মাঝে আর মাত্র ২ দিন। তারপরই সোমবার (২০ জানুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ নিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা নিতে যাচ্ছেন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে যে, গত চার বছরে জো বাইডেন নেতৃত্বাধীন ডেমোক্রেটিক সরকার সারাবিশ্বে বিশেষ করে, এশিয়ায় যে মিত্রজোট গড়ে তুলেছে, সেগুলো টিকে থাকবে কি না।
বিশ্বের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, গণতান্ত্রিক ও মার্কিন মিত্র দেশে অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা, স্বাভাবিকভাবেই হোয়াইট হাউজের কঠোর প্রতিক্রিয়ার কারণ হওয়া উচিত। তবে গত মাসের শুরুতে যখন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল তার দেশে সামরিক আইন জারি করলেন, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিষয়টি নিয়ে চুপ ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান এটিকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে অভিহিত করলেও, এক মাস পর সেটিকে ‘ভুল’ বলে মন্তব্য করেন।
ইউন দক্ষিণ কোরিয়ার আধুনিক গণতান্ত্রিক ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জাপানের সঙ্গে ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব মিটিয়ে সম্পর্ক স্থাপন করেন। এটি দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন কৌশলবিদদের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ছিল। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার নেতাদের মধ্যে হওয়া ত্রিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলন ছিল এই লক্ষ্যে একটি বড় অগ্রগতি। তবে ইউনের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর এই সম্পর্ক ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ইউনের রাজনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে এই মিত্রতার প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া বেড়েছে। তার ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর, এই জোট আরও অপ্রীতিকর হয়ে উঠেছে। এখন আশঙ্কা করা হচ্ছে, দক্ষিণ কোরিয়ার সম্ভাব্য নতুন নেতৃত্ব এই পরিবর্তনগুলো ধীর করে দিতে বা সম্পূর্ণরূপে উল্টে দিতে পারে।
বাইডেনের এশিয়ান কৌশল: ল্যাটিসওয়ার্ক মডেল
জ্যাক সুলিভানের নেতৃত্বে বাইডেন প্রশাসন এশিয়ায় ‘ল্যাটিসওয়ার্ক’ মডেল তৈরি করেছে। এটি ঐতিহ্যবাহী ‘হাব অ্যান্ড স্পোক’ কাঠামো থেকে ভিন্ন। এই মডেলে যুক্তরাষ্ট্র জোটের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে না থেকে, মিত্র দেশগুলোর একে অপরকে সমর্থন করে।
এই মডেলের সাফল্য বিভিন্ন মিত্রদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে প্রতিফলিত হয়েছে। জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে সম্পর্ক আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়েছে। ফিলিপাইন উভয়ের সঙ্গে নতুন নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। অন্যদিকে যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও জাপান কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত হয়ে নতুন করে শক্তিশালী হয়েছে।
তবে দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, দক্ষিণ কোরিয়ার পরিস্থিতি ল্যাটিসওয়ার্ক মডেলের সীমাবদ্ধতাগুলো প্রকাশ করেছে। বাইডেন প্রশাসন ইউনের মতো নেতাদের কাছাকাছি যেতে পারলেও তাদের রাজনৈতিক বিরোধীদের উপেক্ষা করেছে।
ট্রাম্পের অধীনে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ব রাজনীতির জটিল কৌশলগুলোর প্রতি তেমন একটা মনোযোগী নন। তবে তার প্রথম মেয়াদে উপদেষ্টারা তার এশিয়ান নীতি ‘চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা’ হিসেবে পুনঃসংজ্ঞায়িত করেছিলেন। প্রথম মেয়াদে কোয়াড মন্ত্রীদের বৈঠক পুনরায় চালু করা ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নতুন কূটনৈতিক উদ্যোগের মতো কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।
দ্বিতীয় মেয়াদে আরও সংগঠিত একটি দল ট্রাম্পকে এই মিত্রজোট ধরে রাখতে সাহায্য করতে পারে। তবে এর সাফল্য চীনের কর্মকাণ্ডের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল থাকবে, যা মিত্র দেশগুলোকে একত্রিত হতে উৎসাহিত করে।
এমন পরিস্থিতিতে বাইডেন প্রশাসন মনে করছে, ল্যাটিসওয়ার্ক মডেল এমনভাবে তৈরি হয়েছে, যা মার্কিন নেতৃত্ব ছাড়াও কার্যকর হতে পারে। তবে এটি চীনের আক্রমণাত্মক অবস্থানের ওপর নির্ভর করে।
বাইডেনের উপদেষ্টারা বিশ্বাস করেন, সঠিক নেতৃত্ব ছাড়াই এই কাঠামো কাজ চালিয়ে যেতে পারবে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের কূটনৈতিক অবস্থান এই কাঠামোকে কতটা প্রভাবিত করবে, সেটি সময়ই বলবে।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন