মোঃ নাসির, নিউ জার্সি (আমেরিকা) প্রতিনিধি || ক্রমবর্ধমান করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের দুই বড় রাজ্য ক্যালিফোর্নিয়া ও ওহাইওতে কারফিউ জারি করা হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ায় কারফিউ থাকবে এক মাস। আর ওহাইওতে ২১ দিন। নির্দেশনা অনুযায়ী কারফিউ কার্যকর থাকবে প্রতিদিন রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত। ওহাইওতে গত ১৯ নভেম্বর রাত থেকেই কারফিউ শুরু হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ায় শুরু হয় গত ২১ নভেম্বর থেকে। যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণ প্রতিরোধে আর লকডাউন চান না নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মাস্কের ওপরই ভরসা রাখছেন তিনি। পরিস্থিতি মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাস্থ্যব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়ায় ১৯ নভেম্বর ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসাম কারফিউ ঘোষণা দেন। কারফিউটি রাজ্যের প্রায় ৪ কোটি বাসিন্দার ৯৪ শতাংশের জন্য প্রযোজ্য হবে। ক্যালিফোর্নিয়ার হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেস সেক্রেটারি ড. মার্ক গালি গত ১৯ নভেম্বর দুপুরে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, আমরা জনগণকে রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত বাড়িতে থাকতে অনুরোধ করছি। একই দিন কারফিউ ঘোষণা করেন ওহাইও গভর্নর মাইক ডেওয়াইন। ক্যালিফোর্নিয়ার পাবলিক হেলথ অফিসার এরিকা প্যান বলেন, মহামারীকে রুখতে আমরা ক্যালিফোর্নিয়ার মানুষকে তাদের দৈনন্দিন অভ্যাস পরিবর্তনের অনুরোধ জানাচ্ছি। এই জটিল সময়ে আমাদের শক্ত থাকতে হবে, কঠিন সব সিদ্ধান্তও নিতে হবে। একসঙ্গে সামাজিকভাবে যোগাযোগ ঠিক রেখে শারীরিক দূরত্ব বাড়াতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে গত কয়েক দিনের তুলনায় আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হার বেড়েছে। এ অবস্থায় বিভিন্ন রাজ্যের গভর্নরদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে বাইডেন জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে লকডাউন করার কোনো পরিকল্পনা তার নেই। তবে সবাইকে মাস্ক অবশ্যই পরতে হবে। পাঁচজন ডেমোক্র্যাট এবং পাঁচজন রিপাবলিকান গভর্নরের সঙ্গে আলোচনা করেছেন বাইডেন। সেখানে করোনা মোকাবেলার পরিকল্পনা নিয়ে কথা হয়েছে। বাইডেন বলেন, ‘আমি আবারও বলছি : জাতীয় স্তরে কোনো শাটডাউন করা হবে না। প্রতিটি অঞ্চল, প্রতিটি সম্প্রদায় ভিন্ন হতে পারে। তাই জাতীয় স্তরে শাটডাউন করার মতো কোনো পরিস্থিতি দেখতে পাচ্ছি না।’ ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, বাইডেন ও ১০ জন গভর্নর সবার জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করেছেন। মাস্ক পরার বিষয়ে বাইডেন বলেন, ‘এটি (মাস্ক পরা) কোনো রাজনৈতিক বিষয় নয়। এটি প্রত্যেক দেশপ্রেমিকের দায়িত্ব।’ বাইডেন এরই মধ্যে করোনা মোকাবেলায় পরিকল্পনা পেশ করেছেন। তার এই পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে : রাজ্যগুলোকে আর্থিক সাহায্য, স্বাস্থ্য পরিকাঠামো বৃদ্ধি, বেকারদের সহায়তা বাড়ানো, মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা, সহজে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। বাইডেনের করোনাবিষয়ক উপদেষ্টা ডা. মাইকেল অস্টারহোম মনে করেন, দেশজুড়ে কার্যকর লকডাউনই পারে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হার ঠেকাতে। আসছে শীতে যুক্তরাষ্ট্রে এক দিনেই ২ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হতে পারেÑ এমন সতর্কবার্তা দিয়ে সবাইকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তিনি জানান, চীনের পেছনে না লেগে তখন এ মহামারী প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নিলে আজ এমন পরিণতি দেখতে হতো না যুক্তরাষ্ট্রকে। তবে এখন যে লকডাউন হতে চলছে, তাতে কোনো মার্কিন নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। কোনো ব্যবসায়ী যেন তার কর্মস্থল বন্ধ করে অর্থনৈতিক সংকটে না পড়েন। দেশ যেন মন্দায় না ডুবে যায়।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন