দান: ধর্মীয় অনুভূতির কেন্দ্র থেকে মানবতার কল্যাণে! 

দান বাক্স মসজিদে নয়, হাসপাতালে থাকা উচিত

রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক। |

'দান বাক্স মসজিদে নয়, হাসপাতালে থাকা উচিত'- কথা কিঞ্চিৎ সত্য। তবে এরচেয়েও শক্তিশালী হতো যদি বলা যেতো, 'দান বাক্স মাজারে নয় বরং হাসপাতালে রাখা উচিত।' টাকা আসলে মৃত মানুষের নয়, জীবিতজনের প্রয়োজনে লাগে। বিপদগ্রস্ত এবং অভাবগ্রস্থের সাহায্য দরকার। কিন্তু সমস্যা একটা আছে, প্রকট সমস্যা! সেজন্যই হাসপালে নয় বরং মসজিদেই দানবাক্স লাগাতে হবে! 

 

মসজিদে কেন সেটা আগে বলি! দানের ক্ষেত্র তৈরি হয় মানবিক অনভূতি থেকে! ইমোশনাল ইমপ্যাথি ছাড়া দানের বোধ তৈরি হয় না। খেয়াল করেছেন, ভিক্ষা দেওয়ার আগে আমরা ভিক্ষুকের চেহারার দিতে তাকাই। ভিক্ষুককে ভিক্ষা পাওয়ার যোগ্য মনে হলে তবেই সাধ্যমত দু'টাকা-পাঁচটাকা দান করি। কখনো কখনো মাফও চাই! দানের প্রচ্ছন্ন উপকারিতার মত প্রচ্ছন্ন উদ্দেশ্যও থাকে। পূণ্য কিংবা পরকালীন বিনিময়! বিপদ কেটে যাওয়া, ভালো কিছু ঘটা কিংবা আশা পূরণ হওয়া- দানের লক্ষ্য। দান নিঃস্বার্থ হলেও স্বার্থ আসলে ত্যাগ হয় না! 

 

মসজিদ-মন্দির তথা ধর্মীয় অনুভূতি মানুষের মনকে নরম করে যতটা দান বের করতে পারে একজন ভিক্ষুক-রোগী সেটা কখনোই পারবে না। এখনো মানুষের মনে মানবিকতা বোধের চেয়ে ধর্মীয় চেতনা পোক্ত! এই দুই চেতনা আলাদা নয় তবে দ্বিতীয়টি প্রাধান্য পায়! কাজেই দান বাক্সগুলো মসজিদেই থাকুক কিন্তু সেখানে সংগৃহীত অর্থ যাতে রোগীর কল্যাণে ব্যয় হয়- সেই পদ্ধতির সুষ্ঠু ব্যবস্থা করতে হবে! মসজিদ-মাদ্রাসা পরিচালনায় কিছু মানবিক মানুষকে সংযুক্ত করতে হবে।পাগলা মসজিদে কোটি কোটি টাকা মানুষ মান্নত করে! এইরকম পাগলা মসজিদ-মাজারের সংখ্যা বাংলাদেশে একটি দু'টি নয়- হাজার হাজার। এখানে যত দান-খয়রাত করে, হাজার চেষ্টা করলেও হাসপাতালে মানুষ এতটাকা দান করবে না! কাজেই মান্নতের টাকা, দান-খয়রাতের টাকা যাতে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের কল্যাণে ব্যয় হতে পারে- সে ব্যবস্থা করা উচিত। এই আন্দোলন মসজিদকে কেন্দ্র করেই আরম্ভ হওয়া উচিত।

 

হাসপাতালে দানবাক্স থাকলে সমস্যা কি? তখন মানুষ মানুষ নির্ভর হয়র উঠবে। দানের টাকায় বাণিজ্য হবে। চোর-আত্মসাৎকারীর সংখ্যা বাড়বে! তত্ত্বাবধায়ক-ব্যবস্থাপকদের মধ্যে দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি পেখম মেলবে! অর্থ এমন এক টনিক যা দেখে সাধুর জিহ্বাতেও পানি টলমল হতে পারে! কাজেই মসজিদ-মন্দির এবং মাদ্রাসাগুলোকে মানবসেবার সেন্টার হিসেবে গড়ে তোলা হোক। মানুষ এসব স্থানকে পবিত্র ভেবে দান করবেই। সেই দানের টাকা যাতে ব্যবসায় বিনিয়োগ হওয়ার বদলে অসহায় শিশুর শিক্ষায়, অভাবগ্রস্থের অন্নে এবং অসুস্থ রোগীর চিকিৎসায় ব্যয় হয়। বাংলাদেশে দানের টাকা সংগ্রহ করে রমরমা বাণিজ্য ঘটে! এটা বন্ধ হওয়া দরকার। সবকিছু সরকার  নির্ভর না থেকে বরং সমাজের সচেতন মানুষকে হাল ধরতে হবে। 

 

দানের টাকার উত্তম ব্যবহার হলে দানকারীর সৎ উদ্দেশ্য সফল হয়। কঠিন রোগে ভুগতে থাকা মানুষের রোগমুক্তি ঘটলে তার দোয়াতে কাজ হয়। কোন অনাথের শিক্ষা নিশ্চিত হলে, কোন ইয়াতিম আশ্রয় পেলে কিংবা ক্ষুধার্তকে অন্ন দিলে- সে দোয়া বিফলে যায় না। দানের অভ্যাসের মত ভালো অভ্যাস আর একটাও নাই! তবে দানের অর্থ যাতে মহৎকর্মে উৎসর্গ হয় সেটুকু নিশ্চিত হঢে দান করা জরুরি। আপনার দান নিয়র কেউ নেশা-পানি ধরছে কি-না,  কেই বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে কিনা- সে সংবাদ আপনার কাছে থাকা উচিত। যোগ্য জায়গায় একটাকা দান করা অহেতুক স্থানে কোটি টাকা ডোনেট করার চেয়ে শ্রেয়।

 

মোটকথা, দান যদি মহৎ উদ্দেশ্যে এবং সঠিক ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত হয়, তবে তা শুধু দরিদ্র ও অসহায় মানুষেরই নয়, পুরো সমাজের কল্যাণে কাজে লাগতে পারে। মানবতার সেবায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুত্বকে কাজে লাগিয়ে দানের সংস্কৃতিকে আরও কার্যকর ও ফলপ্রসূ করা সম্ভব। এই প্রচেষ্টার মাধ্যমেই আমরা মানবতার প্রকৃত উন্নতি নিশ্চিত করতে পারব।

 

 

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন