ঢাকার উপকণ্ঠে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে রূপালী ব্যাংকের জিনজিরা শাখায় ডাকাতির চেষ্টায় গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে পুলিশ জানায়, সত্য আড়াল করতেই কিডনি রোগীর নাটক সাজায় ডাকাতরা। তারা স্বীকার করেছেন- শুরুতে পুলিশের জিজ্ঞাসবাদে কিডনি রোগীকে সহযোগিতার যে তথ্য দিয়েছিলেন তা বানোয়াট ছিল। তারা মূলত টাকা লুট করতেই ব্যাংকে হানা দিয়েছিল।
ব্যাংকে ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারী ছিল নিরব জানিয়ে ডাকাতদের একজন জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তার নেতৃত্বে এক মাস আগে ব্যাংক ডাকাতির ছক কষেন।
এ বিষয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, মাসখানেক ধরে ব্যাংক ডাকাতির ছক কষছিল ডাকাতরা। ব্যাংক তারা রেকিও করে আসে। তবে কিডনি রোগীর যে বিষয়টি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ওরা বলেছিল তার সত্যতা মেলেনি।
ডাকাতির ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী হলেন লিয়ন মোল্লা নিরব জানিয়ে ওসি আরো বলেন, আরাফাত ও সিফাতকে টোপ দিয়ে এই কাজে সে ব্যবহার করেছে।
তাদের মোটরসাইকেল ও আইফোন কিনে দেওয়ার কথা ছিল।
জানা গেছে, গ্রেপ্তার নিরব গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার কুমুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা কবির মোল্লার ছেলে। নিরব পেশায় একজন গাড়িচালক। অপর দুই কিশোরের বাড়ি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কদমতলী খালপাড় এলাকায়।
তাদের একজন একটি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী, আরেকজন মাদরাসার শিক্ষার্থী।
এদিকে চুনকুটিয়া জিনজিরা শাখায় ডাকাতির চেষ্টাকালে গ্রেপ্তার লিয়ন মোল্লা ওরফে নিরবের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এ ছাড়া একই সময়ে গ্রেপ্তার দুই কিশোরের জবানবন্দি নেওয়া হয়।
ডাকাতির ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন ব্যাংকের নিরাপত্তাকর্মী রতন বিশ্বাস।
তিনি জানান, ডাকাতরা নিজের রক্ষায় বোমা বানানো অভিনয় করেছিল, নানান হুমকি দিয়েছিল।
মাথায় পিস্তল সাদৃশ্য তাক করে রেখেছিল।
ব্যাংকের গ্রাহক বাবুল খান বলেন, ব্যবসার টাকা জমা দিতে বেলা ২টার দিকে তিনি রূপালী ব্যাংকের জিনজিরা শাখায় যান এবং ক্যাশ কাউন্টারে এক কর্মকর্তার কাছে টাকা জমা দেন। তিনি যখন টাকা গুণছিলেন, তখন মাস্ক ও চশমা পরে তিনজন ব্যাংকে ঢোকেন। তারা সঙ্গে করে একটি তালা নিয়ে এসেছিলেন। ঢোকার পরপরই তারা ওই তালা দিয়ে ব্যাংকে ঢোকার দরজা বন্ধ করে দেন এবং ব্যাংকের দুজন নিরাপত্তাপ্রহরীকে পিস্তলের ভয় দেখিয়ে মেঝেতে বসিয়ে রাখেন। ব্যাংকে তখন কর্মকর্তা-কর্মচারী, গ্রাহকসহ প্রায় ১৮ জন ছিলেন। তারা সবাইকে পিস্তলের ভয় দেখিয়ে এক জায়গায় নিয়ে মাথা নিচের দিকে উপুড় করে বসতে বলেন।
বাবুল খান বলেন, ওই তিনজন সবার মোবাইল নিয়ে নেন। কারো মোবাইলে কল এলে তারাই (তিনজন) রিসিভ করছিলেন। পরে তারা ব্যাংকের সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করে তার ছিঁড়ে ফেলেন। এ ছাড়া কিছু আসবাব ভাঙচুর করেন। এতে সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে দুজন পিস্তল তাক করে সবাইকে পাহারা দেন। বাকি একজন ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ব্যাগে ভরছিলেন। যখন তারা টের পান বাইরে অনেক মানুষ জড়ো হয়েছেন, তাদের বের হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেছে, তখন তারা ব্যাংকের পেছনের দিকে থাকা লোহার গ্রিল ভেঙে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু গ্রিল ভাঙতে পারেননি।
এদিকে রূপালী ব্যাংকে ডাকাতি চেষ্টার সময় গ্রেপ্তার আসামি লিয়ন মোল্লা ওরফে নিরবের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুনাইদ রিমান্ডের এই আদেশ দেন।
এ ছাড়া ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে অপর দুই আসামি আরাফাত (১৬) ও সিফাত (১৬)।
এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক হিরণ কুমার বিশ্বাস তাদের আদালতে হাজির করে লিয়ন মোল্লাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
এ ছাড়া অপর দুই আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন জানান তিনি। সেসব আবেদনের শুনানি শেষে আদালত লিয়নের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
অপরদিকে আরাফাত ও সিফাতের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। এরপর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন