নেতানিয়াহু, গ্যালান্ট ও দেইফের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এবং হামাসের সামরিক প্রধান মোহাম্মদ দেইফের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। 

আইসিসির এই পদক্ষেপে নেতানিয়াহুর গতি-বিধি তত্ত্বগতভাবে সীমাবদ্ধ হবে। কারণ আদালতের ১২৪ সদস্য রাষ্ট্রের যেকোনো একটি দেশের ভূখণ্ডে তার উপস্থিতির ক্ষেত্রে তাকে গ্রেপ্তার করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। 

হেগভিত্তিক আইসিসি এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ২০ মে প্রসিকিউশন গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন জমা দেওয়ার দিন পর্যন্ত সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের জন্য বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

 

এ ছাড়া দেইফের বিরুদ্ধেও একটি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়। তবে ইসরায়েল চলতি বছরের আগস্টের শুরুতে জানায়, তারা জুলাই মাসে দক্ষিণ গাজায় একটি বিমান হামলায় দেইফকে হত্যা করেছে। হামাস অবশ্য তাদের এই দাবি অস্বীকার করেছে। 

তদন্তের স্বার্থ রক্ষা ও সাক্ষীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানাগুলো আগে ‘গোপন’ রাখা হয়েছিল উল্লেখ করে আদালত জানিয়েছেন, ‘তবে আদালত নিচের তথ্যগুলো প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

কারণ পরোয়ানায় উল্লেখিত অপরাধের মতো কর্মকাণ্ড এখনো চলমান বলে মনে হচ্ছে। এ ছাড়া আদালত মনে করেন, ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের জন্য পরোয়ানার অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা গুরুত্বপূর্ণ।’

 

এদিকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের এই ইহুদিবিরোধী সিদ্ধান্ত আধুনিক ড্রেফাস ট্রায়ালের সমতুল্য এবং এর পরিণতিও একই রকম হবে।’ তিনি মূলত ঊনবিংশ শতাব্দীর আলফ্রেড ড্রেফাস মামলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন, যেখানে ফ্রান্সে সেনাবাহিনীর এক ইহুদি ক্যাপ্টেনকে বিশ্বাসঘাতকতার মিথ্যা অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।

 

অন্যদিকে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাস নেতানিয়াহু ও তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে স্বাগত জানিয়েছে এবং এটিকে ‘ন্যায়বিচারের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ বলে আখ্যা দিয়েছে। হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য বাসেম নাইম এক বিবৃতিতে বলেন, ‘(এটি) ন্যায়বিচারের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং এটি সাধারণভাবে ভুক্তভোগীদের জন্য প্রতিকার আনতে পারে। তবে এটি প্রতীকী ও সীমিতই থেকে যাবে, যদি না বিশ্বের সব দেশের পক্ষ থেকে এটি পূর্ণ সমর্থন পায়।’

আইসিসির প্রধান প্রসিকিউটর করিম খান মে মাসে নেতানিয়াহু ও গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গাজায় কথিত যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির অনুরোধ করেছিলেন। নেতানিয়াহু ৫ নভেম্বর গ্যালান্টকে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করেন।

পাশাপাশি প্রসিকিউটর হামাসের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধেও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন করেন, যাদের মধ্যে মোহাম্মদ দেইফও আছেন।

 

আইসিসি এর আগে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়ার বিরুদ্ধে করা আবেদন ২ আগস্ট প্রত্যাহার করা হয়েছে। কারণ ৩১ জুলাই তেহরানে হানিয়ার মৃত্যুর পর পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়েছে। 

হামাস গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালানোর পর ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ শুরু করে। ইসরায়েলি সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, হামাস যোদ্ধাদের হামলায় এক হাজার ২০৬ জন নিহত হয়, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক। অন্যদিকে গাজা ভূখণ্ড শাসনকারী হামাস সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের মধ্যে ১৩ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে অন্তত ৪৪ হাজার ৫৬ জন নিহত হয়েছে। পাশাপাশি গাজা ভূখণ্ডে আহত হয়েছে এক লাখ চার হাজার ২৬৮ জন।

সূত্র : এএফপি

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন