বুলবুল আহমেদ, নবীগঞ্জ হবিগঞ্জ প্রতিনিধি:- সিলেটের ওসমানী নগর ও মৌলভীবাজার জেলার মধ্যেবর্তী শেরপুর কুশিয়ারা নদীর তীর জুড়ে গত রবিবার থেকে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা।রোববার সন্ধ্যা থেকেই মৌলভীবাজার জেলা সদর উপজেলার কুশিয়ারার তীরবর্তী কয়েক শতাধীক দোকান নিয়ে বসেছে মাছের মেলা। এই মেলায় দেখা গেছে ছোট-বড় নানা প্রজাতির দেশীয় মিঠা পানির মাছ, নদী ও হাওর থেকে সংগৃহীত হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকা দামেরও মাছ বিক্রি হচ্ছে ঐ মেলায় বেশ কয়েকটি দোকানে। মেলা জুড়ে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। এই মেলাটি সিলেট বিভাগের সব চাইতে বড় ও একমাত্র ঐতিহ্যবাহী এই মাছের মেলা। এতে এ মেলাতে উৎসাহ উদ্দীপনারও কমতি ছিলনা। মেলায় উঠেছে নানা জাতের ছোট-বড় নানা প্রজাতির মাছ। এমন অদেখা বড় মাছ দেখতে আর কিনতে দর্শক ও ক্রেতারও ছিলনা কোন কমতি।
এই মেলাটি দু’রাত ও দু’দিনই চলছে মাছ কেনা-বেচার ধুম।
এ ব্যাপারে মেলায় মাছ বিক্রেতা (আড়তদার) ও স্থানীয় মানুষের সূত্রে জানাযায়, মেলায় বিক্রি হয়েছে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকার মাছ। আর সমাগম ঘটে দেশের নানা প্রান্তের ভোজনবিলাসী লক্ষাধিক মানুষের।
স্থানীয় সূত্রে আরো জানাযায়,
ঐতিহ্যের টানে এ মেলা এখনো স্থানীয়রা ধরে রেখেছেন। তাই প্রতিবছরই পৌষ মাসের শেষের দিকে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সিলেট- ঢাকা মহাসড়কের পাশে শেরপুর কুশিয়ারা নদীর তীরে এই মাছের মেলার আয়োজন করা হয়।
এ ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দা অয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা জানান, মেলার নির্ধারিত স্থানে নির্দিষ্ট সময়ের এক/দু’দিন আগে থেকেই জমে উঠে ইমিটেশন, খেলনা, গৃহস্তালীর প্রয়োজনীয় নানা জিনিসপত্রের দোকান। এতে, বাদ যায়নি মুড়ি-মুড়কি, মণ্ডা-মিঠাইসহ আরো কতোকি মুখরোচক খাবার-দাবারের আয়োজন।
মেলাস্থ শেরপুর হলো মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে প্রায় ২৩ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার একেবারেই শেষ ভাগে। পশ্চিমে হবিগঞ্জ জেলার নবিগঞ্জ উপজেলা, উত্তরে কুশিয়ারা নদী। নদী পার হলেই সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলার ওসমানী নগর থানা। হবিগঞ্জ, সিলেট ও মৌলভীবাজার এই তিনটি জেলার মিলনস্থল হলো শেরপুর।
এ ব্যাপারে মৎস্য ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা জোর দাবি জানিয়ে বলেন, এটিই দেশের সবচেয়ে বড় মাছের মেলা। মেলাটি মাছের মেলা হলেও মাছ ছাড়াও বিভিন্ন দ্রব্যের সহস্রাধিক দোকানও বসে কুশিয়ারা নদীর তীরে। মেলায় লোহা, কাঠ, বেত, বাঁশ ও মাটির তৈরি নানা রকম পণ্য, শিশুদের খেলনা, সবজি- আনাজ সহ অনেক ধরনের লোকজ পণ্য, ফার্নিচার, কৃষি পণ্য, গৃহস্থালী সামগ্রী ও নানা জাতের দেশীয় খাবারের দোকানসহ গ্রামীণ ঐতিহ্যের নানা রং ঢং আর প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকান। সিলেটের স্থানীয় বিভিন্ন হাকালুকি, কাওয়াদীঘি, হাইল ও টাঙ্গুয়ার হাওর, কুশিয়ারা, সুরমা ও মনু নদী ছাড়াও দেশের বিভিন্নস্থান থেকে মৎস্য ব্যবসায়ীরা বাঘাআইড়, রুই, কাতলা, মৃগেল, চিতল, বোয়াল, গজার, আইড়সহ নানা জাতের দেশীয় প্রজাতির ছোট- বড় মাছ নিয়ে দোকান সাজিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ বছর মেলায় প্রচুর মাছ উঠলেও দাম একটু বেশি বলে অভিযোগ করেন ক্রেতারা।তবে, মাছ বিক্রেতারা জানালেন, নানা কারণে স্থানীয় নদী ও হাওরে আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। তারপরও আমরা মেলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে অনেক কষ্ট করে বাড়তি দাম দিয়ে মাছ সংগ্রহ করে নিয়ে এসেছি। এজন্য দাম একটু বেশি। তারপরও তারা ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই দাম হাঁকাছেন।
এ ব্যাপারে ক্রেতারা জানান, বাজারে প্রচুর মাছ উঠলেও বিক্রেতারা দাম চাইছেন বেশি। তবে, পছন্দের বড় আকারের অনেক মাছ দেখে আমরা আনন্দিত। কারণ এ মেলায় স্থানীয় হাওর ও নদীর মাছ থাকায় অনেক বড় মাছই থাকে জীবিত আর ফরমালিন মুক্ত। মিঠাপানির পোক্ত এ মাছগুলো খেতেও সু-স্বাদু। কারণ এ মাছগুলো মেলা ছাড়া তারা সংগ্রহ করতে পারেন না। মেলা উপলক্ষে প্রবাসী অধ্যুষিত এ অঞ্চলের শেরপুর, নবীগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারসহ আশপাশের সৌখিন অনেক প্রবাসী দেশে এসেছেন। এ মেলাকে কেন্দ্র করে শেরপুর মেলার চারোশের আত্মীয় স্বজনরাও আসেন একে অপরের বাড়িতে। নানা স্বাদের মাছ আর পিঠা তৈরিতে উৎসবের আমেজে জমে ওঠে পুরো এ অঞ্চল। মেলাটি আগামীকাল বুধবার সকালে শেষ হলেও খাট, টেবিল, চেয়ার সহ কাট মাল জাতিয় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আরো ২/৩ দিন থাকে। এই মেলাটি প্রায় ২শ বছর পূর্ব থেকে চলে আসছে। তবে, অন্য বছরের তুলনায় এভার মেলাটি শান্তি পূর্ণ ভাবে হয়েছে। কারণ এভার এখানে ছিলনা কোন জুয়ার আসার, মাদকের আসর বা পুতুল নাচ মান ধরে সুন্দরী যুবতী মেয়েদের দিয়ে অর্ধ লগ্ন করে নাচ, গান ও নৃত্য ছিলনা। তাই মেলাটি শান্তিপূর্ণ ভাবে ঘুরে দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর মাছের মেলায় যাতে কোনো ধরনের অশ্লীতা ও অপ্রীতিকর ঘটনা না হয় সে জন্য তারা পদক্ষেপ নিয়েছেন। এখন আর আগের মতো মাছের মেলাতে প্রকাশ্যে জুয়া, পুতুল নাচ, অশ্লীল নৃত্য ও যাত্রা না থাকায় খুশি পুরো জেলাবাসী। তবে, মেলার ইজারাদার ও আয়োজকদের দাবি এ ঐতিহ্যবাহী মেলার জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থানের।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন