গত কয়েক সপ্তাহে ধরে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে খবরের বিষয়বস্তু হচ্ছেন যুক্তরাজ্যের অর্থ ও নগরবিষয়ক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক। লন্ডনে আওয়ামী ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট উপহার এবং বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বেশ চাপের মধ্যে পড়েছেন তিনি।
ইতিমধ্যে টিউলিপের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। তবে এই তদন্তের মধ্যেই সিটি মিনিস্টারের দায়িত্ব থেকে টিউলিপকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে দেশটির প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস।
দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ ওঠার পর তিনি আর দায়িত্ব চালিয়ে যেতে পারেন না বলেও রুপার্ট মারডকের মালিকানায় থাকা ব্রিটিশ সংবাদপত্রটির সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে। টিউলিপকে এ দায়িত্বের জন্য বেছে নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের সমালোচনাও করা হয় এতে।
শুরু থেকেই উপহার হিসাবে ফ্ল্যাট পাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি দাবি করেছিলেন, ফ্ল্যাটটি তার বাবা-মা তাকে কিনে দিয়েছেন।
টিউলিপ যুক্তরাজ্যের আর্থিক খাতের দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্বে রয়েছেন। কিন্তু তিনিই নানা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এর আগে ব্রিটেনের টরি এমপিরাও দাবি জানিয়ে বলেছিলেন, টিউলিপ সিদ্দিক যদি তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে না পারেন, তাহলে তার মন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত।
লন্ডনের হ্যারো ইস্টের টরি এমপি বব ব্ল্যাকম্যান বলেন, টিউলিপ সিদ্দিককে তার সম্পত্তির বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট এবং ব্যাখ্যা করতে হবে, আসলে তিনি কী বলেছিলেন এবং কেন।
যদি তিনি তা না করেন, তাহলে মন্ত্রী হিসেবে তার অবস্থান অগ্রহণযোগ্য হবে।
ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের ছায়ামন্ত্রী ম্যাট ভিকার্স বলেন, সরকারের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ অগ্রহণযোগ্য। কিন্তু সেই সদস্য যখন স্টারমারের দুর্নীতি-বিরোধী মন্ত্রী তখন তা আরো বেশি প্রশ্নবিদ্ধ।
এমন প্রেক্ষাপটে লেবার পার্টির সিটি মিনিস্টার হিসেবে তাকে বাছাই করাই ‘স্বচ্ছ ছিল না’ মন্তব্য করে বুধবার দ্য টাইমস লিখেছে, টিউলিপ এ পদের জন্য একমাত্র বিকল্প ছিলেন না।
তাকে এ দায়িত্বের জন্য বেছে নেওয়ার সমালোচনা করে সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, স্যার কিয়ার স্টারমার তার উত্তর লন্ডনের প্রতিবেশীদের রাজনৈতিক সুক্ষ্মদর্শিতা ও যোগ্যতা যাই হোক না কেন, গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে তাদের বসিয়ে রেকর্ড করেছেন।
যুক্তরাজ্যের আর্থিক সেবাখাতের ভবিষ্যত কিংবা কীভাবে লন্ডনকে শীর্ষস্থানীয় অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে ধরে রাখা যায়, সে ব্যাপারে হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেটের এই এমপি কমই আগ্রহ দেখিয়েছেন।
সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, যাই হোক যুক্তরাজ্যের আর্থিক সেবা খাতের দায়িত্বে টিউলিপকে বসানোর সিদ্ধান্ত কতটা অবিবেচনাপ্রসূত ছিল, তা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সামনে আসা অনেক প্রাসঙ্গিক কারণগুলোতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। টিউলিপের বিরুদ্ধে তার খালা, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত কর্তৃত্ববাদী শাসক শেখ হাসিনার সঙ্গে আর্থিক সম্পর্কের ব্যাপারে অনেকগুলো অভিযোগ সামনে এসেছে। তদন্ত কর্মকর্তা টিউলিপের আবাসন বা ‘উপহারের ফ্ল্যাট’ এবং এর সঙ্গে শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের যোগসূত্র খুঁজবেন। তদন্ত চলাকালে তার সরে দাঁড়ানোই উচিত হবে। তবে তদন্তে যদি তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন তাকে সরকারে ফিরিয়ে আনার পথ খুলে যাবে।
এদিকে বাংলাদেশে রূপপুর প্রকল্পের দুর্নীতির অভিযোগের পর দুদকের অনুসন্ধান শুরুর বিষয়টিও উঠে এসেছে দ্য টাইমসের সম্পাদকীয়তে। ব্রিটিশ এই সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ‘টিউলিপ তার খালা শেখ হাসিনার রাজনৈতিক বিরোধীদের ফাঁদেও পড়তে পারেন। সর্বোপরি তার স্বজনকে দিয়ে শেখ হাসিনার সহিংস কর্মকাণ্ড, আত্মসাৎ, দুর্নীতি আর নাগরিক অধিকার লঙ্ঘন দিয়ে সিটি মিনিস্টারকে মাপা উচিতও নয়। কিন্তু তিনি তার সমর্থকদের প্রভাব থেকেও দূরে থাকেননি। যে কারণে তিনি দেশ-বিদেশে নৈতিক তদন্তের মুখে পড়েছেন।’
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন