বয়স নয়, সুস্বাস্থ্য ও মানসিকতা জীবনের উড়ান

হুসনা খান হাসি | লন্ডন, ইউকে ||

আমাদের জীবনে বয়সকে ঘিরে নানা ধরণের সামাজিক ধারণা তৈরি হয়েছে। “এই বয়সে আর কী হবে?” কিংবা “এখন আর নতুন কিছু শুরু করা সম্ভব নয় বা বয়স তো হয়ে গেল, নতুন কিছু করার দরকার নেই।” এমন কথাগুলো শুনতে আমরা অনেকেই অভ্যস্ত। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বয়স কখনোই স্বপ্ন দেখার কিংবা নতুন কিছু করার বাধা হতে পারে না, জীবনের অগ্রগতিকে থামাতে পারে না। বরং জীবনের গতি ও প্রকৃত শক্তি নির্ভর করে দুটি প্রধান উপাদানের উপর, আপনার সুস্বাস্থ্য আর মানসিক উদ্যমের উপর।

জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে সুস্বাস্থ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুস্থ শরীর এবং মনের উপস্থিতি মানুষকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে এবং নতুন কিছু করতে অনুপ্রাণিত করে। সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং মানসিক প্রশান্তি আমাদের শক্তি যোগায়। বয়স যাই হোক না কেন, শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকার অভ্যাস জীবনকে আরও গতিশীল করে তোলে। আর মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখলে জীবনের যেকোনো পর্যায়ে আপনি নতুন কিছু শুরু করতে পারেন। সুস্বাস্থ্য শুধু দৈনন্দিন জীবনযাপনের মানই উন্নত করে না, বরং আপনার আত্মবিশ্বাসকেও বাড়িয়ে তোলে। সুস্বাস্থ্যের কারণেই অনেক মানুষ বয়সের বাধা অতিক্রম করে অনন্য অর্জন করেছেন।

শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকলে বয়স কেবলমাত্র একটি সংখ্যা হয়ে দাঁড়ায়।

বয়সকে আমরা অনেক সময় জীবনের সীমা হিসেবে মনে করি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বয়স কোনো বাধা নয়, বরং এটি জীবনের অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষার প্রতিফলন। শারীরিক বা মানসিকভাবে সুস্থ থাকলে বয়স যতই হোক না কেন, নতুন কিছু শেখা বা শুরু করা সবসময় সম্ভব। বয়স মানুষের স্বপ্ন দেখা বা সেগুলো পূরণের ইচ্ছাকে আটকে রাখতে পারে না।

আমাদের সমাজে একটা প্রচলিত ধারণা হলো ৫০ বছর বয়স মানেই মানুষ বুড়ি বা বুড়ো হয়ে গেছে। অথচ বয়স কেবল একটা সংখ্যা, আর জীবন চালিয়ে নেওয়ার মানসিকতা, উদ্যম, আর স্বপ্ন দেখার ক্ষমতার সঙ্গে বয়সের কোনো সম্পর্ক নেই। পৃথিবীর অনেক সফল মানুষ তাঁদের জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য পেয়েছেন ৫০ পেরোনোর পর, উদাহরণস্বরূপ, Colonel Sanders তাঁর KFC ব্যবসার শুরু করেছিলেন ৬৫ বছর বয়সে। অভিনেত্রী শেফালী শাহ তাঁর অভিনয় জীবনের স্বর্ণযুগ শুরু করেন ৫০-এর পরে। এমন অনেক উদাহরণ প্রমাণ করে, বয়স জীবনকে থামিয়ে দেওয়ার নির্দেশ নয়, বরং নতুন করে শুরু করার আরেকটা সুযোগ। ৫০ মানে জীবনের সমাপ্তি নয়, এটি জীবনের নতুন এক অধ্যায়। এই সময়টায় মানুষ জীবনের অভিজ্ঞতা, স্থিতি, এবং বোঝাপড়া থেকে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। তাই ৫০ মানেই বুড়ো নয়; বরং জীবনের আরেকটি রঙিন অধ্যায়ের সূচনা।

আমাদের মনে রাখা উচিৎ ডানা মেলার ইচ্ছা বা ইচ্ছে মতো উড়তে পারার স্বপ্ন বয়সের সঙ্গে বাঁধা নয়। জীবনের যে কোনো পর্যায়ে নতুন কিছু শেখার, নতুন পথে হাঁটার, বা নিজেকে খুঁজে পাওয়ার তাগিদ আসতে পারে। ডানা মেলার আকাঙ্ক্ষা বা নিজের মতো করে উড়তে চাওয়ার ইচ্ছা শুধুমাত্র ১৮, ২০ বা ৩০ বছর বয়সেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি ,৫০, ৭০ এমনকি ১০০ বছর বয়সেও হতে পারে! ৭০, ৮০ বা ১০০ বছর বয়সেও মানুষ নতুন স্বপ্ন দেখতে পারে, নতুন কিছু শুরু করতে পারে।

আমাদের চারপাশে এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা বয়সের বাধা পেরিয়ে নতুন কিছু শিখেছেন, জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করেছেন। সুতরাং জীবনকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য স্বপ্ন দেখা এবং সেই স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বপ্ন মানুষকে জীবনের গতিপথ বদলাতে এবং নতুন কিছু করতে সাহস জোগায়। বয়স কখনো স্বপ্নের পথে বাধা হতে পারে না। অনেকেই মধ্যবয়সে বা বার্ধক্যে এসে নিজের জীবনের লক্ষ্য নতুন করে নির্ধারণ করেছেন এবং সফল হয়েছেন।

বয়স যতই বাড়ুক, স্বপ্ন দেখা এবং তা বাস্তবায়ন করার জন্য কখনোই সময় শেষ হয়ে যায় না। বহু মানুষ জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে, বিশেষ করে মধ্যবয়স বা বয়ঃসন্ধির পরে, নতুন পথচলা শুরু করেছেন এবং নিজেদের নতুন করে আবিষ্কার করেছেন।

জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ই বিশেষ, আর জীবনকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখার ক্ষমতা ও প্রতিনিয়ত কিছু নতুন শেখার প্রবণতাই মানুষকে আলাদা করে তোলে। বয়স যতই বাড়ুক না কেন, সাফল্যের চাবিকাঠি নির্ভর করে আপনার মানসিকতা ও সুস্থতার উপর। তাই বয়স নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার পরিবর্তে নিজের স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিন এবং স্বপ্ন দেখা বন্ধ করবেন না। বয়স নয়, জীবনের প্রকৃত উড়ানের মূল চাবিকাঠি হলো সুস্বাস্থ্য ও স্বপ্ন। জীবন একটাই, তাই প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করুন এবং উচ্চতর লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যান।

সর্বশেষে বলা যায় যে বয়স কেবল একটি সংখ্যা মাত্র। প্রকৃত শক্তি লুকিয়ে আছে আপনার মানসিকতায়। বয়সের তুলনায় জীবনের গুণগত মান অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে পারেন, তবে জীবনের যেকোনো পর্যায়ে আপনার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব। বয়স কখনোই জীবনের গতিকে থামাতে পারে না। নিজের মানসিকতা এবং সুস্থতার উপরই নির্ভর করে কতটা উচ্চতা ছোঁয়া সম্ভব। সুস্বাস্থ্য ধরে রেখে জীবনের যেকোনো অধ্যায়ে স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।

জীবন তো চলার গল্প, যেখানে প্রত্যেক মুহূর্ত নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আসে। তাই বয়স কখনো বাধা নয়, নিজের ইচ্ছার ডানায় ভর করে উড়তে সাহস থাকলেই সবকিছু সম্ভব। অতএব, বয়সের দিকে না তাকিয়ে নিজের সুস্বাস্থ্য এবং স্বপ্নকে প্রাধান্য দিন। মনে রাখবেন সুস্বাস্থ্য ও স্বপ্নই আপনার জীবনের আসল উড়ানের চাবিকাঠি। স্বপ্ন দেখুন, নিজের যত্ন নিন, আর উড়তে থাকুন নতুন নতুন উচ্চতায় এবং জীবনকে সম্পূর্ণভাবে উপভোগ করুন!

 

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন