গত ২১ জানুয়ারি বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সুইজারল্যান্ডে পৌঁছান। সফর শেষে ২৫ জানুয়ারি তিনি দেশে ফিরেছেন। এই সফরে তিনি বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সভা এবং অন্যান্য উচ্চ পর্যায়ের পার্শ্ব ইভেন্টের সময় কমপক্ষে ৪৭টি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন।
এই সফরের মধ্যেই ড. ইউনূস ক্ষমা চেয়েছেন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার এক প্রতিবেদনে জানায়, প্রচারিত ভিডিওটিতে ড. ইউনূস ক্ষমা চাননি। বরং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যাওয়া এক কিশোরের তার মাকে লেখা চিঠির বিষয়ে ড. ইউনূসের ‘কোট’ করা “if I don’t come back please forgive me” শীর্ষক মন্তব্যকে কাট করে তার (ইউনূস) নিজস্ব মন্তব্য দাবিতে বিকৃতভাবে প্রচার করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৩ জানুয়ারি ড. ইউনূস বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস শোয়াবের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের নানা বিষয় ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে তরুণদের আন্দোলনে সম্পৃক্ততার কথা বলতে গিয়ে আন্দোলনে যাওয়া এক কিশোর তার মাকে লেখা চিঠির বিষয়ে ‘কোট’ করে বলেন, “if I don’t come back please forgive me”। তার আলোচনার এই অংশটিই তার নিজস্ব মন্তব্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে করে ভিডিওতে ড. ইউনূসকে বলতে দেখা যায়, “if I don’t come back please forgive me, my friends are there, they are brave friends, I’m a brave person too” অর্থাৎ, যদি আমি ফিরে না আসি, তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমার বন্ধুরা সেখানে আছে, তারা সাহসী বন্ধু। আমিও একজন সাহসী মানুষ।
ভিডিওটিতে যমুনা টিভির লোগো রয়েছে।
এ ছাড়া ভিডিওতে ‘ডাভোস সুইজারল্যান্ড…’ লেখা দেখতে পাওয়া যায়।
এই তথ্যের সূত্র ধরে যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৩ জানুয়ারি ‘ডাভোসে বিভিন্ন সংস্থার প্রধানসহ ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠকে যা বললেন ড. ইউনূস | Switzerland | Jamuna TV’ শীর্ষক ক্যাপশনে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটিতে দেখা যায়, ড. ইউনূস বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস শোয়াবের সঙ্গে আলোচনা করছেন। এতে তাকে জুলাই বিপ্লব ও নানা বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেখা যায়।
ভিডিওটির প্রথম ২০ সেকেন্ড অংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
এটি ভিডিওটির ইন্ট্রো। কিন্তু মূল কথা ভিডিওর ১৪ মিনিট ২১ সেকেন্ড থেকে ১৪ মিনিট ৪০ সেকেন্ড অংশে রয়েছে।
ভিডিওটিতে এক পর্যায়ে ছাত্র আন্দোলনে তরুণদের কথা বলতে গিয়ে ড. ইউনূস বলেন, এই তরুণরা একে অপরের সঙ্গে নতুন করে জড়ো হয়েছিল। তাদের কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দর্শন ছিল না। আপনি হয়তো জিজ্ঞেস করবেন, তারা বামপন্থী কি? ইসলামপন্থী কি? সন্ত্রাসী কি? কিন্তু তারা কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণিতে পড়ে না। আপনার কাছে তাদের জন্য কোনো শ্রেণি নেই। দেখুন, সেখানে সবাই ছিল, সকল নাগরিক, সকল তরুণ, বয়স নির্বিশেষে।
আন্দোলনে যাওয়া এক কিশোর তার মাকে লেখা চিঠির কথা বলতে গিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ১২ বছরের এক কিশোর একটি চিঠি লিখেছিল, যা তার মা কান্না করে জনতার সামনে পড়ছিলেন। সে আমাকে (তার মাকে) লিখেছিল, মা, তুমি সবসময় আমাকে রক্ষা করেছ, যাতে আমি প্রতিবাদ মিছিলে না যাই। আমি ঘরে বসে খুব রাগ করছিলাম যে আমি আজ যেতে পারছি না। আজ আমি যাচ্ছি। তোমাকে বিদায় জানাচ্ছি। আমি জানি না আমি ফিরে আসব কি না। যদি না ফিরে আসি, তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমার বন্ধুরা সেখানে আছে, তারা সাহসী বন্ধু। আমিও একজন সাহসী মানুষ।
যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে অনুষ্ঠানটির একটি লাইভ ভিডিওও খুঁজে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে তরুণদের আন্দোলনে সম্পৃক্ততার কথা বলতে গিয়ে আন্দোলনে যাওয়া এক কিশোরের তার মাকে লেখা চিঠির বিষয়ে ‘কোট’ করে বলেন, “if I don’t come back please forgive me”। তার আলোচনার এই অংশটিই তার নিজস্ব মন্তব্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। সুতরাং, জুলাই আন্দোলনে যাওয়া এক কিশোরের লেখা চিঠির বিষয়ে ড. ইউনূসের ‘কোট’ করে বলা কথা ড. ইউনূসের নিজস্ব বক্তব্য দাবিতে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে, যা বিভ্রান্তিকর।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন