২০০৬ সালে ১০ বছর বয়সী সন্তান ডলার মাহবুবকে দেশে রেখে মালয়েশিয়া পাড়ি জমান চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার বাসিন্দা রবিউল করিম। মালয়েশিয়া যাওয়ার কিছুদিন পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলেন। এরপর একাধিকবার চেষ্টা করলেও কাগজ-পত্রের নানা জটিলতায় দেশে ফিরতে ব্যর্থ হন রবিউল। ফলে বাবার স্নেহ-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয় রবিউল করিমের দুই ছেলে ও এক মেয়ে।
অবশেষে আজ বৃহস্পতিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌছান রবিউল। সেখানে তৈরি হয় আবেগঘন পরিস্থিতির।
ব্র্যাক মাইগ্রেশন সেন্টারের সহযোগিতায় ১৮ বছর পর দেশে ফেরেন রবিউল। বাবাকে পেয়ে সন্তানরা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করেন।
এ সময় সন্তানদের কাছে পেয়ে রবিউল করিমও কান্নায় ভেঙে পড়েন।
রবিউল করিম বলেন, ‘আমার সন্তানদের কাছে পেয়ে আমার খুবই ভালো লাগছে। ১৮ বছর পর দেশে আসতে পারলাম। সন্তানদের দেখতে পেলাম।
তাদের জড়িয়ে ধরতে পারলাম। এ অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।’
কেন এতদিন আসতে পারেননি, জানতে চাইলে রবিউল বলেন, ‘আমি বিভিন্নভাবে আসার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু অবৈধ হয়ে যাওয়ার কারণে আমি আসতে পারিনি। বাংলাদেশ হাইকমিশনসহ বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছিলাম।
তারা নানা ধরনের কাগজ চেয়েছিল। কিন্তু সেই কাগজগুলো জোগাড় করতে পারিনি বলে আসতে পারিনি।’
তিনি আরো বলেন, ‘২০০৬ সালে আমি মালয়েশিয়া গিয়েছিলাম। সে সময় আমাদের এলাকার এক দালাল নুর ইসলামের মাধ্যমে গিয়েছিলাম। কলিং ভিসায় গিয়েছিলাম। সেখানে যাওয়ার পর আমার মেডিকেল আনফিট দেখায়। মেডিকেল আনফিট হওয়ার কারণে তারা আমার পাসপোর্ট রেখে দিয়ে আমাকে একটা ফটোকপি ধরিয়ে দেয়। সেটা আমি হারিয়ে ফেলি। এরপর আমি একাধিকবার পাসপোর্ট করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারিনি।’
রবিউল করিমকে জড়িয়ে ধরে অশ্রুভরা কণ্ঠে সন্তান ডলার মাহবুব বলেন, ‘আমার বাবা একজন বিদেশি ও পারিবারিক যোদ্ধা। আমার বাবা দীর্ঘ ১৮ বছর পর নিজ দেশের মাটিতে ফেরত আসতে পেরেছেন। এর জন্য আমি ব্র্যাকের প্রতি কৃতজ্ঞ। তাদের সহযোগিতা ছাড়া আমি আমার বাবাকে কখনোই ফেরত আনতে পারতাম না। সব সময় মনে একটাই প্রশ্ন ছিল বাবা কি সত্যিই আর ফিরে আসবে? আজ সেই প্রশ্নের উত্তর মিলল। বাবাকে কাছে পেলাম।’
দীর্ঘদিন বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে ও বহু জায়গায় কড়া নেড়ে কোনো সফলতা পায়নি জানিয়ে ডলার বলেন, ‘আমি প্রথমে আমাদের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় যায়। কিন্তু আমার বাবার যেহেতু পাসপোর্ট এবং ভোটার আইডি কার্ড কিছু ছিল না, সেজন্য তারা আমাকে কোনো সহযোগিতা করতে পারেনি। তারা বলেছিল মন্ত্রণালয় কিংবা হাইকমিশন থেকে লিখিত ডকুমেন্ট পেলে তারা সহযোগিতা করতে পারবে। এরপর আমি প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় যোগাযোগ করলে তারা আমাকে আবেদন করতে বলে। আমি আবেদন করলে তারা আমাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও একটি আবেদন করতে বলে। এরপর আমি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আবেদন করি। আবেদন করার ৩ দিন পর তারা মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনে সেই আবেদন পাঠায়। কিন্তু হাইকমিশন থেকে কোনো সহযোগিতাই আমার বাবা পায় না। এরপর বাসার সবাই খুব চিন্তায় পড়ে যায়। সবাই ভেঙে পড়ে। তখন এলাকার এক ভাইয়ের মাধ্যমে ব্র্যাকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়।’
ব্র্যাক কিভাবে রবিউল করিমকে ফিরিয়ে আনতে পারল, জানতে চাইলে ব্র্যাক মাইগ্রেশন সেন্টারের ডেপুটি ম্যানেজার শায়লা শারমিন বলেন, ‘রবিউল করিমের বড় ছেলে ডলার মাহবুব ৩ মাস আগে তার বাবাকে ফিরিয়ে আনার জন্য ব্র্যাক মাইগ্রেশন সেন্টারে যোগাযোগ করেন। এরপর আমরা তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে আবেদন করি। এর পাশাপাশি সেখানকার প্রবাসী সাংবাদিক বাপ্পি কুমার দাস একাধিকবার মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগ ও বাংলাদেশ হাইকমিশনে যোগাযোগ করেন। অবশেষে ২০ দিন আগে রবিউল করিমের নামে ট্রাভেল পাস ইস্যু হয় এবং আমরা আজকে তাকে দেশে ফিরয়ে আনতে সক্ষম হই।’
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন