বৈরুতে ইসরায়েলের ব্যাপক হামলায় ভবন ধ্বংস, নিহত অন্তত ১১

লেবাননের রাজধানী বৈরুতের কেন্দ্রস্থলে একটি আবাসিক ভবনে শনিবার ইসরায়েল ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে। এতে ভবনটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং কমপক্ষে ১১ জন নিহত ও ৬০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে। লেবাননিজ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতাহতের সংখ্যা নিশ্চিত করেছে।

বৈরুতের ঘনবসতিপূর্ণ বাস্তা জেলায় অবস্থিত আটতলা ভবনটি কোনো পূর্ব-সতর্কতা ছাড়াই পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ধ্বংস করা হয় বলে লেবাননের ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি (এনএনএ) জানিয়েছে।

স্থানীয় সময় শনিবার ভোর ৪টা নাগাদ সংঘটিত এই হামলায় বিস্ফোরণের শব্দে পুরো শহর কেঁপে ওঠে। তবে এ হামলার বিষয়ে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।

 

শনিবারের হামলার বিশালতা ও কোনো সতর্কতা ছাড়াই এটি ঘটার বিষয়টি ইঙ্গিত করে, হয়তো কোনো শীর্ষস্থানীয় হিজবুল্লাহ নেতা এর লক্ষ্য হতে পারে। যদিও সশস্ত্র গোষ্ঠী বা ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো নিশ্চিতকরণ পাওয়া যায়নি।

 

জরুরি উদ্ধারকর্মীরা বাস্তা এলাকার ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছে, যেখানে বিশাল গর্ত থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ চলাকালে নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মৃতদের শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে।

হামলার সময় স্থানীয় বাসিন্দা নেমির জরারিয়া ও তার পরিবার ঘুমিয়ে ছিলেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা গভীর ঘুমে ছিলাম। তারপর হামলা হলো। তারপর আবার আরেকটা হামলা। আমরা কিছুই বুঝতে পারলাম না। ধুলো ও ধ্বংসস্তূপের মাঝে মানুষ ছুটোছুটি করছে, আর চিৎকার করছে।

আমার স্ত্রী হাসপাতালে, আমার মেয়ে হাসপাতালে, আমার ফুফুও হাসপাতালে।’

 

এই হামলা ছিল বৈরুতের কেন্দ্রস্থলে এক সপ্তাহের মধ্যে ইসরায়েলের চতুর্থ হামলা। এর আগে সোমবার ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী জানিয়েছিল, তাদের মুখপাত্র মোহাম্মদ আফিফ একটি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন।


 

শনিবার ভোরে হওয়া হামলার পর শহরের আরো কিছু এলাকায় হামলা চালানো হয়। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তারা ওই সব এলাকাকে ‘হিজবুল্লাহর স্থাপনা ও স্বার্থের কাছাকাছি’ অবস্থিত বলে দাবি করেছে। এর এক ঘণ্টা পর যুদ্ধবিমান একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে, যার মধ্যে হিজবুল্লাহর কয়েকটি কমান্ড সেন্টার, অস্ত্রের গুদাম ও ‘অতিরিক্ত সন্ত্রাসী অবকাঠামো’ ছিল বলে আইডিএফ জানিয়েছে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বৈরুতে ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতাদের নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে গোষ্ঠীটির নেতা হাসান নাসরাল্লাহও রয়েছেন। আইডিএফ সেপ্টেম্বরে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযান শুরু করে, বিমান হামলার পাশাপাশি দক্ষিণ লেবাননে সেনাও পাঠায়।


 

ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের চালানো হামলার প্রতি সংহতি প্রকাশ করে। পাশাপাশি তারা ইসরায়েলের দিকে বারবার রকেট নিক্ষেপ করে। এর পর থেকে সংঘাত বাড়তে থাকে। হিজবুল্লাহর হামলার কারণে উত্তর ইসরায়েলের প্রায় ৬০ হাজার বাসিন্দাকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয় এবং তাদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ইসরায়েল যুদ্ধ পরিচালনার কথা বলেছে। অন্যদিকে লেবাননে সংঘাতে এখন পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং ১০ লাখের বেশি মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে বলে লেবাননের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

এই সপ্তাহের শুরুতে একজন মার্কিন মধ্যস্থতাকারী যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইসরায়েল ও লেবানন—উভয় দেশে সফর করেন। আমোস হোচস্টেইন কিছু অগ্রগতির ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে এর বিস্তারিত সম্পর্কে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি।

সূত্র : বিবিসি

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন