দুঃখ নিলে কি বেতন বাড়ে?

তারপরেও যদি কেউ যত্ন করে, বিশ্বাস করে এবং ভরসা দেয় তবে তাঁর সামনে ফর্সা মনে থেকো---

রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।  

জীবনটা শেষ পর্যন্ত কার সাথে কাটবে, কীভাবে হাঁটবে- এমন দুশ্চিন্তায় বেলা হেলানো ঠিক হবে না। আমার জীবনটা আমার সাথে কাটবে- এটুকুতে অন্তত সন্দেহ নেইতো? সুতরাং নিজের জন্যই জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষণকে রাঙাতে হবে, সাজাতে হবে। কে আসলো, কে থাকলো আর কে চলে গেলো?- এটা জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়ের হিসাব। আমি আমায় কেমন রেখেছি- এই প্রশ্নের উত্তরে আমায় আমিকে সন্তুষ্ট করতেই হবে। যদি মন খারাপ করে বসে থাকি, যদি কাঁদি কিংবা হাসতে ভুলে গিয়ে হতাশায় ডুবি- আমাকে উদ্ধারের কেউ যদি নাও থাকে তবুও আমায় বাঁচতে হবে না? 

 

শখগুলো কার জন্য তুলে রাখছি? কে আমায় পথ দেখিয়ে একসাথে হাঁটবে? যে মেয়েটাকে মা বুঝিয়েছে, 'বিয়ের পরে বরের সাথে ঘুরবি'- তার বর যদি ঘরকুনো হয় তবে সে মেয়েটার দুঃখ কেমন? যে ছেলেটা ভবিষ্যতের লোভে তার শৈশব হারিয়েছে তার দুঃখ কী দিয়ে মাপবেন? সম্মুখের সময়টুকু উপভোগ করতে হবে। কাল বলে জীবনে কিছু নাই। সবার জীবনে আগামীকাল যে কাল হয়েও আসতে পারে। তাইতো আজকের রঙটুকু আজকেই মাখো। কে কী বললো, কে পিছু টানলো- উপেক্ষা করে লক্ষ্যে ফোকাস করো। 

 

সফলও হতে চাও অথচ সবাইকে নিয়ে চলতে চাও- পারবে না। সবার কথা কানে তুললে তোমার পথ আগাবে না। পাওয়ার জন্য কিছু না কিছু হারাতেই হবে। ভালো ফলাফলের জন্য ঘুম হারাতে হবে। জীবনে সফল হতে চাইলে অলসতা হত্যা করতে হবে। তোমার অর্জন একান্তভাবেই তোমার। অন্যরা বাহবা নিতে ও দিতে পারে কিন্তু অবস্থান দখল করতে পারে না। সুখের জন্য ছাড় দাও তবে ছেড়ে দিও না। যতদিন বাঁচার ততদিন মেরুদণ্ড সোজা করেই বাঁচতে হবে। যারা নিজেদেরকে বেচে দিয়েছে তারা সম্পদ পেতে পারে কিন্তু সম্মান পায়নি। তোমার সম্পদ না থাকুক কিন্তু সম্মানের পথে একচুলও ছাড় নয়। মানুষ যাতে পাছেও তোমার নামে নিন্দে করতে সংকোচবোধ করে- এটুকু কামাই করে যেও।

 

স্বার্থের জন্য, শোধ-প্রতিহিংসার জন্য কাউকে অবহেলা করবে না। তবে স্বপ্ন পূরণের পথে তোমার মধ্যে যাতে কম্প্রোমাইজের বোধ ভর না করে। সেক্রিফাইজ করবে তবে নিজেকে বিকিয়ে দিয়ে নয়। মাথা ততখানি নত কর যতখানির কদর-সম্মান অপরপক্ষে বোঝে। তুমি নত হলে, বিলিয়ে দিলে আর অন্যপক্ষ তোমায় ব্যবহার করেই গেলো- এটাকে তবে বুদ্ধিমানের আচরণ বলা গেলো না। যে সম্মান পায় তাকে সম্মান করো। তবে অসম্মানিত হও- এমন কারো কাছে যেও না। প্রয়োজন থাকলেও ইগনোর করো। পেটে ক্ষুধা রাখবে, পকেট ফাঁকা থাকবে তবুও কারো কৌতুকময় করুণা গ্রহণ করো না।

 

নিজের জন্য যৌক্তিকভাবে বাঁচা গেলে সে বাঁচার যথার্থতা অপরের জন্যও হবে। তুমি যখন তোমার স্বার্থ উপেক্ষা করে অন্যের স্বার্থ পূরণের জন্য দৌঁড়াও তখন আসলে কোন স্বার্থই পুরোপুরি পূরণ হয় না। তুমি গিভার- এটা তোমার মহৎ ও বৃহৎ গুণ কিন্তু কোন টে'কারকে জীবনের গল্পে গ্রহন করবে না। নেওয়াই যার অভ্যাস তাকে সন্তুষ্ট করা সহজ নয়; অসম্ভব। চাহিদার অনন্ত গল্পে নিজেকে ভেজাবে না। সুখী মানুষেরা অল্পে তুষ্ট থাকে এবং দুষ্টদের খপ্পরে হারায় না। কারণে কিংবা অকারণে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ না তুললে খুব ভালো থাকবে। 

 

কোথাও অধিক প্রত্যাশা পুষবে না। প্রত্যাশাহীন যা পাবে সেটা বোনাস। কাউকে সাহায্য করার হলে সেটা বেনামে করার চেষ্টা করবে। কখনোই কারো বদনাম করবে না। নিজের কল্যাণের জন্য হাসিমুখ বজায় রাখতে কৃপণতা করো না। তুমি যদি তোমার অধিকার ঠিকঠাক বোঝ তবে সবার অধিকার বুঝবে। যে জীবনটা তোমার সে জীবনটাকে তুমি নির্ভর ও নির্ভয় রেখো। কেউ তোমায় ভালো রাখবে সে আকাঙ্ক্ষায় আফসোস বাড়াবে না।

 

তারপরেও যদি কেউ যত্ন করে, বিশ্বাস করে এবং ভরসা দেয় তবে তাঁর সামনে ফর্সা মনে থেকো। চিন্তায় ভালো থাকা মানুষগুলো বাহ্যিকতায় পবিত্রতা বহন করে। আমি আমার জন্যই বাঁচি। আমার বাঁচার মাঝেই আরও অনেকে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকে। জীবন সুন্দর- জীবন যত্ন পেলে। জীবন আরও বেশি সুন্দর নিজেই নিজের কেয়ার নিলে।

 

 

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন