ফুটফুটে শিশুটির বয়স মাত্র ৬ মাস। নাম আমেনা। শিশুটির কান্নাকাটিতে তার মা ও পরকীয়া প্রেমিকের শারীরিক সর্ম্পকে ব্যাঘাত ঘটে। এতেই বাধে বিপত্তি।
ক্ষিপ্ত হয়ে মা ও তার পরকীয়া প্রেমিক প্রথমে খাবারের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে শিশু আমেনাকে অচেতন করে। পরে বালিশ চাপা দিয়ে ও গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে নির্মমভাবে হত্যা করেন। এভাবেই মায়ের পরকীয়া প্রেমের বলি হতে হয় নিষ্পাপ শিশু আমেনাকে।
এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করে। পরবর্তীতে টানা তিনমাস বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে ক্লু-লেস এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করে পল্লবী থানা পুলিশ।
শিশু আমেনা হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন, নিহত শিশুটির মা মোসা. ফাতেমা বেগম (২৫) ও ফাতেমার পরকীয়া প্রেমিক মো. জাফর (৩৬)।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) বিকেলে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে গিয়ে ওসি বলেন, গত ৬ ডিসেম্বর দুপুর ৩টা ১০ মিনিটের দিকে রাজধানীর দিয়াবাড়ির মেট্রোরেলের ১২৪ নম্বর পিলার সংলগ্ন লেকপাড় থেকে একটি ব্যাগের মধ্যে কাপড়ে মোড়ানো অবস্থায় একটি শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
শিশুটির সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় পুলিশ দেখতে পায় শিশুটির গলায় আঘাতের দাগ। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে পল্লবী থানায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলাটি তদন্তের একপর্যায়ে মৃত শিশুটির পরিচয় শনাক্ত করা হয়। পুলিশ নিশ্চিত হয় শিশুটির নাম আমেনা ও তার বয়স ৬ মাস।
পরিচয় শনাক্তের পর গোপন তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) গভীর রাতে পল্লবী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মৃত শিশুটির মা মোসা. ফাতেমা বেগমকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করা হয়।
পল্লবী থানার ওসি নজরুল ইসলাম আরও বলেন, পরবর্তীতে ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন, নিবিড় তদন্ত ও ফাতেমা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, মো. জাফর নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে শিশুটির মা ফাতেমা বেগমের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। এ কারণে শিশু হত্যার ঘটনাটি ঘটেছে। ওই রাতেই জাফরকে গ্রেফতার করে পল্লবী থানা পুলিশ। গ্রেফতার দুজনেই বিবাহিত এবং পল্লবী এলাকায় বসবাস করেন। জাফর একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন। শিশুটির মা ফাতেমা আগে ওই গার্মেন্টসে কাজ করার সুবাদে জাফরের সঙ্গে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে উঠে।
ওসি জানান, গ্রেফতার ফাতেমার স্বামী গ্রিলের মেকানিক হিসেবে কাজ করেন। স্বামী কাজের সূত্রে বাসার বাইরে থাকার সুযোগে ফাতেমা দীর্ঘদিন ধরে পরকীয়া প্রেমে লিপ্ত ছিল। তাদের মাঝে নিয়মিত শারীরিক সর্ম্পক হতো। গত ৫ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে জাফর ফাতেমার বাসায় শারীরিক সর্ম্পকের জন্য আসে।
এ সময় শিশুটির কান্নাকাটির কারণে তাদের শারীরিক সর্ম্পকে ব্যাঘাত ঘটে। এজন্য শিশুটিকে প্রথমে স্যুপের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে অচেতন করা হয়। পরে বালিশ চাপা দিয়ে ও গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
নজরুল ইসলাম আরও বলেন, পরবর্তীতে বিছানার চাদর দিয়ে শিশুটির লাশ মুড়িয়ে কাপড়ের একটি শপিং ব্যাগে ঢুকানো হয়। এরপর জাফর শপিং ব্যাগে করে লাশটি নিয়ে মেট্রোরেলের একটি পিলারের কাছে ফেলে আসে।
এ হত্যাকাণ্ডে শিশুটির মা গ্রেফতার ফাতেমা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
ক্লু-লেস চাঞ্চল্যকর এই শিশু হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন সম্পর্কে পুলিশ জানায়, মৃত শিশুটির পরিচয় উদঘাটনের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে প্রচারণা চালানো হয়। যার ফলে শিশুটির পরিচয় পাওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে নিবিড় তদন্তের ফলে এই চাঞ্চল্যকর মামলার প্রকৃত তথ্য উদঘাটিত হয়।
গ্রেফতার জাফর ছয়দিনের পুলিশ রিমান্ডে পল্লবী থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। রিমান্ডে জাফরের নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ ও মামলার সুষ্ঠু তদন্ত অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান ডিএমপির এই কর্মকর্তা।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন