ভুলের দায়ে দুঃখের মূল্যায়ণ!

আঁধারের রাত কেটে ভোরের আলো আসতে চায় না! 

রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক ||

দুঃখের গভীরতাকে উপলব্ধি করে তার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করাই বেশি জরুরি। কে দুঃখ দিয়েছে, তার চেয়ে কেন দুঃখ পেয়েছি- সেটা তালাশ করা বেশি দরকার। দুঃখ পাওয়ার কারণ যদি যৌক্তিক হয় তবে আঘাত দেওয়ার মানুষ/ঠিকানা বদলাতে পারে কিন্তু দুঃখ অনিবার্য- আসবেই। আমাদের যা দুঃখ সেসবের অধিকাংশ নিজেদের দোষে প্রাপ্ত। শিখেও সাবধান হইনি কিংবা দুষ্ট লোকের মিষ্টি কথায় বিগলিত হওয়ার কালে বিবেককে জাগ্রত রাখিনি। বিশ্বাস না করে কেউ ঠকেছে? যতবার ঠকেছি ততবার বিশ্বাস করেছিলাম! প্রত্যাশা করেছিলাম বাস্তবতার বেশি!- এটাই বাস্তব। 

 

যে ঠকায় না সেও ঠকতে পারে তবে তাঁর সামলে ওঠার শক্তি থাকে। নির্দোষ যতবার ঠকে ততবার বিনিময় পায়। তাঁর সম্মানিত/উন্নতি হওয়ার সিঁড়ি মসৃণ হয়। কিন্তু যে প্রতারক সে বারবার বহুবার ঠকে। তবে ব্যবধান হচ্ছে প্রতারকের দুঃখগুলো মরে না, ক্লান্ত হয় না কিংবা তাকে ছেড়ে যায় না। জীবনের সাথে জুড়ে থাকে। জীবনে প্রশান্তি নাই, স্বস্তি অনুপস্থিত কিংবা তুষ্টি বিনষ্ট হয়ে গেছে- এর চেয়ে বড় কোন শাস্তি আছে বলে মনে করেন? যে মানুষ মানুষকে বিশ্বাস করে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারে না, দুশ্চিন্তা যাকে ছাড়ে না কিংবা সঙ্গীর সঙ্গ যার জন্য অত্যাচার- তেমন জীবন আমাদের না হোক। হতাশা দূর হয় কিন্তু যে অলীক প্রত্যাশায় ভোগে সে আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে না। আঁধারের রাত কেটে ভোরের আলো আসতে চায় না! 

 

দুঃখ আসুক। তবেই সুখের মর্ম মূল্যায়িত হবে। যে ভুল অজ্ঞাতে ঘটে তা যত বড় হোক- ক্ষমার যোগ্য কিন্তু ভুল যদি জ্ঞাতে জ্ঞানত হয় তবে ক্ষুদ্র ক্ষতিও ক্ষমার উর্ধ্বে রাখা উচিত। যে দম্ভ করে ভুল করে, যে অহংকার করে আঘাত করে সে মানুষের আনুকূল্য পায় না।প্রত্যেক অপরাধের শাস্তি নির্ধারিত যদি মালিক সদয় না হয়। যে জন মানুষের আপন হতে পারে না তার আয়ু লম্বা হলেও তাকে সুখের বায়ু স্পর্শ-আলিঙ্গন করে না। মানুষ আসলে সুখের আশায় বাঁচে। তবে যে দুঃখের অস্তিত্ব অস্বীকার করে সে সুখের সকালে পৌঁছে না। 

 

আমরা ভুল ঠিকানায় তরী ভিড়িয়ে সবচেয়ে বেশি আঘাত পাই। অভিযোগের আঙুল তুলে দুঃখ ভাগাভাগি করি। নিজের দোষ ছাড়া জগতের বাকিদের দোষ দেখা ব্যধির মত। কতভাবে  স্বচ্ছজল ঘোলা করে মন খারাপ করি তা নিয়ে আত্মসমালোচনার আসর বসানো উচিত। কিন্তু আমাদের বাসরে আলোচিত হয় অচেনার দুর্নাম, আজানার নামে কূটনামি। আত্ম-উন্নয়নের গরজে আমরা কখনোই বলবর্ধক দেখি না অথচ কাকে কীভাবে ঠকানো যায়, কত কত ছলা কলায় বলা যায় মিথ্যা তা নিয়ে সভাপতির আসন মঞ্চস্থ করি। ভুলে যাই জীবনের উদ্দেশ্য। বয়ে চলি দুর্গন্ধ।  অথচ নাগালেই সুগন্ধির ফুল ছিল। অলসতায় হৃদয়ের টানে হাত না বাড়ানোর ভুলে সারাজীবন খেসারত দিতে হবে। 

 

যে দুঃখ আছে সে দুঃখ থেকে নিবৃত্তি পাওয়ার উপায় আছে। নত হতে হবে। যে ক্ষত তৈরি হয়েছে তা শুকিয়ে সারাতে হবে। কাউকে দুঃখ না দেওয়ার শপথে অন্যের জীবনের পাশে দাঁড়াতে হবে। কে কী বললো- প্রতি-উত্তর, প্রতি-হিংসায় ক্রোধের অনলে নিজেকে জড়ানো যাবে না। ক্ষমার চেয়ে, নিরবতার থেকে বড় অপরাধ আর একটাও নাই। কেউ মন্দ বলেছে? চুপ থাকুন। উপযুক্ত সময় আপনার হয়ে উত্তর শুনিয়ে দেবে। শুধু নিজের ভুলগুলো আবিস্কার করে মলম মালিশ করুন। ভালো মানুষ হয়ে উঠুন। তখন দুঃখ পেলেও সেটা পবিত্রতার পথ ধরে আসবে। মানসিক তৃপ্তির চেয়ে বড় কোন প্রাপ্তি নাই।

 

 

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন