আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অধ্যাদেশ অনুমোদনের জন্য বুধবার (২০ নভেম্বর) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উঠছে বলে জানিয়েছেন আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের ১০০ দিনের কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
অভিযুক্ত রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ট্রাইব্যুনাল সুপারিশ দিতে পারবে- খসড়া অধ্যাদেশে এমন বিধান রয়েছে বলেও জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা কিছু আইনগত সংস্কারের কাজ করেছি। এর মধ্যে যেটা সবচেয়ে প্রধান সেটা হচ্ছে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন। সেখানে কিছু মারাত্মক বিচ্যুতির কথা বিভিন্ন দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন বলেছিল। বিভিন্ন সময় আমাদের এখানকার সিভিল সোসাইটিও বলেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যখন এটা সংস্কারের উদ্যোগ নিলাম তখন আমরা চেয়েছি বিচারটা যাতে বৈশ্বিক এবং দেশীয় পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য হয়। একই সঙ্গে এটার মাধ্যমে যাতে সুবিচার নিশ্চিত করা হয়। এজন্য আমরা ব্যাপক কনসালটেশন করেছি। আপনারা দেখেছেন আমরা ওপেন গোলটেবিল বৈঠক করেছি। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এক্সপার্ট, তিনজন বিদেশি এক্সপার্টসহ ২০-২৫ জন এক্সপার্টের মতামত নিয়েছি। চেষ্টা করেছি একটা অসাধারণ সংশোধনী করার জন্য। যেটা এই বিচারের গুরুত্ব যৌক্তিকতা, গ্রহণযোগ্যতা অনেক বাড়িয়ে দিবে।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আগামীকাল (বুধবার) উপদেষ্টা পরিষদের মিটিংয়ে সেই সংশোধনটা তোলা হবে। উপদেষ্টা পরিষদ গ্রহণ করলে সেটা আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যেই আইনে পরিণত হবে।’
অধ্যাদেশের খসড়ায় রাজনৈতিক দলগুলোকে বিচারের ধারা যুক্ত আছে কি না- জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আদালতকে সেভাবে ক্ষমতা দেওয়া হয়নি অধ্যাদেশের খসড়ায়। আদালত যদি মনে করে তাহলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তারা সুপারিশ করতে পারবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। যেসব কর্তৃপক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আছে, নির্বাচন কমিশন আছে। আদালত যদি মনে করে তারা সেটা করতে পারবে। তবে শাস্তি দিবেই, এমন নয়। এখন উপদেষ্টা পরিষদের ওপর নির্ভর করছে, তারা এটাকে কীভাবে গ্রহণ করে। এটা রাখবেন কি না কিংবা রাখলেও কি ফর্মে রাখবেন।
আসছে সাইবার সুরক্ষা আইন
একশ দিনের কার্যক্রমের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘গত ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন দমনে দায়ের করা সকল মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, এটি বাতিল হওয়ার সাথে সাথে এই আইনের অধীনে কথা বলার অপরাধে যেসব মামলা হয়েছিল, এ মামলাগুলো হয়রানিমূলক ছিল। মামলাগুলো একসঙ্গে প্রত্যাহার হয়ে যাবে। একটা একটা করে মামলা প্রত্যাহার করতে গেলে কয়েক বছর লেগে যাবে।
‘এই আইনটা বাতিলের সঙ্গে সঙ্গে সাইবার সুরক্ষা আইন নামে একটি আইন করা হবে। সেখানে কম্পিউটার এবং হ্যাকিং সম্পর্কিত অপরাধগুলোর বর্ণনা থাকবে। কম্পিউটার এবং হ্যাকিং সম্পর্কিত অপরাধগুলো বিবেচনায় না নিলে তথ্য ও প্রযুক্তি নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হবে। এর সঙ্গে মানুষের কথা বলার অধিকারের কোনো সম্পর্ক থাকবে না’ বলেন আসিফ নজরুল।
৪৩০০ আইন কর্মকর্তা নিয়োগ
৬১ জেলায় এরই মধ্যে চার হাজার ৩০০ জন আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি মন্ত্রণালয় থেকে এত নিয়োগ হয়েছে, আমার ধারণা এর কোনো নজির নেই।
উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে আসছে আইন
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা একটা খুব বড় পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছি। হাইকোর্ট বিভাগ এবং আপিল বিভাগের বিচারক নিয়োগে বিভিন্ন সরকারের আমলে নানা অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। এটাকে অ্যাড্রেস করার জন্য আমরা একটি আইন প্রণয়নের চেষ্টা করছি। এ ব্যাপারে পরামর্শ নেওয়ার জন্য আমরা বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের কাছে গিয়েছিলাম, উনারা আমাদের সাহায্য করছেন। প্রধান বিচারপতি আমাদের জানিয়েছেন ওনাদেরও এমন একটি উদ্যোগ রয়েছে এ ধরনের আইন করার জন্য। যাতে আমরা উচ্চ আদালতে নিরপেক্ষ যোগ্য, দক্ষ, সৎ বিচারক পাই।’
তিনি বলেন, ‘এই আইনটি নিয়ে আমাদের অনেক উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আইনটি আমরা করে ফেলতে পারবো। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্টে যে নতুন বিচারক নিয়োগ হবে, উনারা এই নতুন আইনের মাধ্যমেই হবেন। কারও পছন্দ কিংবা সুপারিশের ভিত্তিতে নিয়োগ পাবেন না।’
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন