আপনি ইচ্ছা করলেই পাহাড়-সাগরের উদ্দেশ্যে সব ছেড়েছুঁড়ে বের হয়ে যেতে পারেন না
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।|
বেকার জীবনে কত শখ পূরণ হয়নি কেবল টাকার অভাবে। খেয়াল করে দেখেছেন, কর্মজীবনে সেই শখগুলো অপূর্ণই রয়ে যাচ্ছে। এখন অভাব দু'টো। টাকা এবং সময়। আয়ের খাত একটি কিন্তু এখন ব্যয়ের ক্ষেত্র যে বহু। দায়িত্ব বাড়ছে, রোগ বাড়ছে আর বাড়ছে ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা! তাও টাকার অভাব তো ধার-দেনা করে মেটানো যায় কিন্তু সময়ের অভাব?
আপনি ইচ্ছা করলেই পাহাড়-সাগরের উদ্দেশ্যে সব ছেড়েছুঁড়ে বের হয়ে যেতে পারেন না। আপনার যে সময়কে দাসত্বের জিঞ্জিবে ভাড়া দিয়েছেন সে সময়ের ওপর আপনার নিয়ন্ত্রণ এবং অধিকার নাই। চাকুরিজীবী মানেই আধুনিক দাস। সবকিছুতেই অনুমতি নিতে হয়। বলতে হয় মিনমিনে গলায়, 'আপনার যদি একটুখানি অনুগ্রহ হতো। দয়া করুন মহাশয়!'
দিন যত সামনে বাড়ছে তত শিকড় গজাচ্ছে। আপনার ব্যস্ততা কি কমছে? প্রত্যেকটি দিন নতুন নতুন অজুহাত নিয়ে সময় সামনে দাঁড়াচ্ছে। জীবনে মানুষের সংখ্যা বেড়েছে, সম্পদও না হয় বেড়েছে ধরলাম কিন্তু স্বাধীনতা কি বেড়েছে? ইচ্ছাদের মুক্তি এসেছে? নিজের জন্য একটু সময় বের করা মুশকিল। কত ত্যাগ গোপনে করতে হচ্ছে, কত শখ উৎসর্গ করতে হচ্ছে প্রকাশ্যে- সুখ কি মিলছে? মনে হয় না!
যে অতীত ছেড়ে এলাম- রঙিন শৈশব-কৈশোর, হয়তো মানুষও ছেড়েছিলাম সুখের জন্য সেই সুখ আদৌ ধরা দিয়েছে? আমরা স্বপ্ন দেখি, মোহ-মায়ায় পড়ি এবং লোভ-ক্ষুধা বাড়ে কিন্তু দিনশেষে কী থাকে আমাদের? নিজস্ব বলতে! অঙ্ক মেলে না। কত শখ অপূর্ণ থেকে যায়, কত স্বাদ মেটে না কিংবা যা চাই তা পাই না- দুঃখে অসহায় আমি! ক্লান্ত পথিক। জিরিয়ে নিতেও অগ্রিম অনুমতি নিতে হয়!
আজ টাকার দুঃখ কিছুটা ঘুচেছে মাসের শুরু বলে কিন্তু মাসের শেষে তো টানাটানি লাগে। টাকার কথা থাক। যে আয়ু অনেক লম্বা শুনেছি তা কতদ্রুত ৩২ বসন্ত পাড়ি দিচ্ছে, আর ক'টা দিন বাদেই তো কবরের বুকে ঘাস গজাবে! হিসাব কি শেষ হয়েছে? চাওয়া-পাওয়ার অঙ্ক সরলাঙ্কের ফলাফল মিলেছে? এখনো যে স্বপ্নের কতকিছু ছুঁয়ে দেখা বাকি । সাগর-পাহার কিংবা যৌবনের জ্যোছনা, একটি ভালো বই আর ক'জন সঙ্গী- শখ অপূর্ণ রেখেই যেতে হবে?
মানুষ যে কেন ইচ্ছা করেই স্বাধীন সময় পরাধীনতার হাটবাজারে বেচে! বেঁচে থাকার জন্য কি বেচে দিতেই হয়? কত অল্প সময়ের বাঁচার গল্পের সব প্লটে তাঁর স্বাধীনতা থাকে না। নিজের জীবন, নিজের সময় অথচ পরের হুকুম তামিল করতে হয়। কে কী বললো, কে কী ভাবলো তা ভেবে পা ফেলতে হয়! কথা বলতে হয় মনিবের বানানো ছাঁচে মেপে মেপে! জীবন এমন অসহ্য কেনো?
খাওয়ানোর দায়িত্ব মালিকের অথচ আমাকে খাদ্য তালাশ করে শ্রম দিতে হয়। বিক্রি করতে হয় নিজেকে- অতঃপর নিরাপত্তা মেলে বর্তমান এবং ভবিষ্যতে। তাও শর্তাধীন! যতটুকু আয়ু দিলে ততটুকু সময় আমাকে দিলে না কেন? শখ দিলে অথচ শখ পূরণের সামর্থ্য ও সময় দিতে তুমি কার্পণ্য করলে! একদিন ঘোরাঘুরির অবসর পাবো, পকেটে টাকা-কড়ির অভাব থাকবে না অথচ তখন শরীরের ধকল নেওয়ার শক্তি থাকবে না। অপূর্ণ শখগুলো খুব পোড়াবে! জীবনটাকে বড় বিচিত্র করে সৃষ্টি করলে বটে- ওহে দয়াময়!
আলাদা আলাদা মানুষ এবং ভিন্ন ভিন্ন গল্পে ভরা। আমি নগন্য হয়েই বাঁচি। কারো স্বাদ আছে, সাধ্য নাই আবার কারো সাধ্য আছে কিন্তু সময় নাই। কী খেলা খেল হে তুমি বসে নিরালে ওহে নিরঞ্জন? সফরের সুযোগ দিও জ্ঞানের দুনিয়ায়। অবসর দিও বইয়ের পাতায়। শখ পূরণের শক্তি না দিলে স্বপ্নও দিও না। ফিরিয়ে নিও তোমার দিকে পূর্ণ ঈমানে- আকুলিত প্রার্থনায়।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন