কোন মতামতে আপনি যদি ভিন্নমত হন তবে আপনার সাথে আলোচনা করবে না------
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
আপনি ততক্ষণ ভালো, কতক্ষণ? যতক্ষণ বক্তার সাথে সহমত থাকবেন। প্রশ্ন করা ছাড়াই কথক যা বলবে তা চুপচাপ শুনবেন এবং হা-সূচক মাথা ঝাঁকাবেন। যাতে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, আপনি পূর্বতন সবকিছু মেনে নিয়েছেন এবং ভবিষ্যতেও যা বলা হবে তাও অকপটে গিলে খাবেন! বক্তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে, ধরিত্রীপুরে আপনার মত সত্য এবং ভালো আর কেউ বলে না। মাঝে মাঝেই হবে জোরদার তালিয়া।
আপনি না শুনেও যে একমত তা যদি বোঝাতে পারেন তবে আপনার চেয়ে জ্ঞানীগুণী, ভালো বুদ্ধিজীবী আর কেউ হয় না। এমনটা পারলে আপনি আসলেই ভালো! অনেকেই আশা পোষণ করে বসে থাকেন যে, সে ভালো-মন্দ, যৌক্তিক-অযৌক্তিক কিংবা সত্য-মিথ্যা যা-কিছু বলুক তাতে শ্রোতাদের সহমত পাবে। ভিন্নমত সহ্য করার ক্ষমতা যাদের ক্ষীণ তারা চাটুকারদের সার্কেল জমিয়ে রাখেন।
কোন মতামতে আপনি যদি ভিন্নমত হন তবে আপনার সাথে আলোচনা করবে না। মোটকথা, আলোচনা জমবে না। নয়তো কিছুই বোঝেন না এমন মন্তব্য দিয়ে আপনাকে গন্তব্য হারা করবে। তর্কে অমত হলে যারা বিপরীতদের শত্রু ভাবতে শুরু করে তাদের যোগ্যতা নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্র এই টপিকস নয় তবে তাদের সঙ্গ এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানদের কাজ! যারা মতামতের সভাতে সবার সহমত প্রত্যাশা করে বসে থাকেন, কথা বলার মাঝে ইঙ্গিতবাচক চাহনি ফেলেন এবং কথা পক্ষে গেলে যাদের ভালো লাগে তাদের সামনে চুপ থাকা ভালো। চুপ থাকাতেই তাদের বিরুদ্ধে জ্ঞানের প্রতিশোধ। যারা যুক্তির বিরুদ্ধে কু-যুক্তি হাজির করে তাদের কথা সহ্য করতে বাধ্য হলে সেটা জ্ঞানের সদকাহ। একজীবনে এমন সদকাহ বহুবার আমলের সাথে যুক্ত হবে।
সহমত সহমত তোষণ করতে করতে মানুষ সঠিক পথ হারায়। উল্টোকে সঠিক পথে পরিচালিত করার বুদ্ধি দিলেও যারা সহজভাবে গ্রহন করতে পারে না তাদেরকে কঠোরভাবে এড়িয়ে চলা উচিত। তেমন কোন আলোচনায় বসা উচিত নয় যেখানে মূর্খ বক্তার আসনে আর জ্ঞানীরা মূর্খের সম্মুখে নিরব শ্রোতা!
সহমত পোষণ করে স্বার্থ আদায় করা যায় বটে কিন্তু ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যতা কোরবানি হয়ে যায়। নিজেকে বিক্রি করে যারা স্বার্থ ক্রয় করে তারা প্রজ্ঞার রেসের শেষ প্রান্তে পৌঁছে না বরং শুরুতেই ক্ষয়ে খুইয়ে যায়। যুক্তিবাদী মানসিকতা, জ্ঞান-বুদ্ধি এবং বিবেক মানুষকে সঠিক পথের দিশা দেয়। যারা লোভ দ্বারা সংক্রমিত হয় কিংবা মোহাবিষ্ট হয়ে আদর্শ বিচ্যূত হয় তারা শেষমেশ জীবন্ত ভাঁড়ে পরিনত হয়। নিজস্বতা বলতে তাদের কিছু থাকে না। যাদের নিজস্বতা নাই তারা বারবনিতা চরিত্র ফেরি করে!
বাঁচার দিনগুলোতে মেরুদণ্ড সোজা করে বাঁচা উচিত। যা বিশ্বাস করি তা যদি যুক্তিপূর্ণ এবং ন্যায় দ্বারা পরিচালিত হয় তা সাহস ও আত্মপ্রত্যয়ের সাথে বলা উচিত। নিজস্ব ধ্যান-জ্ঞান লুকিয়ে যারা স্তাবকের ভূমিকা পালন করে তারাও শেষমেশ আপন থাকে না। গোমরাহির শেষ পরিণতিতে পতন অনিবার্য। তেমন শ্রোতা হয়ে লাভ নাই যে স্রোতা কেবল স্বাক্ষী গোপাল! বক্তারও বোঝা উচিত- শ্রোতারাও চদু নয়! শুনে যাওয়া আর মেনে নেওয়াতে বিস্তর ফারাক! কিছু মানুষকে কিছু সময়ের জন্য বোকা বানানো সম্ভব কিন্ত সব মানুষকে সকল সময়ের জন্য বোকা বানানো যায় না! যারা চুপ থাকে তারাও সত্য বোঝে!
চুপ থাকা মানে সহমত হওয়া নয়; কখনো কখনো চরম বিরুদ্ধতার শক্তি অর্জন করাও বটে! কাজেই কারো সামনে ভালো সাজতে গিয়ে তাল মিলিয়ে এলে তাতে সত্যের প্রতি অন্যায্যতা হতে পারে। আনুগত্য ততক্ষণ পর্যন্ত ওয়াজিব যতক্ষণ তা কাউকে অধিকারহারা না করে। কারো অযৌক্তিক সহমতে ভিন্ন কারো অন্য ধরণের ক্ষতি হলে আলোচনায় ফুলস্টপ দেওয়া উচিত।
মৌণতাও শক্ত প্রতিবাদ। মানুষের মতের সাথে সহমত হয়ে তাকে সাময়িকীর জন্য সন্তুষ্ট করা যায় কিন্তু যুক্তির গতিহারা বক্তার প্রতি ন্যায় আচরণ হবে যদি তাকে থামিয়ে দেওয়া হয়। সবাই সবজান্তা, সত্য কথক কিংবা স্বার্থের উর্ধ্বে জনস্বার্থের কথা বলে- এটা অন্ধভাবে বিশ্বাস করা যাবে না। যেখানে স্বাধীনভাবে প্রশ্ন করা যায় সেখানে সত্য থাকে! সততা ও সত্য সব সময় সুন্দর। জীবনের সব ক্ষেত্রে অনুসরণীয়। অথচ আমরা কী করি? অথচ কী করা উচিত ছিল?
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন