সচিবালয়ে নজিরবিহীন আগুনের ঘটনাকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছেন না অনেকেই। এর পেছনে দেশবিরোধী যড়যন্ত্রের আভাস পাচ্ছেন অনেকে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের ৫৮৭টি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা কেপিআইয়ের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এর মধ্যে সচিবালয় ছাড়াও রয়েছে বঙ্গভবন, গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জাতীয় সংসদ, বিমানবন্দর, বিটিভি ও কারাগার।
সচিবালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আগুন লাগার পর সতর্কতার অংশ হিসেবে কেপিআইয়ের নিরাপত্তা আগের চেয়ে জোরদার করা হয়েছে। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ তথ্য জানা গেছে।
এগুলোর নিরাপত্তার কার্যক্রম দেখভাল করার জন্য রয়েছে সরকারের একটি শক্তিশালী নীতিমালা কমিটি। মূলত একটি দেশের কেপিআইয়ের নিরাপত্তাব্যবস্থার ওপর সামগ্রিক জাতীয় নিরাপত্তা অনেকাংশে নির্ভরশীল।
এ কারণে ১৯৯৭ সালে ইংরেজিতে প্রণীত কেপিআইয়ের নিরাপত্তাবিষয়ক নীতিমালাটি বাংলায় হালনাগাদ করা হয়, যা কেপিআই নিরাপত্তা নীতিমালা ২০১৩ নামে পরিচিতি পায়। কেপিআইয়ের নিরাপত্তাসংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি তদারকি বাড়াতে হবে। যেসব কেপিআইয়ের সীমানা নির্ধারণ করা নেই, সেগুলোর সঠিক সীমানা নির্ধারণ করে দ্রুত প্রাচীর দিতে হবে।
আগের দেওয়া যেসব সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি সেগুলো ত্বরিত বাস্তবায়ন করতে হবে।
কেপিআইয়ের আশপাশে অবৈধ দখলদাররা যেসব স্থাপনা নির্মাণ করেছে সে বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। সব কেপিআইকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার পাশাপাশি তার মেমোরি কমপক্ষে এক বছর সিডিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে। স্থাপনার নিরাপত্তায় পুরো এলাকা ফ্ল্যাড লাইট অথবা সার্চ লাইট দিয়ে আলোকিত করে রাখতে হবে। নষ্ট সিসি ক্যামেরা চালু ও জনবল বাড়াতে হবে।
সব কেপিআইয়ের জন্য নিরাপত্তা কমিটি গঠন করতে হবে।
যেসব কেপিআইয়ে কমিটি নেই সেখানে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। কেপিআই নীতিমালা অনুযায়ী নিয়মিত এসংক্রান্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠাতে হবে। প্রাত্যহিক ঘটনা নোট বইয়ে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
যেখানে নিরাপত্তাব্যবস্থা তুলনামূলক দুর্বল, সেখানে দ্রুত প্রহরা চৌকি স্থাপন করতে হবে। বিশেষ প্রয়োজনে কোনো দর্শনার্থী এলে তাদের নাম-ঠিকানা, আসা ও যাওয়ার তারিখ, সময়, উদ্দেশ্য ইত্যাদি বিস্তারিতভাবে লিপিবদ্ধ ও রেজিস্ট্রারে সংরক্ষণ করতে হবে। এতে কোন সময় কারা এলো বা গেল এর একটি পরিসংখ্যান থাকবে, যা প্রয়োজনীয় মুহূর্তে কাজে লাগতে পারে। প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়ির চতুর্দিকে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করতে হবে, আলোযুক্ত স্থানে দুষ্কৃতকারীরা সহজে প্রবেশ করতে চাইবে না।
সম্ভব হলে প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে সিসিটিভি লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সিসিটিভির ফুটেজ থেকে যেকোনো অপরাধীকে পুলিশের পক্ষে শনাক্ত করা সহজ হবে। যানবাহন তল্লাশির জন্য ভেহিকেল সার্চ মিররের ব্যবস্থা করা আবশ্যক। ভেহিকেল সার্চ মিরর যেকোনো বড় ধরনের বিপদ থেকে আপনাকে রক্ষা করতে সহায়ক হবে। প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনাগুলোর প্রবেশ মুখে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে লাগেজ স্ক্যানার স্থাপন করতে হবে। পর্যাপ্তসংখ্যক প্রাইভেট সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ করতে হয়। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সশস্ত্র আনসার নিয়োগ করতে হবে। কিন্তু এই নীতিমালা মেনে কেপিআইয়ের সুরক্ষার ভগ্নদশাটিই ফুটে উঠেছে সচিবালয়ে আগুন লাগার মধ্য দিয়ে।
তবে নতুনভাবে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব মো. গোলাম মোছাদ্দেক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সচিবালয়ের ঘটনার পর আমরা মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছি। শেরেবাংলা থানার সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের একটি টিম আলাদাভাবে টহল দেবে। আগে দুই গেটে পুলিশ থাকলেও সেটা বাড়াতে বলেছি।’
একইভাবে নিজেদের মনিটরিং বাড়িয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, এনবিআর ভবনের পুরোটাই সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে মনিটর করা হয়। সাধারণত এখানে কোনো দুর্ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করলে তা সফল হবে না। এ ছাড়া অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ও আগুনের ধোঁয়া উঠলেই সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার অ্যালার্মের মাধ্যমে সতর্ক হয়ে যাবে সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা ঠিক আছে। কারণ নিরাপত্তা কমিটি নিয়মিত সব নিরাপত্তা সরঞ্জাম পর্যবেক্ষণ করে। তারা সব সময় সক্রিয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিটি ফ্লোরে (তলা) অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার ও পাউডার রাখা আছে। একাধিক সিঁড়ির ব্যবস্থাসহ আগুন নিয়ন্ত্রণের সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। এক কথায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিরাপত্তার জন্য যা যা দরকার, সবই আছে।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন