দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল সংক্ষিপ্ত সামরিক আইন ঘোষণার পর শনিবার অভিশংসন এড়াতে সক্ষম হয়েছেন। তার শাসকদলের আইন প্রণেতারা এদিন ভোটে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। তবে পার্লামেন্টের বাইরে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে ইওল পুরো জাতি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে চমকে দেন।
তিনি বেসামরিক শাসন স্থগিত করে পার্লামেন্টে সেনা পাঠানোর ঘোষণা দেন। তবে আইন প্রণেতাদের চাপে তিনি ঘুরে দাঁড়াতে বাধ্য হন। এরপর বিরোধী দলগুলো অভিশংসনের প্রস্তাব করে, যা পাস হওয়ার জন্য পার্লামেন্টে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ইওলের পিপল পাওয়ার পার্টির (পিপিপি) প্রায় সব সদস্য ভোট বয়কট করার কারণে তা ব্যর্থ হয়।
পার্লামেন্টের স্পিকার উউ ওন-শিক বলেন, ‘ভোট দেওয়ার জন্য সদস্যদের সংখ্যা প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশে পৌঁছয়নি’ এবং ফলস্বরূপ অভিশংসন ভোট ‘বৈধ নয়’ বলে ঘোষণা করেন তিনি।
স্পিকার আরো বলেন, ‘দেশ ও বিশ্বের সবাই এটি দেখছে। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যুতে ভোটই অনুষ্ঠিত না হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক।’ এ ঘটনা শাসকদলের পক্ষ থেকে ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণে ব্যর্থতা’ চিহ্নিত করে বলেও মন্তব্য করেন স্পিকার।
ভোটের পর পিপিপি দাবি করে, তারা ‘গভীর বিভাজন ও বিশৃঙ্খলা’ এড়াতে অভিশংসন রোধ করেছে। একই সঙ্গে তারা বলেছে, ‘তারা আরো সুসংগঠিত ও দায়িত্বশীলভাবে এই সংকট সমাধান করবে।’
অন্যদিকে পার্লামেন্টের বাইরে দেড় লাখ (পুলিশের মতে) থেকে ১০ লাখ (আয়োজকদের মতে) প্রতিবাদকারী হতাশ হয়ে পড়ে। তারা অভিশংসনের পক্ষে আন্দোলন করছিল। শাসকদলের আইন প্রণেতারা পার্লামেন্টের কক্ষ ত্যাগ করলে বিক্ষোভকারীরা ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করে, কিছু মানুষ হতাশায় শ্বাস টেনে নেয় বা কাঁদে।
৩০ বছর বয়সী জো আহ-গ্যিয়ং বলেন, ‘আজ আমরা যেটি চেয়েছিলাম তা পাইনি, তবে আমি হতাশ বা দুঃখিত নই। কারণ আমরা শেষ পর্যন্ত এটি অর্জন করব। আমি এখানে আসতেই থাকব, যত দিন না আমরা এটি অর্জন করি।’
এদিকে বিরোধী দল ইতিমধ্যে আগামী বুধবার আবারও ইওলকে অভিশংসনের চেষ্টা করার অঙ্গীকার করেছে এবং অনেক প্রতিবাদকারী পরবর্তী সপ্তাহান্ত পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। বিরোধী নেতা লি জে-মিয়ং বলেন, ‘আমি ইউন সুক ইওলকে অভিশংসন করব, যিনি দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছেন, যেকোনো মূল্যে।’
ভোটের আগে ৬৩ বছর বয়সী ইওল সরকারি উত্তেজনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। তবে তিনি তার দলকেই তার ভবিষ্যৎ নির্ধারণের দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি জনগণের কাছে উদ্বেগ ও অস্বস্তি সৃষ্টি করেছি। আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমি দলকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার ব্যবস্থা নিতে (দায়িত্ব) দেব, যার মধ্যে আমার দায়িত্বের মেয়াদও রয়েছে।’
নরওয়ের অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোরিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক ভ্লাদিমির তিখোনভ জানান, অভিশংসন প্রস্তাবের ব্যর্থতা ‘আরো দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক সংকটের’ কারণ হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা একজন রাজনৈতিকভাবে মৃত প্রেসিডেন্ট পাব, যার জন্য শাসনক্ষমতা কার্যকরভাবে অক্ষম হয়ে যাবে এবং প্রতি সপ্তাহে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নামবে, যত দিন না ইওলকে সরানো না হবে।’
যদি অভিশংসন প্রস্তাব পাস হতো, তাহলে ইওলকে সাংবিধানিক আদালতের রায় পর্যন্ত তার দায়িত্ব থেকে স্থগিত করা হতো। গত শুক্রবার একটি জনমত জরিপে দেখা যায়, প্রেসিডেন্টের প্রতি সমর্থন ১৩ শতাংশে নেমে এসেছে, যা একটি রেকর্ড।
প্রেসিডেন্ট ইওলের সামরিক আইন জারির ঘটনা মিত্রদের অপ্রস্তুত করার পাশাপাশি দেশের স্বৈরাচারী অতীতের বেদনাদায়ক স্মৃতি ফিরিয়ে আনে। মার্কিন প্রশাসন শুধু টেলিভিশনের মাধ্যমে তার এ সিদ্ধান্ত জানতে পেরেছিল।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন