সুখের পথে সাদামাটা চলা!

সুখ সস্তা না তবে জীবনে সুখী হওয়া সহজ

রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।   

পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তিনি কোথায় কী করে তা সঙ্গীকে জানায় না! কোথায় সম্পদ জমা করে, কোথায় সময় ব্যয় করে কিংবা কিভাবে জীবনের পরিকল্পনা করে- এসব নিয়ে একজন আরেকজনের সাথে খোলাখুলি আলোচনা করা উচিত। কিন্তু আলোচনা না করার অন্তরালের কারণ তো নিশ্চয়ই আছে। জীবন দু'জনের সেখানে পরামর্শবিহীন চললে অন্তত সুখের দেখা মিলবে না- এসব পাগলেও জানে। কিন্তু কিছু নিয়ে খোঁচা দেওয়া, অযথা ব্যথা দেওয়া কিংবা অহেতুক সন্দেহে রাখার কারণে মন উঠে যায়। তখন আর আলাপ করতে ভালো লাগে না। আমাদের জীবনে যতটুকু খারাপ থাকা তার অধিকাংশ জুড়ে সরি বলতে ভুলে যাওয়াই দায়ী। অথচ ভুল স্বীকারের শিক্ষা থাকলে বড় বড় অপরাধ/সমস্যাতেও ছোট্ট ছোট্ট শব্দে সমাধান নিয়ে আসে। 

 

আলাপ তো তাঁর সাথে প্রাণ ফিরে পায় যে মনের মত কিংবা মতের মত! অন্তত মানুষটাকে বোঝে কিংবা বোঝার চেষ্টা করে। কথা বললেই যদি পাল্টা যুক্তি খাড়া করে, খোঁচা দিয়ে সম্পর্ক আলাদা করে দেয়াল তোলে কিংবা কেবল আমিই সঠিক- এই নীতিতে অটল থাকে তবে সেখানে সব থাকলেও সুখ থাকে না। দেহ দেহের কাছে পড়ে থাকলে তাতে কি মানুষটি আছে বোঝায়? মন উঠে যাওয়ার পরেও পারিপার্শ্বিকতায় পাশাপাশি অবস্থান করা লাগতে পারে, হাসিমুখে কথা বলা লাগতে পারে কিন্তু সেধে কথা বলার, ডেকে যত্ন নেওয়ার কিংবা পাশে আগলে রাখার ইচ্ছেটুকু আর অবশিষ্ট থাকে না। কেমন আছে, কোথায় আছে- সেসব জানতেও মন সায় দেয় না।

 

সঙ্গী গরীব হলেও, বেকার হলেও টুকিটাকি  উপহারের বিনিময় হয়। কিন্তু কিছু কিনে আনার পরেই দাম সস্তা, রঙচটা কিংবা পছন্দ হয়নি- এমন জিকির উঠলে ভবিষ্যতে আর কিছু দেওয়ার ইচ্ছেটা মুকুলেই মরে যায়। অথচ উপহারে যা পাওয়া যায় তা নিয়ে সন্তুষ্টি দেখালে, আগ্রহের কথা জানালে ধন্যবাদ দিলে উপহারদাতার মন খুশি হয়ে যায়। তখন সে নতুন নতুন আরও কিছু নিয়ে সামনে হাজির হতে প্রেরণা পায়। যে বুঝে যায় তার দেওয়া কিছুই অন্যজনের পছন্দ নয় তখন নিজেকেও আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করে, 'আমি কি তবে পছন্দের তালিকায় আছি?' 

 

কারো থেকে কিছু পেলে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করা সৌজন্যতা। পছন্দ না হলেও যে আগ্রহভরে গ্রহন করে সে তো হৃদয় জিতে নেয়। একটি পাঞ্জাবি কিংবা শাড়ি-চুড়ি তো আর সারাজীবন টিকবে না- কাজেই মন রক্ষার জন্য হলেও হাসিমুখে হাত বাড়াতে হয়। মন থেকে কৃতজ্ঞতা জানাতে হয়। মানুষের জীবনের জন্য মানুষ বাছাই করার, শালীন মন্তব্য দেওয়ার স্বাধীন এখতিয়ার সকলের আছে। কিন্তু যে সম্পদ দু'দিনের জন্য জীবনে এসেছে সেটা পছন্দ না হলেও মানাতে হয়। বলতে হয়- দারুণ হয়েছে। নিজের বুদ্ধিতে চলার মধ্যে গৌরব আছে। পরের বুদ্ধি ধ্বংস করে- মনে রাখলে ভালো। 

 

সুখ সস্তা না তবে জীবনে সুখী হওয়া সহজ। জীবনের অলিগলিতে সরলভাবে ভাবতে হবে এবং সাদামাটা চলতে হবে। মানুষ যখন আকাঙ্ক্ষার পারদ উচ্চমুখী করে, অন্যের নামে অভিযোগের পাহাড় তোলে এবং কল্পনাপ্রসূত প্রত্যাশায় স্থির থাকে তখন সে অসুখী হবেই। কাউকে কথা দিয়ে আঘাত করা, আচরণে ভুল বার্তা দেওয়া এবং প্রাপ্যকে সম্মান না দেওয়া- ঘোরতর অন্যায়। সুখের তরীতে সেধে সেধে বোকার মত আমরা দুঃখ-কষ্ট কেন সওদা করি? দুনিয়ায় সব সুখ ঘরের সুখের সাথে জড়িয়ে। ঘর থেকে আলো নিয়ে বের হতে পারলে দুনিয়ার অন্ধকার পথে চলা সহজ হয়। সব সুন্দর হবে যদি আমার মনের ভেতরটা সুন্দর হয়ে ওঠে।

 

 

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন