কাউকে নিয়ে আমরা অহেতুক ভাবি, কাল্পনিক শত্রু তৈরি করে নিজের শান্তি খোওয়াই! কী দরকার?
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
সারাজীবন যদি শত্রুর তালিকা করি সেই তালিকা কত নামে থামবে? আপনার টেবিলে যে ডায়েরিটা আছে বড়জোর সেটার তিন পৃষ্ঠা? অথচ দুনিয়ায় কত শত হাজার লাখ কোটি লোক! আর আমি পড়ে আছি মাত্র দু'জন শত্রু নিয়ে। আপনি কেন আপনার ভালো সময়কে মন্দ লোকের কথা ভেবে নষ্ট করেন? শত্রুর দ্বারা আপনার ক্ষতি যদি এমন হয় যে আপনি শেষ হয়ে গেছেন, তবে ক্ষমা করতে বলছি না কিন্ত শত্রু যদি আপনাকে কিছু শেখায়, আপনাকে শক্ত করে কিংবা নতুন কোন প্রলোভনে আর যুক্ত হয়ে কান্না করতে হবে না- জীবনকে এটুকু পাঠ দিয়ে যায় তবে এখনই চোখ বন্ধ করুন এবং একশ্বাসে ক্ষমা করে দিন। তারপরেই আপনার সময় ভালো কাটতে শুরু করবে। মেঘ কাটতে দিতে হবে- হয় বৃষ্টি এনে, নয়তো সূর্যে জ্বেলে! অমানিশায় নিজেকে জড়িয়ে রাখতে নেই!
কাউকে নিয়ে আমরা অহেতুক ভাবি, কাল্পনিক শত্রু তৈরি করে নিজের শান্তি খোওয়াই! কী দরকার? যে আপনার জীবনের জন্য ডিস্টার্ব, ভালো থাকার পথে বাঁধা- ডালপালা ছেটে দিন। হালখাতা করে দেনাপাওনা মিটিয়ে ল্যাঠা চুকিয়ে নিন। যাকে ছাড়া বাঁচবো না বলে ভেবেছিল প্রেমিক- ছেড়ে ছুঁড়ে দু'জনেই আরো ভালোভাবে বেঁচে আছে এখন। কেউ কারো অনিবার্য পরিপূরক নয়। ভালো থাকার জন্য সম্পূরক হাজির হয়। নিজেকে শুদ্ধ রাখলে বিশুদ্ধ বাতাসের জন্য বিষ্যুদবারের অপেক্ষা করতে হবে না। নিজেকে সামলে নিন- শনিবারও আপনার হবে। যে দুনিয়ায় বন্ধুর অভাব নাই সে দুনিয়ায় শত্রুকে মনে রাখবো? আমার ঠেকা পড়েছে? নিশ্চয়ই আপনারও ঠেকা পড়েনি!
দিন শেষে একবার আয়নার সামনে দাঁড়াবেন, দু'মিনিট নিরালায় ভাববেন- যা করেছেন, যা বলেছেন- তা দায়িত্ব থেকে নাকি শোধ গ্রহনের প্রতিহিংসা থেকে। অযথা কাউকে কষ্ট দিয়েন না। অহংকার পরিহার করে, দম্ভকে পুড়িয়ে দিয়ে এবং মিথ্যাকে মুছে দিয়ে বুক চিতিয়ে চলুন। আপনাকে রুখবার শক্তি কারো থাকবে না। কেউ খোঁচাতে পারে, কেউ খোঁটাতে পারে- অহেতুক মনে হলেই ইগনোর করুন। শয়তানও উপেক্ষা সহ্য করতে পারে না! ফাঁদে পা না দিলে আপনাকে বেঁধে দমন করা সম্ভব নয়। সততার শক্তি ও সুঘ্রাণ আছে। নৈতিকতা নীতিবানকে রক্ষা করে। কখনো কাউকে না ঠকালে আপনিও ঠকবেন না- বিশ্বাস রাখুন। ভালো কাজ করুন, ভালোভাবে কথা বলুন- মানুষের মনে সম্মানে বেঁচে থাকবেন। এটা খুব জরুরি।
হাসিমুখ মানুষের সৌন্দর্য বহন করে। চিন্তার শুদ্ধতা, চরিত্রের পবিত্রতা বাহ্যিকতাকে ছাপিয়ে চারপাশকে আলোকিত করে। সত্যের পথ দেখায়। কেউ মন খারাপ করে দিলে তাকে উপেক্ষা করুন, এড়িয়ে চলুন। আপনি ঠিক- সেটা কেবল আপনার বাটখারা দিয়ে মেপেই সিদ্ধান্ত নিবেন না। ধর্মের কাঠি, আইনের লাঠি, সমাজের প্রথা এবং নিরপেক্ষভাবে উচিত-অনুচিত যাচাই করুন। ভুল আমারও হতে পারে- এই বোধ থাকা জরুরি। কাজেই দুঃখিত হলে, ক্ষমা চাইলে মানুষ মানুষের কাছে বড় হয়ে ওঠে; ছোট হয় না।
বন্ধুত্বের বৃত্তে যাতে বিশ্বাস থাকে। যাদের মধ্যে ক্ষতি করার চরিত্র চিহ্নিত হয় তাদেরকে এড়িয়ে চলা যৌক্তিক। শত্রুতা পুষে না রেখে ক্ষমা করে দিলে জীবনের আলে মঙ্গল আনে। প্রয়োজনে আর মিশলাম না, বললাম না মনের কথা তবুও আমার অভিশাপে কেউ যাতে না থাকে। কারো অভিশাপ-দীর্ঘশ্বাসে আমার নামও যেনো লেখা না থাকে। ভালো থাকার জন্য ইচ্ছাকে প্রাধিকার দিতে হবে। কারো মন রক্ষা করতে গিয়ে নিজেকে বিকিয়ে দেওয়া বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ হবে না। কেননা কারো মনোবৃত্তির লোভ রক্ষার সহ্য-ধৈর্য সুস্থ মানুষের, স্বাভাবিক বিবেকের থাকে না। সব সময় ভালো মানুষের থেকে সঙ্গ পাওয়া জরুরি। জীবন সুন্দর হোক।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন