ওয়াক্তমত নামাজ শেষে এসে পরের আইল ঠেলা, রোজামুখে মিথ্যা বলা কিংবা ঘুষের টাকায় দান-খয়রাত করা-
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট।
মানুষ ইবাদতের বাহ্যিক রূপ দেখেছে। ধর্ম মেনে নামাজ-রোজা করেছে। ইবাদতের অন্তর্নিহিত রূপটা আরও সুন্দর। সেখানে মানুষকে কষ্ট দেওয়া যায় না। সত্য কথা বলতে হয় এবং নিয়ম মেনে চলতে হয়। কারো অধিকার হরণ করা যায় না কিংবা কাউকে ঠকানোর তো প্রশ্নই আসে না। অন্যায্যভাবে কেউ ব্যথা পায় এমন আচরণ থেকে বিরত থাকতে না পারলে মসজিদের সিজদাহ আর মন্দিরের পুজো- কালক্ষেপণের কারণ হবে। সুতরাং ধর্মনীতির বারণগুলো কঠোরভাবে মানতে হবে। হাতের অনিষ্ট থেকে, জিহ্বার নগ্নতা থেকে কিংবা চিন্তার কুমন্ত্রণা থেকে যদি অন্যমানুষ নিরাপদ না থাকে তবে দান অর্থ অপচয়ের ব্যাপার হতে পারে। মানুষ কারো থেকে দু'বেলা খাবার আশা করার চেয়ে ভালো আচরণ বেশি প্রত্যাশা করে। যার যেটুকু সম্মান সেটুকু পেলে, যার যেখানে অধিকার সেখানে সে স্বাধীন থাকলে- বুঝতে হবে সমাজে ধর্মানুসারী কর্ম বলবৎ আছে।
ওয়াক্তমত নামাজ শেষে এসে পরের আইল ঠেলা, রোজামুখে মিথ্যা বলা কিংবা ঘুষের টাকায় দান-খয়রাত করা- শাস্তির কারণ হবে। একজন ধর্ম মানে এবং অধর্মও করে- তার শাস্তি দ্বিগুণ। কাউকে অহেতুক হয়রানি করলে, কুপরামর্শ দিলে কিংবা হক ঠকালে- মওলা বাহিরের ইবাদত দেখে তাকে ছাড় দেবেন না। প্রথম পরীক্ষা অন্তরের হবে। সেখানে উৎরে গেলে বাকি হিসাবনিকাশ সহজ হবে। কারো উপকার না করুণ তাতে ক্ষতি নাই কিন্তু কারো ক্ষতি করেছেন- শাস্তি অবশ্যম্ভাবী হয়েছে। পতনের পথ অনিবার্য হবেই হবে। মানুষকে কষ্ট দেওয়া- কথা কিংবা কাজে, মানুষকে আঘাত করা- হাতে কিংবা পায়ে, মানুষকে হয়রানি করা- সুদিনে কিংবা দুর্দিনে- একচুলও ছাড় মিলবে না। প্রত্যেক অন্যায় আচরণের কৈফিয়ত দুনিয়ায় শুরু হবে এবং আখেরাতে চূড়ান্ত ফয়সালা হবে। নসীবে দন্ড লেখাই আছে।
ক্ষমতা থাকলেই তা দেখানো ঠিক নয়। কোন মানুষ যদি কোন মানুষের সামান্যতম হকও নষ্ট করে তবে সেটার খেসারত কত মর্মান্তিক হতে পারে, সেসবের আলামত দুনিয়াতে কিছু কিছু দেখা যায়। আখেরাতে আলবাত দায় চুকাতে হবে। ফেরত দিতে হবে আমল থেকে। দুর্বল বলে কাউকে পদাঘাত করলে, ষড়যন্ত্র করে কারো হিস্যা দখলে রাখলে কিংবা কাউকে তার ন্যায্য প্রাপ্য না দিলে- কায়িক ইবাদত শূন্যে ঝুলতে থাকে। যতক্ষন হকদার হক বুঝে না পায় ততক্ষণে আসমানি সুকুন বান্দার সংস্পর্শে আসে না। কাউকে ঠকানো, কাউকে আটকানো কিংবা কাউকে অন্যায়ভাবে ঠেকানো- ঐশ্বরিক সত্তার অপছন্দনীয় আচরণ। কাজেই ধর্মের বাহ্যিক আমল ততক্ষণে কারো ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ হবে না যতক্ষণে অভ্যন্তরীণ স্পৃহা পবিত্র না হবে।
ক্ষমতার মসনদে বসে অতীত ভুলে যেতে নাই। মানুষ দুর্বল অবস্থায় যাত্রা শুরু করেছিল আবার সে দুর্বলতার পরিণতিতে পতিত হবে। সময় আবর্তিত হয়। মানুষ যাতে অতীত স্মরণ রাখে এবং ভবিষ্যতে সহনশীলতা দেখায়- বারবার তাগিদ এসেছে। দু'দন্ডের ক্ষমতা পেয়ে কেউ ধরাকে সরা জ্ঞান করতে পারে তবে প্রত্যেক মুহূর্তের কৈফিয়ত দিতেই হবে। কারো আচরণে কেউ যদি অনৈতিকভাবে পিঁপড়ের কামড়ের মত ব্যথা পায় তবে সেটাও হিসাব ছাড়া যাবে না। কত মানুষ ভাববে সে মু'মিন, সিজদাহে কপালে দাগ থাকবে এবং ধর্মের বাহ্যিকতাও মানবে কিন্তু মনের মধ্য দম্ভ-হিংসা পুষেছিল, মানুষ ঠকিয়েছিল গোপনে- পার পাওয়া মুশকিল। যার হক নষ্ট হয়েছে সে যতক্ষণে ক্ষমা না করবে ততক্ষণে খোদাও আসামীর মুখপানে চাইবে না।
মানুষকে ব্যথা দেওয়া পরিহার করতে হবে। ক্ষমতা দেখানোর চেয়ে ক্ষমতা হজম করার সৌন্দর্য অনেক বেশি। সুযোগ পেলে বকা দেওয়ার চেয়ে, দোষ ধরার চেয়ে ক্ষমা করা মঙ্গলের। কেউ ভুল করলে তাকে গোপনে সাবধান করে শোধরাতে সহায়তা করতে হবে। কথা কিংবা আচরণে কেউ দুঃখ পেলে তার কাছে ক্ষমা প্রার্থণা করতে যত বিলম্ব হবে পাপের বোঝা তত বৃদ্ধি পাবে। স্বভাবে-আচরণে মানুষ হওয়া খুব জরুরি। সম্পদ কত আছে তা দিয়ে মানুষের সম্মান বাড়ে না। ভয় দেখিয়ে অন্তরে জায়গা পাওয়া যায় না। যে মানুষ যত বিনীত, যে মানুষ যত শুদ্ধ সে তত পবিত্র আত্মার ধারক। যে মানুষের চিন্তায় অন্যের উপকার থাকে, সমাজের কল্যাণ থাকে এবং রাষ্ট্রের উন্নতি থাকে- সে বড় হয়। সময়ই ভালো মানুষকে বড় করে তোলে। সুতরাং কারো কষ্টের কারণ না হয়ে বাঁচার শপথ করতে হবে। কারো হক মেরে খাওয়ার চিন্তা জাগার আগে মরন যাতে হয়- সবার এমন প্রার্থনা প্রার্থী হওয়া উচিত।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন