খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উত্সব শুভ বড়দিন আজ

খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উত্সব শুভ বড়দিন আজ বুধবার। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ধর্মীয় আচার, প্রার্থনা ও আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করবে খ্রিস্ট ধর্মের মানুষ। এই দিন উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সেজেছে রাজধানীর গির্জাগুলো। পাশাপাশি অভিজাত হোটেলেও চলছে নানা রকম আয়োজন।

 

 

এই দিনে খ্রিস্ট ধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্ট ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের বেথেলহেম শহরের গোয়ালঘরে জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, খ্রিস্ট ধর্মের প্রবর্তক প্রভু যিশু ঈশ্বরের পুত্র। পৃথিবীতে শান্তির বাণী ছড়িয়ে দিতে, মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালনা করতে এবং সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচারের লক্ষ্যে প্রভু যিশুর পৃথিবীতে আগমন ঘটেছিল। দুই হাজার ২০০ বছর আগে ২৫ ডিসেম্বর আশ্চর্যজনকভাবে ঐশ্বরিক শক্তিতে মেরির কোলে জন্মগ্রহণ করেন যিশুখ্রিস্ট।

মানবজাতির প্রতীক্ষিত মুক্তিদাতা প্রভু যিশু ৩০ বছর বয়সে প্রকাশ্যে ধর্মীয় বাণী প্রচার শুরু করেন।

 

রাজধানীর গির্জা ও অভিজাত হোটেলও সেজেছে বর্ণিল সাজে। চারপাশে আলোকসজ্জা আর ক্রিসমাস ট্রির আলোর ঝলকানি। প্রতিটি গির্জার আঙিনায় তৈরি করা হয়েছে গোশালা, যেখানে খ্রিস্ট ধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্টের জন্ম হয়েছিল।

আর গোশালার পাশেই থাকবেন সান্তা ক্লজ, যিনি শিশুদের মধ্যে বিতরণ করবেন চকোলেট-কেক। প্রাঙ্গণজুড়ে করা হয়েছে বাহারি আলপনা। হোটেলের ভেতরে কৃত্রিমভাবে স্থাপন করা হয়েছে ক্রিসমাস ট্রি ও সান্তা ক্লজ।

 

বড়দিন উপলক্ষে খ্রিস্টান পরিবারে কেক তৈরি করা হবে, থাকবে বিশেষ খাবারের আয়োজন। কেনাকাটা থেকে শুরু করে কিভাবে দিনটি তারা রাঙিয়ে তুলবে, তা নিয়েও চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি।

রঙিন বাতি দিয়ে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো, বিশেষ প্রার্থনা, শিশুদের মধ্যে উপহার বিতরণ এবং স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ এই উত্সবের মূল অনুষঙ্গ। গির্জায় প্রার্থনা শুরু ও শেষের পর গাওয়া হয় বড়দিনের বিশেষ গান ও বন্দনাসংগীত। প্রিয়জনের সঙ্গে বড়দিন উদযাপন করতে অনেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাড়ি ফিরছে। এ ছাড়া দেশের অনেক অঞ্চলে কীর্তনের পাশাপাশি ধর্মীয় গানের আসরের আয়োজন করা হয়েছে। বড়দিনের প্রাক্কালে গতকাল মঙ্গলবার রাতে বিভিন্ন গির্জায় বিশেষ প্রার্থনাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সকাল থেকে বড়দিনের প্রার্থনা শুরু হবে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার এবং অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও স্টেশন দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। আজ সরকারি ছুটি।

 

জানা গেছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে এবার খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা গির্জার নিরাপত্তাব্যবস্থাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে। এরই মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, আইজিপি, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন খ্রিস্টান সম্প্রদায় এবং গির্জা কমিটির নেতারা। প্রতিটি পর্যায় থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। 

কাকরাইলের সেন্ট মেরিস ক্যাথেড্রাল চার্চের ফাদার আলবার্ট রোজারিও জানান, গত রাতেই কাকরাইল চার্চে বড়দিনের প্রার্থনা, গান ও আরতি শুরু হয়েছে। আজ সারা দিন অনুষ্ঠান চলবে। এর মধ্যে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গেও কুশলবিনিময় করবে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের একটি প্রতিনিধিদল। 

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় 
বড়দিন উপলক্ষে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি।

ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের সঞ্চালনায় খ্রিস্ট ধর্মের নেতাদের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশের ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মগুরু আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ, দ্য ন্যাশনাল ক্রিশ্চিয়ান ফেলোশিপ অব বাংলাদেশের সভাপতি বিশপ ফিলীপ পি অধিকারী, বাংলাদেশ ক্রিশ্চিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও, বাংলাদেশ ক্রিশ্চিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ইগ্লাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া এবং বাংলাদেশ খ্রিস্টান মহাজোটের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নির্মল ডি কস্তা।

বড়দিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আজকের দিনে আপনাদের সঙ্গে দেখা হলো, এতে আমি খুব খুশি হয়েছি। আমরা ধর্মীয় সংহতি চাই। সংখ্যালঘু, সংখ্যাগরিষ্ঠ—এই শব্দগুলো আমরা চাই না। এ দেশে আমরা সবাই এক পরিবার, সবাই মিলে একত্রে থাকব—এটা আমাদের স্বপ্ন। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য সবার এগিয়ে আসতে হবে।’  

শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন