আপন-পরের ফারাকে হৃদয়ের রং বদলায়! 

প্রিয় মানুষের বিশ্বাসঘাতকতা সহ্য করা কঠিন

রাজু আহমেদ,  প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট।  

মনের দুঃখের কারণ আপন মানুষ। উড়ে এসে কেউ কারো জীবনে দুঃখ জুড়ে দিতে পারে না। কেননা যে আমার স্বজন-সুজন নয় তাকে পাত্তা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। যে থাকে হৃদয়ের সাথে মিশে, ওঠে-বসে একসাথে কিংবা দুঃখ-সুখে শোনায় গল্প- সে যখন কলিজায় চাবুক মারে তখন কষ্টটা তীব্রভাবেই লাগে। মানুষ অল্প দুঃখে মানুষের পর হয় না। কম আঘাতে কারো অনুভূতি শূন্য হয়। যত্ন করার মানুষগুলো যখন ভালোবেসে মনটা ভাঙে তখন দুঃখের গাঙে তীব্র তুফান আঙে। তখন বাঁচার ইচ্ছা ক্রমশ মিইয়ে আসে। জীবনের রঙ-রসের বেলা হেলে পড়ে অনায়াসে। 

 

যে ভাবনায় থাকে, যার বসত থাকে বিশ্বাসে- তেমন কোন কাছের মানুষ, আপন মানুষ আশার ঘরটা ভাঙ্গে। হৃদয়ে ঠাঁই না পেয়ে, দূর্বলতা না জেনে কেউ আসলে কাউকে মন-মগজে ধ্বসিয়ে দিতে পারে না! দূরের মানুষকে কোন ভয় নাই। পর মানুষের আঘাতে পরাণ পোড়ার বেদনা জাগে না। যাকে আপন ভাবেনি হৃদয় তাকে মন ভাঙার দায়ও দেয়া যায় না। যে ভাবনাতেই নাই সে শীত-গ্রীষ্মের মত আসে যায়। যে ভাবনাতে থাকে সে তো ত্বকের মত জীবনের সাথে মিশে থাকে। তাকে শীতের শিশির থেকে রক্ষা করতে হয়, গ্রীষ্মের রূক্ষতা থেকে সুরক্ষা দিতে হয়। ত্বকের মতোই মতের মানুষ, মনের মানুষ আপন হয়ে ওঠে। তাদেরকে ঘিরে ভাবনা থাকে। ঘরের মানুষ দুঃখ দিলে অন্তর অশ্রুপাতের বাণ ডাকে।

 

কাকে ভয়? পর মানুষকে ভয় নাই। দূরের মানুষের জন্য আকুলিবিকুলি ভাবনাও নাই। তারা থাকার জন্য আসে না। প্রয়োজন ফুরালেই দূরে সরে যায়। স্বার্থ চুকালে টা টা বাই বাই বলে। কিন্তু আপন মানুষ, কাছের মানুষ? সে পাওয়ার জন্য বায়না ধরুক, সুখের লাগি ঝগড়া করুক। তাও কখনো বিশ্বাস না ভাঙুক। রক্তের কেউ, পরিবারের কেউ কিংবা আপন কেউ যখন স্বার্থের জন্য সম্পর্ককে ছুড়ি দিয়ে ব্যবচ্ছেদ করে তখন অসীম দুঃখ হয়। দূরের মানুষ স্বপ্নে আসে না বরং স্বার্থে আসে। কিন্তু কাছের মানুষ? স্বার্থে নয় বরং স্বপ্নে বাস করে? প্রিয়জনের আসন পেয়ে সে যেন দুঃশাসন-অপশাসন প্রতিষ্ঠা না করে। 

 

সংসার-সম্পর্কের প্রতি যে অনাস্থা, পরস্পরের প্রতি টানের যে অভাব সেটা আত্মতারের হেরফেরে দূরের মানুষ করতে পারবে না। দূরের মানুষ রাতের ঘুম কেড়ে কাঁদাতে পারবে না। পারবে না একপশলা দুঃখ দিতে। দূরের মানুষ একা একা বাঁচার শিক্ষা দিতেও পারবে না! যে শত্রু বাহিরের সেদিকে সজাগ দৃষ্টি থাকে। সেখানে সচেতন হয়ে মিশে, দূরত্ব রেখে বসে। কিন্তু যে মিশে গেছে হৃদয়ের সাথে, যার সাথে মিলে গেছে গন্তব্য কিংবা যাদের জন্য বেঁচে থাকা তারা যদি চোখ উল্টায়, পিঠ দেখায় কিংবা বিশ্বাসের ঘরে করে ডাকাতি তবে বাঁচার স্বাদ থাকে না। আপন মানুষের তীর্যক মন্তব্যে সুখ বলি হয়ে যায়। তখন বরং জীবনকে যন্ত্রণার ভান্ডো মনে হয়। আয়ু ফুরালেই বরং বাঁচি- ভাবনাতে ভর করে!

 

প্রিয় মানুষের বিশ্বাসঘাতকতা সহ্য করা কঠিন। আপন মানুষের মুখোশের আড়ালের অন্ধকার অসহ্য। আপনের উপেক্ষা জীবনের রঙ বদলে দেয়। বাঁচার সংজ্ঞা পাল্টে দেওয়ার আচরণ এই জীবনের সাথে কেউ না করুক। যে জীবন দুর্বিষহ, যে জীবন হতাশার কিংবা যে জীবন আশাহীন বাতি- সে জীবনে প্রিয় মানুষের পর হওয়ার গল্প আছে। আপন মানুষের থেকে ঠকায় যে জীবন বিষাদ মেখেছে সে জীবন মেঘ দেখে ভয় পায়। সে জীবনকে কেউ ভরসার কথা শোনালে সংশয় বাড়ে। মনে হয় আরেকবার বুক ভাঙার ঢেউ উঠবে। জীবন তো আসলে সেটা যেটা প্রিয়জনের আচরণ, কথা ও কাজে উপহার দিয়েছে। কাছের মানুষ ভুল মানুষ হলে সে যাতনা একজীবনে পুষিয়ে ওঠা যায় না। ভুল মানুষের কাফফারা একজীবনে হয় না। 

 

জীবন আসলে অভিজ্ঞতা যোগফল। সেখানে ভালো আচরণ আছে, বাজে আচরণ আছে। কত মানুষের কতশত রঙ-ঢঙ সয়ে এইখানে উপনীত হতে হয়েছে। কত আবেগ আত্মাহুতি দিয়েছে ভুল মানুষের ঠিকানায়। কত কত আশা বাঁচেনি কিংব বাঁচানো যায়নি- তখন সময় অসময় ছিল। আপন মানুষকে ভরসা করে যে বাঁচা তাতে যাতে দাগ না লাগে- চেষ্টা থাকুক। যত যা প্রতিশ্রুতি সময় তা পূর্ণ করুক, আপন মানুষেন থাকুক চেষ্টা। জীবন দু'দিনের সুতরাং দুঃখ যাতে এতো বেশি ঘনিষ্ঠ না হয় যাতে সুখের ঢেউ অনুভূতির বাইরে থাকে। আপন মানুষ, কাছের মানুষ কিংবা প্রিয় মানুষ যেন বুক দিয়ে আগলে রাখে, মুখে রাখে মিষ্টি। এইতো জীবন- মন দিয়েও স্পর্শ করা যায়, পাথর দিয়েও আঘাত করা যায়।

 

রাজু আহমেদ,  প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট।  

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন