তালেবানের সঙ্গে কেন সুসম্পর্ক চায় ভারত?

সম্প্রতি দুবাইতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি ও তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে যে ভারত তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে চায়।

ভারতের এই বৈঠক এমন এক সময়ে হয়েছে, যখন পাকিস্তান আফগানিস্তানে সামরিক হামলা চালিয়েছে ও ভারত এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছে। এর পাশাপাশি, তালেবান সম্প্রতি মুম্বাইতে তাদের একজন কনসাল নিয়োগ করেছে।

 

তালেবান সরকারের পক্ষ থেকে মুম্বাইয়ে এই প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি ভারত সরকার। অবশ্য এই নিয়োগ এমন এক সময়ে হয়েছে, যখন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জে.পি. সিং কাবুল সফর করেন। গত বছরের নভেম্বরে জে.পি. সিং কাবুল সফর করেন।

 

তালেবান সরকারের সঙ্গে গত এক বছরে ভারতের সম্পর্ক ধীরে ধীরে উন্নত হয়েছে, তবে এই বৈঠক ছিল প্রথম উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ। অন্যদিকে, গত ২০ বছরে আফগানিস্তানে ৩০০ ডলারেরও কোটির বেশি অর্থ বিনিয়োগ করেছে ভারত।

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বুধবারের (৮ জানুয়ারি) ওই বৈঠকে আঞ্চলিক উন্নয়ন, বাণিজ্য ও মানবিক সহযোগিতাসহ স্বাস্থ্য খাতসহ আফগান শরণার্থীদের সহায়তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

দিল্লির কৌশলগত পরিবর্তন নাকি স্বাভাবিক অগ্রতি?

 

ভারতের সঙ্গে তালেবানের এই সম্পর্ক উন্নয়ন অনেক বিশ্লেষকের মতে একটি স্বাভাবিক অগ্রগতি। তাছাড়া এটিকে কৌশলগত পরিবর্তন মানতে নারাজ ওবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ডেপুটি ডিরেক্টর কবির তানিজা। তিনি বলেন, তালেবান কাবুলের বাস্তবতা ও ভারত সেই বাস্তবতাকে এড়িয়ে যেতে পারে না। আফগানিস্তান অন্য আর কয়েকটি প্রতিবেশীদের মতোই ভারতের স্বাভাবিক বাস্তবতা।

এদিকে, তালেবানের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে আফগানদের জন্য ভারতের ভিসা দেওয়ার সম্ভাবনাকে এক অন্যতম ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে বর্ণনা করেন তানিজা কবীর। তিনি বলেন, মিশ্রি-মুত্তাকি বৈঠকের প্রধান প্রাপ্তি, আফগানদের জন্য বিশেষ করে বাণিজ্য, স্বাস্থ্য পর্যটন ও শিক্ষা খাতে ভারত ভিসা চালু করার কাছাকাছি যেতে পারে।

পশ্চিমা দেশগুলো-সমর্থিত আশরাফ গনি সরকারকে হটিয়ে ২০২১ সালে আফগানিস্তানের শাসনক্ষমতা নেয় তালেবান। এরপর আফগানদের জন্য মেডিকেল, স্টুডেন্ট ভিসাসহ অন্যান্য ভিসা স্থগিত করে নয়া দিল্লি। এতে সমালোচনা শুরু হলে আফগানদের জন্য সামান্য কিছু ভিসা ইস্যু করা শুরু করে ভারত।

 

তানিজা বলেন, আফগানিস্তানের জন্য ভিসা চালু করার একটি বড় সুযোগ পেয়েছে নয়া দিল্লি। যেসব আফগান নাগরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য খাতের সেবা নিতে ভারতে আসতেন, ভিসা চালু হলে তা তাদের জন্য স্বস্তি বয়ে আনবে। পাশাপাশি ভারতও লাভবান হবে।

 

তবে জিন্দাল স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের অধ্যাপক রাঘব শর্মা মনে করেন যে, নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে ভিসা ইস্যুতে অগ্রগতি ধীর হতে পারে। তিনি আরও বলেন, তালেবান একটি আদর্শিক আন্দোলন ও তাদের ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা চরমপন্থা বাড়িয়েছে।

 

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তালেবানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ভারতকে নৈতিক সমস্যায় ফেলতে পারে। ভারতে নারীদের শিক্ষা নিষিদ্ধ করা নিয়ে তালেবান সরকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ভারতের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এদিকে, ভিসা চালুর বিষয়ে ইতিবাচক হলেওে আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন নিয়ে তানিজা বলেন, আমরা তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে একতরফা কৌশল বেছে নিয়েছি। আগে আমরা হামিদ কারজাই ও আশরাফ ঘানির উপর নির্ভর করেছিলাম। এখন আমরা তালেবানের উপর নির্ভর করছি, যা একটি বড় ভুল।

ভারতকে আফগানিস্তানের রাজনৈতিক এবং সামাজিক বাস্তবতাকে আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য সময় ও সম্পদ বিনিয়োগ করতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আফগানিস্তানের ভৌগলিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে আমাদের কাছাকাছি হওয়া সত্ত্বেও আমরা সমাজটি সম্পর্কে খুবই কম জেনেছি, বলেন শর্মা।

 

অনেকে আবার বলছেন, তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে ভারতের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো কৌশলগত প্রয়োজনীয়তা হতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে এই সম্পর্ক ভারত নিয়ে আরও গভীর চিন্তাভাবনা করতে বাধ্য করবে। সেই সঙ্গে আফগানিস্তানের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দ্রুত পরিবর্তন হতে পারে ও ভারতকে সেই পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

 

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন