স্বপ্ন আর দূরদর্শিতায় অনন্য ছাপ রেখে গেলেন লিঞ্চ

প্রখ্যাত আমেরিকান চলচ্চিত্র পরিচালক ডেভিড লিঞ্চ পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে। বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ১২টার সময় পরিবারের পক্ষ থেকে তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছে। মৃত্যুকালে ডেভিড লিঞ্চের বয়স হয়েছিলো ৭৮ বছর। এ বর্ষীয়ন নির্মাতার প্রয়ানে হলিউড হারাল এক ভিশনারি নির্মাতাকে।

 


 

লিঞ্চ ছিলেন হলিউডের আইকনিক একজন নির্মাতা। সব সিনেমা নির্মাতাকে শিল্পী বলা হয় না। নির্মাতাদের অনেকে নিছক একজন নির্মাতা। কেউ কেউ গল্প কথক।

কেউ আবার স্বাপ্নিক। তারা দূর ভবিষ্যৎকে দেখেন। কিংবা নিজের সিনেমার গল্পটাকে দেখেন স্বপ্নের মতো করে। তাকে বলা হয় সিনেমার অন্যতম ভিশনারি নির্মাতা।

যেমন, অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র ডুনের উদাহরণটিই তার দুরদৃষ্টিতার ভিশন সম্পর্কে জানান দেয়। গত দু-তিন বছরে সবচেয়ে আলোচিত সিনেমার অন্যতম ‘ডুন’। দুই পর্বে সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন দেনি ভিলেনোভ। সাহিত্য ও সিনেমার দুনিয়ায় একটি কথা প্রচলিত ছিল—ফ্র্যাংক হারবার্টের ডুন থেকে সিনেমা নির্মাণ অসম্ভব। কিন্তু দেনি তা করে দেখিয়েছেন।

২০২১ সালে মুক্তি পায় সিনেমাটি। ভিএফএক্সের অসাধারণ কাজের জন্য সিনেমাটি অস্কারেও পুরস্কৃত হয়। এ শতকে প্রযুক্তির প্রভূত উন্নতি হয়েছে। হারবার্টের সায়েন্স ফিকশন তাই পর্দায় তুলে ধরতে পেরেছেন ভিলেনোভ। কিন্তু আরো প্রায় চার দশক আগে সে চেষ্টা করেছিলেন ডেভিড লিঞ্চ। তার নির্মাণে ১৯৮৪ সালে মুক্তি পায় ‘ডুন’। প্রযুক্তির উন্নতি তখনো এখনকার মতো হয়নি। কিন্তু লিঞ্চ চেষ্টা করেছিলেন হারবার্টের উপন্যাসকে বাস্তবে নিয়ে আসতে।

 


 

লিঞ্চের জন্ম ১৯৪৬ সালে মন্টানার মিসোলে। তার বাবা ডোনাল্ড ওয়াল্টন লিঞ্চ আমেরিকার কৃষি বিভাগের একজন গবেষক ছিলেন। মা এডুইনা লিঞ্চ ছিলেন ইংরেজির শিক্ষক। ষাটের দশকের শেষে লিঞ্চ ভার্জিনিয়ায় যান। এরপর তিনি ভর্তি হন পেনসিলভানিয়া একাডেমি অব দ্য ফাইন আর্টসে। সেখানেই তিনি নির্মাণ করেন তার প্রথম শর্ট ফিল্ম। ১৯৬৭ সালে নির্মিত এ শর্ট ফিল্মের নাম ‘সিক্স মেন গেটিং সিক (সিক্স টাইম)’। এরপর তিনি পেইন্টিং থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণের বিষয়ে আগ্রহী হন। পরের বছর দি অ্যালফাবেট নামে একটা ৪ মিনিটের শর্ট ফিল্মও বানিয়েছিলেন।

প্রথম সিনেমা মুক্তি পায় ১৯৭৭ সালে। ইরেজারহেড নামের সিনেমাটি নির্মাণের সময় তার পরিকল্পনা ছিল এর দৈর্ঘ্য হবে ৪২ মিনিট। শেষ পর্যন্ত তা হয়েছিল ৮৯ মিনিট। মাত্র ২১ পৃষ্ঠার চিত্রনাট্যটি তিনি পর্দায় এনেছিলেন। যার কাজ শুরু হয়েছিল মূলত ১৯৭২ সালে। এরপর নানা বাধাবিপত্তি পার করে সিনেমাটি শেষ হয় ১৯৭৬ সালে। কান উৎসবে মুক্তি দেয়ার চেষ্টা করেন লিঞ্চ কিন্তু অনেকে সিনেমাটি পছন্দ করেননি। অবশেষে নির্মাণ শুরুর পাঁচ বছর পর মুক্তি পায় এটি। প্রথম সিনেমা দিয়েই দর্শক-সমালোচকের নজর কেড়েছিলেন ডেভিড। এ সিনেমাকে ‘মোস্ট অথেনটিক ড্রিম-মুভি’ বলে থাকেন সমালোচকদের অনেকে।


 

লিঞ্চের অন্যান্য সিনেমার ক্ষেত্রেও স্বপ্ন দেখা গেছে। তবে সেসব ছিল সিনেমা বা গল্প বলার ধরনের স্বপ্ন। মানে নির্মাতা যেভাবে একটা সিনেমার স্বপ্ন দেখেন। তার সিনেমাকে অনেকে অনেকভাবে ব্যাখ্যা করেন। সিনেমা তিনি নির্মাণও করেছেন বহু বিচিত্র বিষয়ের ওপর। ১৯৮০ সালে মুক্তি পায় ‘দি এলিফ্যান্ট ম্যান’। বডি হরর বা মানুষের জীবনে কোনো ঘটনার কারণে বদলে যাওয়া শরীর নিয়ে তাকে কিসের মধ্য দিয়ে যেতে হয় তা দেখিয়েছেন তিনি। মনোনয়ন পেয়েছিলেন অস্কারের জন্য।

এরপর নয়্যার জনরায় এগিয়েছিলেন লিঞ্চ। এসেছিল ‘ব্লু ভেলভেট’। ১৯৮৬ সালের সিনেমাটি নিয়ে এখনো সিনেমার নির্মাতারা গবেষণা করেন। তার সবচেয়ে আলোচিত দুটো সিনেমার একটা ‘টুইন পিকস’। অন্যটি সম্ভবত ‘মুলহল্যান্ড ড্রাইভ’। সিনেমার বিশ্লেষক-সমালোচক ওয়েইন গ্লেইবারম্যানের মতে, ব্লু ভেলভেট লিঞ্চের শ্রেষ্ঠতম সিনেমা। ক্লিনিক্যাল হররের যে গল্প তিনি দি এলিফ্যান্ট ম্যানে বলেছেন তা সচরাচর দেখা যায় না। মুলহল্যান্ড ড্রাইভ মূলধারার মার্কিন দর্শকের দারুণ পছন্দের।

আলাপ শুরু হয়েছিল ডুন দিয়ে। ১৯৮৪ সালের এ সিনেমা লিঞ্চকে বেশি কিছু দেয়নি। বরং বুঝিয়েছিল এ ধারার সিনেমা নির্মাণ না করাই ভালো। কেননা এ ধারার সিনেমা নির্মাণের মতো প্রযুক্তি, বাজেট তখন ছিল না। তবু তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন। তার ফলই হয়তো ২০২১ সালে নতুন করে ডুন আসা। কিন্তু ইরেজারহেড থেকে শুরু করে মুলহল্যান্ড ড্রাইভ, দ্য স্টেইট স্টোরি, ডুন—সবকিছুর মধ্যেই লিঞ্চের স্বপ্ন আছে। ২০২৫ সালের ১৬ জানুয়ারি ধরাধাম ত্যাগ করলেও লিঞ্চের স্বপ্ন আর দূরদর্শিতা তাই থেকে যাবে সিনেমাওয়ালাদের মধ্যে।

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন