জিবি নিউজ প্রতিনিধি//
হবিগঞ্জ–৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবু জাহির ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সব সম্পদ জব্দের (ক্রোক) আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এ–সংক্রান্ত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বুধবার বিকেলে হবিগঞ্জের সিনিয়র স্পেশাল জজ জেসমিন আরা বেগম এ আদেশ দেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, দুদকের পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয়, সাবেক এই সংসদ সদস্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সাড়ে ১০ কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে অনুসন্ধান করছে দুদক। এ অনুসন্ধান চলা অবস্থায় সব সম্পদ জব্দের আবেদন জানালে আদালত তা মঞ্জুরের পাশাপাশি হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসককে রিসিভার নিয়োগের আদেশ দিয়েছেন। দুদকের প্যানেল আইনজীবী মোহাম্মদ শামসুল হক আদেশের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, সাবেক এমপি আবু জাহির ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা গত ১৫-১৬ বছরে জ্ঞাত আয়বহির্ভূতভাবে বিপুল সম্পদের মালিক হয়ে ওঠেন। তাঁর বিরুদ্ধে ভূমিদস্যুতা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনিয়ম–দুর্নীতির অভিযোগের পাশাপাশি সরকারি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করার নানা অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের অনুসন্ধান করছে দুদক হবিগঞ্জ জেলা কার্যালয়।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সংসদ সদস্যের নামে ঢাকার গুলশানে অ্যাপার্টমেন্ট ও হবিগঞ্জ শহরে টাউন হল এলাকার বাসাসহ নয়টি স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য দেখানো হয় ৩ কোটি ১১ লাখ ২৩ হাজার ৮০০ টাকা। স্ত্রী আলেয়া আক্তারের নামে ৯৯ লাখ ১০ হাজার ১০০ টাকা, ছেলে ইফাত জামিলের নামে ৫৯ লাখ ৭৭ হাজার ও মেয়ে আরিফা আক্তার মুক্তির ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার সম্পদ রয়েছে। এ ছাড়া তাঁর ভাই বদরুল আলমের নামে রয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকার সম্পদ। এ ছাড়া আবু জাহিরের ১ কোটি ৩৯ লাখ ২ হাজার ৭০৬ টাকা মূল্যের একটি জিপ ও একটি প্রাইভেট কার রয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে মেয়ে মুক্তির নামে ১৪ লাখ ৫৯ হাজার ৬৬২ টাকা, আবু জাহির ও ভাই আল আমিনের যৌথ নামে ২৬ লাখ ১১ হাজার ১১৪ টাকা এবং আল আমিনের নামে ২৫ লাখ টাকা জমা রয়েছে।
শেয়ারবাজারে ছেলে ইফাত জামিলের ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৩৩ টাকা, মেয়ে মুক্তির ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮২৩ টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। আমেরিকান লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে (বর্তমান মেট লাইফ) আবু জাহিরের ১৯ লাখ ২০ হাজার, স্ত্রী আলেয়া আক্তারের ১৮ লাখ ৯৩ হাজার, ছেলে ইফাত জামিলের ৩৩ লাখ ১৯ হাজার ও ভাই বদরুলের নামে ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৫৮৮ টাকার বিমা রয়েছে।
দুদক আদালতকে আরও জানায়, এসব সম্পদ তাঁরা বিক্রি, হস্তান্তর বা বেহাত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন বলে দুদক গোপন সূত্রে খবর পেয়েছে। অভিযোগ নিষ্পত্তির আগে বর্ণিত সম্পদ হস্তান্তর বা স্থানান্তর হয়ে গেলে রাষ্ট্রের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় জেলা প্রশাসককে রিসিভার নিয়োগ করা জরুরি বলে আদালতকে জানায়।
দুদক হবিগঞ্জের সহকারী পরিচালক এরশাদ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য আবু জাহিরের বিষয়ে অনুসন্ধান করছে দুদক। এ অনুসন্ধান চলমান অবস্থায় উল্লিখিত সম্পদের বিবরণ পাওয়া গেছে। তদন্তে হয়তো আরও তথ্য বের হয়ে আসবে। অনুসন্ধান শেষে তাঁর বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হবে।
গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শহরে ছাত্র-জনতা মিছিল বের করলে আবু জাহিরের নেতৃত্বে জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালান। এ সময় আন্দোলনকারীরা ধাওয়া দিলে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা টাউন হল সড়কে আবু জাহিরের বাড়িতে আশ্রয় নেন। এরপর কয়েক হাজার ছাত্র-জনতা পুরো বাড়ি ঘিরে ফেলেন। এভাবে চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর ওই দিন রাত সাড়ে নয়টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি দল আবু জাহিরসহ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এর পর থেকে আবু জাহির ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন