেমুসাস) সিলেটের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও গল্পকার সেলিম আউয়াল, গল্পকার জামান মাহবুব, স্কলার্সহোম মেজরটিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফয়জুল হক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শামসুল বাসিত শেরো ও কবি সালেহ আহমদ খসরু।


অন্যান্যদের মধ্যে নর্থইস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক লিয়াকত শাহ ফরিদী, ছড়াকার বিধূভূষণ ভট্টাচার্য, সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক পরিচালক মুকির হোসেন চৌধুরী, কবি মোহাম্মদ হোসাইন ও পুলিন রায়, নাট্যকার মু. আনোয়ার হোসেন রনি, মোস্তাক আহমেদ ও রীমা দাস, সিলেট এমসি কলেজের শিক্ষক মোহাম্মদ বিলাল, সাগর বিশ্বাস ও রিংকু তালুকদার বক্তব্য দেন।

এ ছাড়া উইমেন্স মডেল কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল কাদের তাপাদার, শাবিপ্রবির কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট ফজিলাতুন নেসা, লেখক মুহম্মদ ইমদাদ, মোশতাক চৌধুরী, সঞ্জয় কুমার নাথ, খালেদ উদ-দীন, শামীমা আক্তার ঝিনু, মাসুদা সিদ্দিকা রুহী ও ইশরাক জাহান জেলী, সংস্কৃতি সংগঠক সুমন্ত গুপ্ত, সাংবাদিক মুনশি ইকবাল ও সুবর্ণা হামিদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
 

 

উদ্বোধনী পর্বে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় দেড় শ প্রতিনিধি ও লেখক-পাঠক উপস্থিত ছিলেন। আয়োজকেরা জানিয়েছেন, মেলা চলাকালে পাঠকেরা প্রথমার বই ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ, অন্যান্য প্রকাশনীর বই ২৫ শতাংশ ছাড়ে এবং ভারতীয় বই ১ রুপি=১.৫ টাকা থেকে ১.৮ টাকায় কিনতে পারবেন। মেলা চলাকালে ছুটির দিনে বেলা ৪টায় এবং অন্যান্য দিন সন্ধ্যা ৬টায় সাহিত্যবিষয়ক আলোচনা ও সেমিনার রয়েছে। এসব অনুষ্ঠান সবার জন্য উন্মুক্ত।

বক্তারা বলেন, প্রথমা প্রকাশিত বইয়ের আবেদন ক্রমশ বাড়ছেই। এ ছাড়া ভালো বই সংগ্রহ করার জন্য পাঠকেরা প্রথমা বিক্রয়কেন্দ্রে নিয়মিত ছুটে আসেন। প্রথমা বিক্রয়কেন্দ্র চালুর শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটি সিলেটবাসীর পাঠরুচি মেটাতে কাজ করে আসছে। ভবিষ্যতেও পাঠক-লেখক-শুভানুধ্যায়ীদের সহযোগিতায় তা অব্যাহত থাকবে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে পাঠাভ্যাস বাড়াতে পারিবারিক পাঠচর্চা বাড়াতে হবে বলে বক্তারা বক্তব্যে বলেছেন।
 

বইমেলার প্রথম দিনে ক্রীড়া সংগঠক মঞ্জুর আহমদ চৌধুরী, নাট্যসংগঠক নীলাঞ্জন দাশ টুকু, ছড়াকার শাহাদত বখ্ত শাহেদ, কবি ধ্রæব গৌতম, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক প্রণবকান্তি দেব, লোকসংস্কৃতি গবেষক পার্থ তালুকদার, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক হীরা লাল গোপ, সাংবাদিক ইয়াহ্ইয়া মারুফ, বাপ্পা মৈত্র, সাকিব আহমেদ মিঠু, এম রহমান ফারুক ও এমরান ফয়ছল, শিল্পী ইকবাল সাঁই ও আশরাফুল ইসলাম অনি, প্রকাশক মো. জসিম উদ্দিন, লেখক নিলুপা ইসলাম নিলু, আলেয়া রহমান, মো. নাসির উদ্দিন, রিপন মিয়া ও দীপ্ত বৈষ্ণব, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মহিতোষ মজুমদার বসু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
 

 

মেলা ঘুরে দেখা গেছে, নতুন ও পুরোনো মিলিয়ে বই থরে থরে সাজানো। ধর্ম, ইতিহাস, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, দর্শন, সাহিত্য, স্মৃতি, সাক্ষাৎকার, অনুবাদ, শিশু-কিশোর সাহিত্যসহ বিচিত্র ধারার নানা বই ঠাঁই পেয়েছে। পাঠকদের কেউ পাতা উল্টে পড়ছিলেন। কেউ বই কিনে ব্যাগে রাখছিলেন।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন