মাদুরোকে গ্রেপ্তারের তথ্যের জন্য ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর গ্রেপ্তার সংক্রান্ত তথ্যের জন্য পুরস্কারের পরিমাণ ২৫ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। নির্বাচনের প্রায় ৫ মাস পর শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নিয়েছেন মাদুরো। শপথ নিতে যাওয়ার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) রাজধানী কারাকাসে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজনও করা হয়েছিল। 

শুক্রবার বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে মাদুরো তৃতীয় মেয়াদের জন্য প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর এই পুরস্কারের পরিমাণ বাড়ায় যুক্তরাষ্ট্র।

এর আগে পুরস্কার ছিল ১৫ মিলিয়ন ডলার।

 

মাদুরো ছাড়াও ভেনিজুয়েলার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিয়োসদাদো ক্যাবেলোর গ্রেপ্তার বা দোষী সাব্যস্ত করার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছে আমেরিকা। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্লাদিমির পাদ্রিনোর জন্য ১৫ মিলিয়ন ডলারের নতুন পুরস্কার ঘোষণা করেছে দেশটি। পাশাপাশি ব্রিটেনও ভেনিজুয়েলার ১৫ জন শীর্ষ কর্মকর্তা, বিচারক, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং সামরিক কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

 

শপথ গ্রহণের আগে কলম্বিয়ার সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ ও ফ্লাইট স্থগিত করে ভেনিজুয়েলা। তবে এমন সিদ্ধান্তের কোনো কারণ জানানো হয়নি। উপস্থিত সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানটি জাতীয় পরিষদের ছোট একটি কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে। যা আগের প্রধান কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের চেয়ে অনেকটাই ভিন্ন।

 

ভেনিজুয়েলায় গত বছরের জুলাইয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট মাদুরোর বিপরীতে বিরোধী জোটের প্রার্থী ছিলেন এডমান্ডো গঞ্জালেস। ওই নির্বাচনে তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন মাদুরো। বিরোধী দলগুলোর জোট ভোট গণনায় ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তোলে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং ভেনিজুয়েলার বিরোধী নেতাদের পক্ষ থেকে অভিযোগের আড়ালে অভিষেক অনুষ্ঠানটি হয়েছিল।

ফলে মাদুরোর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং ভেনিজুয়েলার বিরোধী নেতারা তীব্র সমালোচনা করেছেন।

 

ভেনিজুয়েলার বিরোধী দলের দাবি, গত বছরের বিতর্কিত নির্বাচনে তাদের প্রার্থী এডমুন্ডো গঞ্জালেস ৬৭ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন। মাত্র ৩০ শতাংশ ভোট পেয়েছেন মাদুরো। স্বতন্ত্র পর্যবেক্ষক সংস্থা কার্টার সেন্টার এবং কলম্বিয়ার ইলেকটোরাল মিশন, এমনকি সিএনএন-এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী বিরোধীদের দাবিকৃত ফলাফল সঠিক। গঞ্জালেসকে বৈধ প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ।

দেশটির পররাষ্ট্রসচিব ডেভিড ল্যামি মাদুরোর শাসনকে ‘প্রতারণামূলক’ বলে বর্ণনা করেছেন। শুক্রবার ইইউ বলেছে, তারা ভেনিজুয়েলার বিরুদ্ধে ‘নিষেধাজ্ঞামূলক ব্যবস্থা’ বাড়িয়ে দিচ্ছে। কানাডাও নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি মাদুরোর ‘নির্লজ্জ কর্মকাণ্ড’ বলে অভিহিত করেছেন।

জোলি বলেছেন, ‘কানাডা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ক্ষয় বা তাদের অধিকার পেতে চাওয়া নাগরিকদের ওপর দমন সহ্য করবে না।’
মাদুরো এবং তার সরকার বারবার পশ্চিমা দেশ এবং বিরোধী নেতাদের করা অনেক অভিযোগের নিন্দা করেছে।

এদিকে মাদুরো সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেওয়া বিরোধীদলীয় নেতা মারিয়া করিনা মাচাদোকে আটক করায় বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) হুঁশিয়ারি দিয়ে ট্রাম্প বলেন, বিরোধী নেতা মারিয়া ও প্রেসিডেন্ট প্রার্থী এডমান্ডো গঞ্জালেসের যেন কোনো ‘ক্ষতি’ না করা হয়।


 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পুরস্কারে ২০২০ সাল থেকে মাদক ও দুর্নীতির অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মাদুরো এবং দেশের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ‘মাদক-সন্ত্রাসবাদ’-এর অভিযোগ এনেছিল। অভিযোগ ওঠে, আমেরিকায় তারা কোকেন ঢেলে দিচ্ছে এবং আমেরিকানদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করার জন্য মাদককে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। মাদুরো এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। 

মাদুরোকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য উৎসাহিত করা যেতে পারে এই আশায় সাময়িকভাবে তা শিথিল করার পর গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তেল নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ করেছে। গত ২৮ জুলাইয়ের নির্বাচনের ফলাফল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ব্যাপকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে, যার মধ্যে ভেনিজুয়েলার কিছু বামপন্থী প্রতিবেশী ব্রাজিল এবং কলম্বিয়াও অন্তর্ভুক্ত।

মাদুরোর ইরান, চীন, রাশিয়াসহ কয়েকটি মিত্র অবশিষ্ট রয়েছে, তবে বিশ্ব মঞ্চে তিনি ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন। তার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কিউবান এবং নিকারাগুয়ার প্রেসিডেন্টরা।

 

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন