সিরিয়ায় বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অংশে রুশ-সিরীয় বিমান হামলা জোরদার

রুশ ও সিরীয় যুদ্ধবিমান রবিবার ইদলিব শহরে হামলা চালিয়েছে। এর ফলে উত্তর সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে আরো এক দিন তীব্র বোমাবর্ষণ হলো। এই হামলার লক্ষ্য ছিল বিদ্রোহীদের পিছু হটানো, যারা ইতিমধ্যে আলেপ্পো শহরে পৌঁছেছে। সিরীয় সামরিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

 

স্থানীয়দের থেকে জানা গেছে, এদিন ইদলিব শহরের কেন্দ্রে একটি জনবহুল আবাসিক এলাকায় হামলা হয়। তুর্কি সীমান্তবর্তী বিদ্রোহী অধ্যুষিত বৃহত্তম শহর ইদলিবে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ জরাজীর্ণ তাঁবু ও বসতিতে বসবাস করছে। উদ্ধারকর্মীরা এ হামলায় অন্তত চারজন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন।

সিরীয় সেনা ও তাদের মিত্র রাশিয়া দাবি করছে, তারা বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর আশ্রয়স্থলকে লক্ষ্য করে আক্রমণ চালিয়েছে।

পাশাপাশি তারা বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।  

 

এর আগে শনিবার রুশ ও সিরীয় যুদ্ধবিমান ইদলিব প্রদেশের অন্য শহরগুলোতে বোমাবর্ষণ করে, যা বিদ্রোহীদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এই বিদ্রোহী আক্রমণটি গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে সাহসী, যেহেতু ২০২০ সাল থেকে যুদ্ধক্ষেত্রগুলো অনেকটাই স্থির হয়ে ছিল। বিদ্রোহীরা শুক্রবার রাতে ইদলিব প্রদেশের পূর্বে অবস্থিত আলেপ্পো শহরে প্রবেশ করে।

এতে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ গত কয়েক বছরের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে পুনরায় সেনা মোতায়েন করতে বাধ্য হন।

 


 

 

সিরীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, আক্রমণে তাদের বেশ কিছু সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। রবিবার তারা বলেছে, তারা কিছু শহর পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে, যা গত কয়েক দিনে বিদ্রোহীরা দখল করেছিল।

এই বিদ্রোহীরা হলো তুরস্ক সমর্থিত মূলধারার ধর্মনিরপেক্ষ সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর একটি জোট এবং হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নামের একটি ইসলামিক গোষ্ঠী, যারা বিরোধী পক্ষের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক শক্তি। এইচটিএসকে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, তুরস্ক ও অন্য দেশগুলো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

অন্যদিকে আসাদ মস্কোর ঘনিষ্ঠ মিত্র।  

 

২০১১ সাল থেকে এই যুদ্ধে অসংখ্য মানুষ নিহত হয়েছে এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে এ যুদ্ধ শেষ না হলেও বেশির ভাগ বড় আকারের লড়াই বেশ কয়েক বছর আগে থেমে গেছে, যখন ইরান ও রাশিয়া আসাদের সরকারকে অধিকাংশ অঞ্চল ও সব প্রধান শহর পুনর্দখল করতে সহায়তা করেছিল।

বেসামরিকরা আলেপ্পো ছাড়ছে
এদিকে আলেপ্পো শহরের ভেতরে রবিবার বেশির ভাগ রাস্তা ছিল শূন্য। সেখানকার অনেক দোকান বন্ধ ছিল। কারণ আতঙ্কিত বাসিন্দারা ঘরে অবস্থান করছিল। তবে শহর ত্যাগ করা বেসামরিকদের জন্য ভারী যানবাহন চলাচল করছিল। শহর থেকে পিছু হটা সিরীয় সেনারা এখন পুনরায় সংগঠিত হচ্ছে এবং পাল্টা আক্রমণে সাহায্য করার জন্য আরো সেনা পাঠানো হচ্ছে বলে সামরিক সূত্র জানিয়েছে।  

২০১৬ সালে আলেপ্পোতে সরকারের বিজয়ের পর শহরটি শক্তভাবে সরকারের অধীনে ছিল। এটি যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় ছিল, যখন রুশ সমর্থিত সিরীয় বাহিনী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব আলেপ্পো অঞ্চল ঘেরাও করে ধ্বংস করে।

বিদ্রোহীরা রবিবার দাবি করেছে, তারা আলেপ্পো শহরের দক্ষিণে আরো অগ্রসর হয়ে খাঁনসির শহর দখল করেছে, যা সেনাবাহিনীর মূল সরবরাহ রুটকে বন্ধ করার চেষ্টা। বিদ্রোহী সূত্র জানিয়েছে, তারা শেইখ নাজ্জার এলাকাও দখল করেছে, যা দেশের একটি প্রধান শিল্প এলাকা।

ইরান সিরিয়ার যুদ্ধে হাজার হাজার শিয়া মিলিশিয়া পাঠিয়েছিল এবং রাশিয়ার সহযোগিতায় প্রেসিডেন্ট আসাদ বিদ্রোহী হামলাকে দমন করে তার অধিকাংশ অঞ্চল পুনরুদ্ধার করেছিল। কিন্তু সম্প্রতি বিদ্রোহীদের আক্রমণ প্রতিরোধে সিরীয় সেনাদের সাহায্য করতে ইরানের ওই মিলিশিয়াগুলোর অভাবের কারণে সেনারা দ্রুত পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে বলে দুই সামরিক সূত্র জানিয়েছে। পাশাপাশি হিজবুল্লাহ নেতৃত্বাধীন ইরান সমর্থিত মিলিশিয়াগুলোর শক্তিশালী উপস্থিতি রয়েছে আলেপ্পো অঞ্চলে। ইসরায়েল গত কয়েক মাসে সিরিয়ায় ইরানি ঘাঁটিগুলোর ওপর আক্রমণ তীব্র করেছে। এ ছাড়া লেবাননে আক্রমণ চালিয়ে হিজবুল্লাহ ও তার সামরিক সক্ষমতা দুর্বল করার দাবি করেছে।

 

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন