ভারতের বিরুদ্ধে মিছিল-মার্চের সুযোগে আপনারা কি আবার পাকিস্তানের সাথে প্রেম-পরকীয়া বাড়িয়ে নিচ্ছেন নাকি?
রাজু আহমেদ, কলাম লেখক।
যারা ভারতের বিরোধিতা করে সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং করেন তারা আরও বেশি বেশি এসব করেন। আপনাদের সাথে মাঠে-ময়দানে, কাগজে-কলমে কিংবা স্ব শরীরে-আত্মিকভাবে আছি। আপনাদের দাবির পক্ষে সংহতি প্রকাশ করছি। স্বাধীনতার পরে ভারত আমাদের যে ক্ষতি করেছে তা অপূরণীয়। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এবং তাদের এ দেশীয় দোসররা মিলে গোটা দেশটাকে পরনির্ভরশীল বিশেষ করে ভারত নির্ভর করে রেখেছে।
একটা স্বাধীন দেশের, যে স্বাধীনতার বয়স ৫৪ বছর, সে দেশের চিকিৎসা খাত, শিক্ষা সেক্টর, সাংস্কৃতিক অঙ্গন কিংবা অর্থনৈতিক মেরুদন্ড এমন হ-য-ব-র-ল হয়ে থাকতে পারে না। স্বাধীনতার এতো বছর বাদেও দেশের সার্বিক চিত্র ও চরিত্রের দিকে তাকালে আফসোস হয়। আমাদের কোথায় পৌঁছানোর কথা ছিল অথচ কোথায় আছি? কাজেই ভারতের বিরুদ্ধে তীব্র জনমত সৃষ্টি করা জরুরি। প্রয়োজনে ময়ূখকে ভাড়া করে তাকে নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে হবে! ভারত আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি করেছে।
ভারতের বিরুদ্ধে মিছিল-মার্চের সুযোগে আপনারা কি আবার পাকিস্তানের সাথে প্রেম-পরকীয়া বাড়িয়ে নিচ্ছেন নাকি? খবরদার- ভুলেও এই কাজ করতে যাবেন না। পাকিস্তান আমলের চব্বিশ বছরে তারা পূর্বপাকিস্তানে সাথে যে বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে, সেসব কোন সভ্য জাতির আচরণ নয়। শুধু মুক্তিযুদ্ধকালে যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ, মা-বোনদের ওপর বর্বরোচিত ধর্ষণ এবং নৃশংস নির্যাতন তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানে জনগণের ওপর করেছে- তা ত্রিশ লাখ বার জন্ম নিয়ে প্রত্যেকবার ক্ষমা চাইলেও পাকিস্তান ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য হবে না।
পাষাণ ইয়াহিয়া, কসাই ভূট্টো যে পাশবিকতা তৎকালীন পূর্ববঙ্গের বর্তমান বাংলাদেশের মানুষের সাথে চালিয়েছে, যত প্রাণ কেড়েছে কিংবা যত রক্ত জড়িয়েছে তা ক্ষমা করার ক্ষমতা শহীদদের পরবর্তী প্রজন্মের নাই। যারা তখনো বাংলাদেশ চায়নি এবং এখনো বাংলাদেশকে মন-মননে ধারণ করে না তাদের সাবধান হওয়া উচিত। পাকিস্তান প্রীতির ভূমি এইটা না। ধর্মে এক, দেশে এক অথচ তারা যে ঘৃণ্য-বর্বরোচিত আচরণ করেছে, যেভাবে গণহত্যা চালিয়েছে, যেভাবে নারীদের রেইপ করেছে কিংবা নারী-শিশুদের পুড়িয়ে মেরেছে- তা ক্ষমা করার ক্ষমতা প্রভূ মানুষকে দেয়নি। সুতরাং পাকিস্তান প্রেম দেখিয়ে কথা বলার সময় জিহ্বাকে লাগাম দিবেন।
পাকিস্তান কিংবা ভারতের সাধারণ জনতার সাথে আমাদের কোন শত্রুতা নাই। এদেশের-ওদেশের শান্তিকামী শান্তিকামী সম্পর্কে বন্ধু। তবে '৭১ আর '২৪- এর মতো সেই একই মনোভাব যে দেশের সরকার পোষণ করে তাদের সাথে কোন আপোষ কিংবা বন্ধুত্ব নাই। ঘটাবারও সুযোগ নাই। ভারতের প্রতি বিদ্বেষ বাড়ছে বলে পাকিস্তানকে কোলে টেনে নেওয়ার দুঃস্বপ্নে যারা বিভোর, তারা যাতে ৭১'এর ২৫ মার্চের কালো রাত, ১৪ ডিসেম্বরে এ দেশের সূর্য সন্তানদের হত্যাকান্ড এবং দীর্ঘ নয় মাসের রক্ত-লাশের ইতিহাস বিস্মৃত না হয়। এ লড়াই শুধু ভারতের আধিপত্যকামীতার বিরুদ্ধে নয় বরং একই সাথে পাকিস্তানের প্রেতাত্মাদের বিরুদ্ধেও। একজন হিন্দু কবির বিরুদ্ধে মান রক্ষার জন্য আরেকজন মুসলিম কবি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার মত ভুল ভারত-পাকিস্তানের প্রতি ভীতি এবং প্রীতি প্রকাশ করে দেখাবেন না। শান্তিতে থাকুন এবং থাকতে দিন।
'৭১ এর রক্তের ইতিহাস ভুলে যাইনি। '২৪ এর রক্তের দাগ এখনো রাজপথ থেকে শুকায়নি। আহত ছেলে-মেয়েগুলো এখনো হাসপাতালের বিছানায় কাতরায়। কাজেই যারা পাকিস্তানের দিকে প্রেম এবং ভারতের প্রতি প্রীতি পোষণ করেন- দু'দফাই সাবধান হোন। এই প্রজন্ম ভিন্ন রকমের ধাতুতে গড়া। যারা পড়ে-বোঝে, খুঁজে খুঁজে দেশের ইতিহাস জেনেছে, যার দেখে-শুনে প্রতিবেশীকে বয়কট করেছে- তাদেরকে জ্বী হুকুম জাঁহাপনার সাগরেদ ভাববেন না। পাকিস্তানের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক হোক, ভারতের সাথে সুসম্পর্ক থাকুক- কোন আপত্তি নাই। প্রজন্মও চাইছে প্রতিবেশীর সাথে সম্পর্ক এবং ন্যায়বিচার। কিন্তু খাতির করতে গিয়ে '৭১- এর কালো অধ্যায় ভুলে যাবো, বিগত কয়েক দশকের ভারতীয় আগ্রাসন জায়েজ করবো- এ মাটিতে হবে না। বৃথা চেষ্টা করে গণশত্রুতে পরিণত হওয়ার মত বোকামি কেউ যাতে না করে।
বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে এবং দেশের মর্যাদা ও আত্মনির্ভরতার স্বার্থে যেকোন ত্যাগে প্রজন্ম ঐক্যবদ্ধ। কিন্তু ইতিহাসের কালো অধ্যায় ক্ষমা করে দিয়ে, লাখ লাখ লোকের জীবনের দাম না চুকিয়ে কিংবা স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতের অন্যায্য আচরণ ভুলে গিয়ে কারো সাথে গলায় গলায় খাতির করার প্রজন্ম জেন- জি নয়। ইতিহাসের প্রত্যেকটি বাঁক মনে রাখা হবে। যে প্রজন্ম জীবন দিতে শিখেছে, যে প্রজন্ম চোখে চোখ রেখে অধিকার আদায় করার সাহস দেখিয়েছে কিংবা যারা কারো চোখ রাঙানির পরোয়া করে না- তাদের স্বপ্ন মাড়িয়ে অতীতের ক্ষত আলতু-ফালতু বুঝিয়ে কেউ ঢেকে ফেলবে? সম্ভব না। অপচেষ্টাও যাতে না হয়। সতর্ক থাকুন।
কাজেই বাংলাদেশের মাটিতে কাটিয়ে, এদেশের আলো-বাতাস ভোগ করে কেউ ভিন্ন দেশের সাথে পরকীয় করবে? সাবধান, হুঁশিয়ার! এমন দুঃসাহস কেউ দেখাতে যাবেন না। ভারত এবং পাকিস্তানের স্বার্থ যাদের কাছে বাংলাদেশের স্বার্থের চেয়ে বড় তারা মনে মনে তওবা করুন। নয়তো সীমানা পাড়ি দিয়ে ওপারে চলে যান। ভারতের শূন্যস্থান পাকিস্তান দিয়ে পূরণ করবেন কিংবা পাকিস্তানের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ভারতের কোলে উঠবেন- দু'টোই পরিত্যাজ্য। ভারত-পাকিস্তানের সাথে আমাদের সম্পর্ক হবে বাণিজ্যিক এবং সেটার মানদণ্ড হবে ন্যায্যতা এবং সমতা। দেশের স্বার্থ বিনষ্ট করে, সার্বভৌমত্ব ঝুঁকিতে ফেলে কাউকে বাড়তি কোন সুযোগ দেওয়ার উপায় নাই। সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে পুরাতন কিংবা নতুন- উভয় প্রকারের শত্রুকে বয়কট করতেই হবে। প্রজন্ম বোধহয় ইতোমধ্যেই দেশপ্রেমের শপথে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীরা- বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষার শপথের স্লোগান শুনতে পাও?
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন