নবীগঞ্জ প্রতিনিধি:- নবীগঞ্জ উপজেলার রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকদের বিভক্ত করে দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ ধরে চাঁদা আদায়, জায়গা জমি জবর- দখল করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে ওঠে সন্ত্রাসী সাইফুল। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে স্বৈরাচার হাসিনার সরকারের পতনের পর গত বুধবার সন্ধায় নবীগঞ্জ থানা পুলিশ নবীগঞ্জ শহর থেকে সাইফুল ও তার সহযোগী সন্তোষ দাশকে গ্রেফতার করে।
এ ব্যাপারে পুলিশ সূত্রে জানাযায়, ছাত্রলীগ নেতা নাজিম চৌধুরীর পিতা সমিজুর রহমান চৌধুরী ওরফে বাচ্ছু মিয়ার দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার করে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ। এছাড়াও গত (১৪ সেপ্টেম্বর) নবীগঞ্জ থানায় জামায়াত নেতা শাহ আলাউদ্দিন একটি জি,আর ১৪৯ নং মামলা দায়ের করেন। ঐ মামলার এজাহারভুক্ত আসামী সাইফুল জাহান ও সন্তোষ দাশ’কে গতকাল বুধবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নবীগঞ্জ শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পৃথক স্থান থেকে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি কামাল হোসেন এর নেতৃত্বে থানার এসআই মো: সুমন মিয়া, এসআই পিষুষ দেবনাথ, এএসআই জামাল হোসেন সরকার সহ একদল পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে নবীগঞ্জ শহরের মধ্যে বাজার থেকে ঐ মামলার ২জন পলাতক আসামিকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো, নবীগঞ্জ উপজেলা সদর ইউনিয়নের চরগাও গ্রামের মৃত আব্দুল মতিন চৌধুরীর পুত্র উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী (৪৭), শিবপাশা গ্রামের মনিন্ড কুমার দাশের পুত্র নবীগঞ্জ আওয়ামীলীগের সাবেক সহ সভাপতি ও পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলার সন্তোষ দাশ (৫৯)। তাদের গ্রেফতারের খবরে দেশ-বিদেশে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফিরে এসেছে।
সূত্রে আরো জানাযায়, সাইফুল জাহান স্বৈরাচারী আওয়ালীগ সরকারের আমলে নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে উপজেলার সর্বত্র ত্রাশের রাজত্ব কায়েম করে রাতারাতি কোটি কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জন করেন। তার এহেন অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে মিথ্যা মামলা-মোকদ্দমা সহ মানষিক ও শারিরীক ভাবে নির্যাতন করতেও পিছপা হতো না। এমনকি নবীগঞ্জের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়নে তার সন্ত্রাসী গ্রুপের অপকর্মের শিকার হয়ে রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিক সমাজ সব সময় ভয়ে আতংকগস্থ থাকতো। প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে তার আজ্ঞাবহ সন্ত্রাসীদের বসিয়ে রেখে নিয়মিত চাঁদা আদায়, সিএনজি চালকদের সংগঠনের নামে তার লোকজন ম্যানাজারির দায়িত্বে বসিয়ে দৈনিক চাঁদা আদায়ের অহরহ অভিযোগও তার বিরুদ্ধে রয়েছে।
এদিকে, নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবকে বিভিন্ন কৌশলে তার স্বার্থসিদ্ধির একটি প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করে রেখেছে। তার নির্দেশে গত কয়েক বছরে নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবে প্রহসনের নির্বাচন দেখিয়ে আওয়ামীলীগ নেতা সাইফুল জাহান চৌধুরী তার মনোনিত সাংবাদিক এমনকি বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত নামধারী গুটি কয়েকজন সাংবাদিক রেখে প্রেসক্লাবের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে নবীগঞ্জ প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন সহ জনসাধারনের নিকট থেকে বিভিন্ন অজুহাতে দীর্ঘদিন যাবৎ চাঁদা আদায় করে নিজেদের লোকজনের মধ্যে ভাগ-ভাটোয়ারা করে আসছে। বিএনপি নামধারী সাংবাদিকদের পদ-পদবীর লোভ দেখিয়ে তার নিজের স্বার্থে বিভিন্ন কৌশলে ব্যবহার করে তাদেরকে তার কবলে নিয়ে আসছে। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ফলে সারাদেশে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের কবল থেকে রক্ষা পেলেও নবীগঞ্জ প্রেসক্লাব সহ থানা ও উপজেলা প্রশাসনে তার লোকজন এখনও প্রভাব খাটিয়ে বহাল তবিয়তে রয়েছে। আগামী বছরগুলিতেও বিভিন্ন দলের নামধারী সাইফুল জাহানের আজ্ঞাবহ সাংবাদিকদের প্রেসক্লাব তার নেতৃত্বে আনার জন্য কৌশলে কাজ করে আসছিল। যাতে করে আগামীতেও তার মনোনীত লোকজন নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে/অফিসে কিংবা থানায় সাইফুলের পক্ষে যাহাতে কাজ করতে পারে। গতকাল বৃহস্পতিবার নবীগঞ্জ থানা পুলিশ আওয়ামীলীগ নেতা সন্ত্রাসী সাইফুল জাহান ও তার সহযোগী সন্তোষ দাশকে হবিগঞ্জ কোর্টে প্রেরণ করলে বিজ্ঞ বিচারক শুনানী শেষে তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
আওয়ামীলীগ নেতা সন্ত্রাসী সাইফুল জাহান গ্রেফতারের খবরে নবীগঞ্জের সুশীল সমাজ, নির্যাতিত ব্যবসায়ী সহ সাংবাদিক সমাজের মধ্যে আনন্দের সঞ্চার হয়েছে। তার নির্যাতন থেকে বাদ জায় নি দৈনিক বিবিয়ানার সম্পাদক, মানবজমিনের সহ বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ায় সাংবাদিক সুশিল সমাজ সহ ব্যবসায়ীবৃন্দরাও।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন