পৃথিবীর সব অপরাধের, ভুলভ্রান্তির সালিশি বোঝেন অথচ নিজের ভুল দেখেন না- এমন সামাজিক জীব হয়ে লাভ কি?
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।|
কোন যুগলের ভালোবাসা দেখে হিংসা হয়? কোন দম্পতির হাসি-খুশি দেখে আফসোস করেন? আপনারাও অমন হতে পারতেন। পারতেন না? হাসি-আনন্দে, প্রেম-ভালোবাসায় আপনারাও জড়াজড়ি করে দাম্পত্য কাটিয়ে দিতে পারতেন। কেন পারেননি? এর উত্তর আপনার কাছে চাইতে গেলে সব দোষ তার! তার কাছে জানতে গেলে সব ভুল আপনার! দোষ আসলে আপনাদের। যেটুকু ত্যাগ আপনার করার কথা ছিল তা আপনিও করেননি। সে যেহেতু উপস্থিত নাই সেহেতু তাকে আলোচনার বাইরে রাখি! কী বলেন?
আপনার সব ভালো কিন্তু খোঁচা দিয়ে, ছোট করে কথা বলেন। এই দোষ না ছাড়তে পারলে সুখ তো আসমান থেকে হেঁটে আসবে না। আপনি দুনিয়ার তাবৎ বিষয় বোঝেন কিন্তু আপনি যে আরেকটা জলজ্যান্ত মানুষের মন খারাপ হওয়া, মন্দ লাগার কারণ- সেটা বুঝতে চান না! কেন চান না? বোঝেন না নাকি ইগো? শুধু আপনার ইচ্ছা অন্যের ওপর চড়িয়ে দেওয়ার মানসিকতাতেই আপনি অসুখী। আপনি অসুখী মানে আপনার সাথে যে আরেকটা জীবন জড়িয়ে সেটাও অসুখী। আপনাদের দু'জনের সাথে যারা জড়িয়ে তারাও অগোছালো। এভাবে চললে সামনে সুসময়ের দেখা পাবেন? কেউ কি বলেছে, আপনাকে দু'বার জীবন দেবেন? আরেকবার সুযোগ দেবেন?
পৃথিবীর সব অপরাধের, ভুলভ্রান্তির সালিশি বোঝেন অথচ নিজের ভুল দেখেন না- এমন সামাজিক জীব হয়ে লাভ কি? জন্তু হলে তাও কথা ছিল না! আপনার ভাগের ভুলটুকু শুধরে নিন। তবেই আপনার সাথে সম্পর্কিত দুনিয়া শুধরে যেতে বাধ্য। আপনার যেটুকু অপরাধে সেটুকু অপরাধে ক্ষমা চান তবেই আপনার সাথে জড়িত সব অধিকার ফেরত আসবে। কেউ বাঁকা বলে আপনিও যদি উল্টো বেঁকে যান তবে দেহ-মনের আর দেখা হবে না। সংসারে ধৈর্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আপনাতে কথা ছোঁয়ানো না গেলে অন্যের আপনাকে স্পর্শ করবে না। কারো মনকে সস্তা ভাবার সুযোগ নাই। দেহ তো টাকাতেও পাওয়া যায়! মন অবিক্রীত!
যেকোনো সম্পর্কে দু'জন দু'জনাকে ধারণ করা জরুরি। পরস্পর বিশ্বাস, সম্মান না থাকলে সম্পর্ক টেকে না। নিয়তিও সুখের ছবি আঁকে না। দূর থেকে ছায়ার মতো থাকা প্রায় অর্থহীন। সুধীজন দীর্ঘদিন দূরে থাকতে বারণ করেন! থাকলে সবটুকু দিয়ে/নিয়ে থাকতে হবে। আছে কি নেই সেটা যদি মনের মাঝে জাল ফেলে তালাশ করতে হয় তবে বাহিরের দুনিয়া দেখে আফসোস করতে হবে। ঘরের মধ্যে প্রশান্তি ফিরবে না। আর আপনাদের দাম্পত্য দেখে মানুষ সাবধানে থাকার শিক্ষা নেবে!- সম্পর্ক যাতে এমন নাজুকতার দিকে না যায়! গেলে হারিয়ে যাবেন।
জুড়ে থাকুন, জড়িয়ে রাখুন। আপনাদের দহরম-মহরম সম্পর্ক দেখে লোকে আফসোস করুক। সবাই আপনাদের মত যুগল হতে পরিশ্রম করুক। সুযোগ আপনাদেরও আছে। অবিরাতি দুয়ারে কবাট ফেলবেন না। সময় এবং সুযোগ কাজে লাগান। বয়সের ২৪ আর বয়সের ৪৪ জীবনের টালিখাতায় সমান আবেদন বইবে না। ভবিষ্যতে দাঁড়িয়ে অতীত নিয়ে যাতে আফসোস না হয়, দীর্ঘশ্বাস না আসে- খেয়াল রাখুন। যদি সুখী হন তবে সর্বোচ্চ সুখী হতে চেষ্টা করুন। যদি দুঃখী হন তবে দুনিয়াই চিরদুঃখী বানাবে। হয় আপনারা ভালো থাকুন নয়তো রাষ্ট্র লাভবান হোক!- দার্শনিক! মাঝমাঝি চলার মাঝে রোমাঞ্চকর উপাখ্যান নাই। সাদামাটা ডালভাত!
মিল-অমিলে মিলে যে মিলেমিশে থাকা সেটাই দাম্পত্য। এই জীবনকে মোকাবেলায় এবং সামলে নিতে তীব্রতর ধৈর্য রাখুন। রোজ রোজ ভালো থাকার মশলা মাখুন। সম্পর্ক যত্নে বাঁচে। মানুষ পুষলে থাকে। কোন পাগল, আধ-পাগলাও যদি জীবনের ডায়েরীতে মিশে যায় তবে সামলে রাখুন। পরের জন্য নয় বরং নিজের জন্যই আপনার ভালো থাকা জরুরি। আপনি যেভাবে বোঝেন, আপনি যা যা বোঝেন তা সবাই বুঝবে না। আবার আপনিও ভুল বুজতে পারেন। বুঝিয়ে দিলেও বুঝবে না- এই অমোঘ সত্য মানতে হবে। যেটুকু আপনার দায়িত্ব এবং যতটুকু ছাড় দেওয়া সম্ভব সেটা দিতে শিখুন। তবেই ভালো থাকার নিশ্চয়তা পাবেন। ভালো থাকতে হলে ভালো রাখতে হয়। জীবনের জরুরি সূত্রগুলো আয়ত্ব নিয়ে নিলেই মনখোলা হাসির মালিক হবেন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন