মাটিতে শোয়াতে না শোয়াতেই দেহটা পঁচে যাবে। হাড়গুলোর হদিস থাকবে না কিছুদিন পরেই---
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
আমরা প্রায় প্রত্যেকেই সুন্দর অবয়ব নিয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারি না। রোগ-শোকে জরাজীর্ণ হয়ে, বার্ধক্যের ক্লান্তিজনিত ছাপ নিয়ে কিংবা কারো আঘাতে জর্জরিত হয়ে মানসিক চাপ নিয়ে মৃত্যুবরণ করি। যতগুলো মরদেহ দেখেছেন, কল্পনা করুন- তাঁদের দেহগুলি তারুণ্যের উজ্জ্বলতা, যৌবনের শক্তিমত্তা নিয়ে নিথর হয়নি। কেমন একটা অস্বস্তিকর ছাপ-ছায়া দেহকে আবৃত করে রেখেছে। কারো শরীর ভেঙ্গে গেছে, চামড়া ঝুলে গেছে কিংবা দেহের পরিবর্তন হয়েছে বিস্তর। মসৃণ চামড়ার নিচে ব্যাধি বেঁধেছিল কতখানি- তা বাহির দেখে কে জানতো!
অথচ ভেবে দেখুন, কত চমৎকার আমল নিয়ে আমরা মৃত্যুবরণ করতে পারি। শেষ নিঃশ্বাস নিতে নিতে দু'টো ভালো কথা বলতে বলতে এবং একটি ভালো কাজ করতে করতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারি- আমাদের আমৃত্যুর প্রার্থনা হোক। মৃত্যু যেহেতু অনিশ্চিত সময়ের বৃত্তে বন্দি সেহেতু সর্বদা ভালো কাজ জারি রাখতে হবে। মৃত্যুর খবর শুনে যদি দূরের কেউ দীর্ঘশ্বাসে বলে, 'বড় ভালো লোক ছিল' কিংবা আপন কেউ বিসর্জন দেয় দু'ফোঁটা চোখের পানি তবে মানবজন ধন্য হবে। যেতে যেতে যদি পেছনে রেখে যাই পূণ্য তবে সে মৃত্যুর চেয়ে সুন্দর আর কী হতে পারে, প্রিয়?
মাটিতে শোয়াতে না শোয়াতেই দেহটা পঁচে যাবে। হাড়গুলোর হদিস থাকবে না কিছুদিন পরেই। পরের দুই পুরুষ গত হতে না হতেই তুমি হয়ে যাবে সুদূর অতীত। যারা তোমার সম্পদ ভোগ করবে, রেখে যাওয়া গৃহে যারা বসবাস করবে কিংবা যে পথে পড়েছিল পা- সেই পথে যারা হাঁটবে, তাদের কেউ তোমাকে তখন চিনবে না। বড্ড অচেনা তুমি। এমন পরিবর্তনের জন্য কতযুগ লাগবে? বড়জোর ১০০ বছর। অথচ যদি একটা ভালো কাজ রেখে যাও দুনিয়ায় তবে দুনিয়া ধ্বংস না হতে তা হারাবে না। ইসরাফিল ফুঁৎকারের পরেও রয়ে যাবে তোমার আমল।
ধরুণ, সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। আপনি শেষবিচারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রবের সামনে স্থির। তখন ইথারে ইথারে ছুটে আসছে আপনার নেক আমল। সেই মুহূর্তে আপনার চেয়ে সুন্দর কে? এমন করে কার চেহারায় নগ্ন হবে নুরের আলো? তখন এমন অবয়ব পাবেন যার রোশনিতে সম্যক ময়দান ঝলমলে হবে। দুনিয়ায় কোন বর্ণে ছিলেন, কোন গোত্রে ছিলেন- এসব তখন মূল্যহীন। আপনার রেখে যাওয়া আমল আপনার গন্তব্যের ফয়সালা করবে।
দু'দিনের দুনিয়ায় যত পারেন ভালো কাজ করেন। রূপ-যৌবনকে মালিশ করে, স্বার্থ লাভের আশায় কারো বিরুদ্ধে নালিশ করে আসলে তো লাভ নাই। সময় খুব দ্রুতই ফুরিয়ে আসছে। যেকোনো সময় আসবে শেষ বিদায়ের ডাক। একটা ভঙ্গুর দেহ চেনা-অচেনা লোকে ধরাধরি করে কবরে শোয়ালেও সাথে যাতে কিছু সৎ আমল যায়- আয়োজন করে যান।
দুনিয়ায় যে সম্পদ রেখে যাবেন তা নিয়ে আপনার রক্তদের মধ্যে কামড়াকামড়ি লাগবে। অভিযোগোর আঙুল উঠবে আপনার কবরের দিকে। কবরও কতখানি জায়গা নিয়েছে! আরও কত মানুষের অভিযোগ থাকবে। আপনি মরে গেলেন তাও বলে গেলেন না- এই অনুযোগেও কেউ কেউ আপনার ওপর রাগ পুষে রাখবে।
সত্য কথা বলা, সততায় বাঁচা- এরচেয়ে এইজীবনে আর কী দামি? অন্যায়ভাবে অর্জিত সম্পদ, কাউকে অধিকার বঞ্চিত করে লাভবান হওয়া কিংবা কাউকে ঠকিয়ে বাহাদুরি দেখানো- এসব কাউকে চিরদিন টিকিয়ে রেখেছে? মানুষের অভিসম্পাতের চেয়ে সাধারণের প্রার্থনা কতোখানি মঙ্গলের তা বুঝতে পরকাল যথেষ্ট হবে। দুনিয়াতেও আলামত টের পাবেন।
ভালোমানুষের কথা ও আচরণে দুনিয়াটাও ধন্য হয়। পরিবার-সমাজ এবং রাষ্ট্র যার দ্বারা উপকৃত হয়, মানুষের আসে স্বস্তি- সেই মানুষের মত গুণাগুণ আমাদেরও হোক- এই চাওয়া পূরণের আগে রব যেনো ডেকে না নেয়- আমাদের সম্মিলিত প্রার্থনা।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন