ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া, কোন আইন নিয়ম কানুন কোন কিছুর পরোয়া করছে না। বিগত ১৬ বছর দেশের ক্ষমতার কাঠামোর কেন্দ্র বিন্দুতে ব্যবসায়ীরা তাদের মতো করে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেছেন। আর এ কাজে দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতার কাঠামো নিয়ন্ত্রণ, প্রশাসন, গণমাধ্যমসহ সবকিছুকে তারা ব্যবহার করেছে। যার কারনে তারা যা চেয়েছে তা-ই হয়েছে। ফলশ্রæতিতে ব্যবসায়ীরা এক একটি বার এক একটি পণ্যের দাম বাড়িয়ে জনগনের পকেট কাটলেও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছেন। ব্যবসায়ীরা চাল, ডাল, চিনি, সয়াবিন তেলে প্রতিদিন শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও রমজান উপলক্ষে সরকার অনেকগুলো পণ্যের আমদানি শুল্ক কমানো হলেও বাজারে তার কোন প্রভাব নেই। ১৮ কোটি সাধারন মানুষের কন্ঠস্বর হিসাবে জনগনের ভোগান্তি, হয়রানি ও মনোবেদনার কথা সরকারের নজরে আনতে ক্যাবকে আরও শক্তিশালি এবং সোচ্চার হতে হবে। দেশে নৈরাষ্যবাদীদের মতো দেশে কিছু হবে না, এই তত্তে¡র স্থলে জুলাই অভ্যত্থানের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ যেমন এখন স্বপ্ন নয় বাস্তব, সেরকম ব্যবসায়ীদের নৈরাজ্য থামাতে একই ভাবে সামাজিক আন্দোলন এক সময় সফল আন্দোলনে পরিনত হবে। ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ইং নগরীর চট্টগ্রাম সার্কিট সম্মেলন কক্ষে ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় ভোক্তা অধিকার সম্মেলনে বিভিন্ন বক্তাগন উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে ও ক্যাব বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরীর সঞ্চালনায় সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক(গ্রেড-০১) মোহাম্মদ আলীম আখতার খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার ডঃ মোঃ জিয়াউদ্দীন, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও উন্নয়ন) মোঃ শরীফ উদ্দীন ও ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জামিল চৌধুরী। আলোচনায় অংশনেন চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক হোসাইন কবির, বীরমুক্তিযোদ্ধা শিক্ষাবিদ ডঃ প্রফেসর ইদ্রিস আলী, ক্যাব বান্দারবান জেলা কমিটির সভাপতি সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম মনু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক এস এম শাহীন, খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সভাপতি সাংবাদিক আবু তাহের, ফেনী জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম নান্টু, কুমিল্লা জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক কাজী মাসুদুল আলম, কক্সবাজার জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক জসিম উদ্দীন সিদ্দিকী, রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক রানা মহসিন, ন্যাপ কেন্দ্রিয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিটুল দাস গুপ্ত, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা সভাপতি আলহাজ¦ আবদুল মান্নান, ক্যাব মহানগরের সাধারন সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ন সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম জাহাঙ্গীর, ক্যাব মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস, ক্যাব চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কমিটির সদস্য সচিব শাহাদত হোসেন, রাউজান উপজেলা কমিটির সাংবাদিক মোজাফ্ফর হোসেন, চন্দনাইশ উপজেলা কমিটির সভাপতি নুরুল হক চৌধুরী, হাটহাজারী উপজেলা কমিটির লায়লা ইয়াছমিন, ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি আবু হানিফ নোমান, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি রাব্বি তৌহিদ, সদস্য রাসেল উদ্দীন, এমদাদুল ইসলাম প্রমুখ। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপ-পরিচালক ফয়েজউল্যাহ, জেলা সহকারী পরিচালক নাসরীন আকতার এ উপলক্ষে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেন, জনতার আন্দোলন বিফলে যায় না, যারা হতাশায় ভোগতেন তাদের অবশ্যই নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও চব্বিশ এর জুলাইয়ের আন্দোলন থেকে শিক্ষা নেয়া দরকার। ক্যাব এর আন্দোলনের কারনে আজকে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষন অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। তাই কিছুই হবে না বা অসাধু ব্যবসায়ীদের শৃংখলায় আনা যাবে না এ তত্ত্ব থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ব্যাপক গণজাগরন একদিন অসাধু ব্যবসায়ীদের সব অপকর্ম একদিন বন্ধ হবে। তবে এজন্য তৃণমূলে জনগনের কন্ঠশ^র শক্তিশালী করতে সামাজিক আন্দোলনের বিকল্প নাই। যে কোন জনভোগান্তি ও অধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটলেই তাদের পাশে দাড়ানো ও জোরালো প্রতিবাদ কর্মসুচি নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তরুনদের মাঝে স্বপ্ন দেখাতে হবে। দেশে ভোক্তা অধিকার লংগনের ঘটনা প্রতিরোধে তরুণ সমাজকে আরও দক্ষ ও শক্তিশালী করতে না পারলে ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের মাঝে বৈষম্য কমানো যাবে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার ডঃ মোঃ জিয়াউদ্দীন বলেন অর্থনৈতিক সমস্যা অর্থনৈতিক ভাবে সমাধান করতে হবে। সমাজের যে কোন পরিবর্তনে সামাজিক আন্দোলনের বিকল্প নাই। যারা অসাধু ব্যবসায়ী নানা অপকর্ম করছে, তারা আমাদের সমাজের অংশ। কারো, ভাই, কারো আত্মীয়স্বজন। তাই অসাধু ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেটকারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধের বিকল্প নেই। আর এ কাজে ক্যাব নেতৃত্ব প্রদান করবেন এ প্রত্যাশা করেন।
জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ মাঠ পর্যায়ে ভোক্তা অধিকার সুরক্ষায় বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনায় সমস্যাগুলো তুলে ধরেন। বিভাগের অনেক জেলায় জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা নাই। যেখানে জেলায় একজন কর্মকর্তা দিয়ে সামাল দেয়া কঠিন, সেখানে একজন কর্মকর্তা দুই জেলার দায়িত্বপালন করছেন। ক্যাব নেতৃবৃন্দকে ভোক্তা অধিকার বিষয়ে আরও প্রশিক্ষন দিয়ে যোগ্য হিসাবে গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে বলা হয়, ভোক্তা ও চ্যারিটির মধ্যে পার্থক্য অনুধাবন করতে না পারলে মানুষের অধিকারের পক্ষে লড়াই করা যাবে না। সমাজে সমাজ কর্মী বা দান খয়রাত করেন এমন লোকের সংখ্যা কম নয়। কিন্তু কোন মানুষের অধিকার লংগন হলে এগিয়ে আসেন এরকম লোকের সংখ্যা ক্রমাগতই কমছে। সমাজে অনেক ভালো মানুষ আছে, যারা “সাপকেও লম্বা বলেন না” আবার “ব্যাঙকেও ছোট বলেন না”। আর এ সমস্ত লোকজনকে দিয়ে সমাজ পরিবর্তন সম্ভব নয়। তাই কনজিউমারিজম বিষয়ে ক্যাব নেতাদের আরও দক্ষ করার বিকল্প নাই। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ক্যাবকে শক্তিশালী করতে সরকারের পৃষ্ঠাপোষকতা বাড়ানোর সুপারিশ করে বলা হয়, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলি সরকারের নানা সুবিধা ও প্রণোদনা পেয়ে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হলেও, সেখানে ক্যাব এখনও “নিজের খেয়ে বনের মোষ আর তাড়াচ্ছে”? সম্মেলনে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলার প্রায় ১৫০ জন ক্যাব নেতা/প্রতিনিধি অংশগ্রহন করেন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন