কপ-২৯ সমঝোতা থেকে নতুন জলবায়ু অর্থায়নের ওপর সুস্পষ্ট কর্ম-কাঠামোর দাবি করেছেন চলমান বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৯) বৈশ্বিক দক্ষিণের দেশগুলোর নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা আলোচনাকে ব্যর্থতায় পর্যাবসিত ও সমাহিত করার জন্য জি-২০ নেতাদের অভিযুক্ত করেছেন, কারণ এবারের কপ-২৯ সম্মেলনে তাদের বার্তা ছিলো খুবই সংক্ষিপ্ত এবং বিস্তারিত বিবরণীর যথেষ্ট ঘাটতি ছিলো।
আজ শুক্রবার আজারবাইজানের বাকুতে চলমান কপ-২৯ ভেন্যুতে ‘এলডিসি এবং এমভিসিভুক্ত দেশগুলির প্রত্যাশা এবং কপ-২৯’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ থেকে ইক্যুইটিবিডি-এর আমিনুল হক। সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক দক্ষিণ এশিয়া (কানসা) থেকে শৈলেন্দ্র যশবন্ত খারাত, পাকিস্তান থেকে এসডিপিআই-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আবিদ সুলেরি, নেপাল থেকে অর্জুন কারকি, বাংলাদেশ থেকে শরীফ জামিল প্রমূখ।
জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে সরে যাওয়ার বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিতে ব্যর্থ হওয়ায় উন্নত দেশগুলোর নেতাদের সমালোচনা করেন আমিনুল হক। তিনি বলেন, তারা এলডিসি, এমভিসি এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অর্থপূর্ণ আর্থিক সহায়তা না দিয়ে প্রতারণা করেছে, বিদ্যমান আর্থিক প্রতিশ্রুতির বেশিরভাগই ঋণ-ভিত্তিক এবং বেসরকারি খাতকে তাদের মুনাফা অর্জনের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে বলে আমরা আশংকা করছি। তিনি বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রীর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে ২০২৫ সালের আগে নতুন এনডিসি তৈরির প্রতিশ্রুতি দাবি করেন এবং সংশোধিত ঘোষণার মাধ্যমে জলবায়ু সংকটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ন্যূনতম আর্থিক প্রয়োজন হিসাবে ১.৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দের দাবি করেন।
শৈলেন্দ্র যশবন্ত খারাত তার বক্তব্যে এই ব্যর্থতার জন্য জি-২০ নেতাদের অভিযুক্ত করে বলেন, উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন ছাড়াই তাদের অলঙ্কারপূর্ণ বক্তব্য কপ-২৯ আলোচনার জন্য মোটেই সহায়ক ছিলো না, যেখানে আমরা অব্যাহতভাবে জলবায়ু অর্থায়নের অচলাবস্থাই দেখতে পাচ্ছি।
তিনি বলেন, বাকুতে বৈশ্বিক উত্তরের জন্য আর কোনো অজুহাত নেই। যেহেতু আমরা কপ-২৯-এর আলোচনার একদমই দ্বারপ্রান্তে প্রান্তে চলে এসেছি, তাই সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে, উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই উচ্চাকাঙ্খী পদক্ষেপ নিতে হবে এবং এই দশকের অবশিষ্ট সময়ের জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু সংক্রান্ত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের সক্ষমতা অর্জনে প্রয়োজনীয় জলবায়ু অর্থ প্রদান করতে হবে।
শরীফ জামিল বলেন, আমরা দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তনের সম্মুখীন হচ্ছি, যা উপকূলীয় মানুষকে বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য করছে। অথচ কপ-২৯ এই মানুষগুলোর জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো প্রতিশ্রুতি ছাড়াই শেষ হচ্ছে।
অভিযোজনের জন্য জলবায়ু অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় সমুদ্রের একটি ফোটা মাত্র। আমরা পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দের দাবি করছি তবে সেটা হতে হবে ঋণবহির্ভূত এবং ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রক্রিয়ায়।
সম্মেলনের অর্জন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্জুন কারকি বলেন, যে গ্লোবাল গোল অন অ্যাডাপটেশন (জিজিএ) নিয়ে আলোচনার গতি স্থবির হয়ে পড়েছে। তহবিল বরাদ্দে উন্নত দেশগুলোর অনীহার পাশাপাশি অগ্রগতি পরিমাপের সূচকগুলোতে স্বচ্ছতার অভাবের কারণে। অভিযোজন আমাদের মতো উচ্চ জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য লাইফলাইন, কিভাবে অভিযোজন তহবিল ও চাহিদার মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে আনা যায় তা নিয়ে আমরা যথেষ্ট উদ্বিগ্ন।
তিনি উন্নত দেশগুলোকে ২০২৫ সালের মধ্যে অভিযোজন তহবিলে বরাদ্দ দ্বিগুণ নয় তিনগুণ বৃদ্ধি করার আহ্বান জানান।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন