ট্রাম্পের ভবিষ্যত কোন পথে?জেল নাকি নিজেকেই ক্ষমা ঘোষণা

মোঃ নাসির, নিউ জার্সি (আমেরিকা) প্রতিনিধি ঃপ্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ ত্যাগের পর কি জেলে যাবেন? এ প্রশ্নটি এখন সর্বত্র ঘুরপাক খাচ্ছে। তৃতীয় বিশ্বের রাজনীতিতে ক্ষমতার পালা বদল ঘটলেই অনেক বিদায়ী সরকার প্রধানকে রাজ দরবার থেকে কারাগারের ঠিকানায় যেতে হয়। মন্ত্রী বা উপদেষ্টারাতো অহরহ জেলের ভাত খাচ্ছেনই। আমেরিকার প্রেসিডেনসিয়াল ইতিহাসে অবশ্য এ ধরনের নজির এখনও নেই। তবে মন্ত্রী বা উপদেষ্টাদের জেলে যাবার ঘটনা রয়েছে।  এবার জোড়েশোরেই তা নিয়ে আলোচনায় এসে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। নারীদের যৌন হয়রানি থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক কেলেংকারিতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়। বিদায়ী এই প্রেসিডেন্টকে জেলে যেতে হতে পারে শীর্ষক রিপোর্ট করেছে আমেরিকান সংবাদ মাধ্যম ‘এনবিসি’। অবশ্য ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার আগে নিজেই নিজেকে ‘ক্ষমা’ ঘোষণা করতে পারেন কিনা তার আইনগত দিকগুলো নিয়ে তাদের রিপোর্টে বিস্তর আলোচনা রয়েছে। ২০ জানুয়ারি দুপুরে জো বাইডেন শপথ নেবার সাথে সাথে ট্রাম্প জাতির চিফ এক্সিকিউটিভের চাকুরিটি হারাবেন। চলে যাবে সরকার প্রধান হিসেবে প্রাপ্ত বেনিফিট ও ইমিউনিটি। সকল রক্ষাকবচ মুহূর্তের মধ্যেই ধুলিসাৎ হয়ে যাবে। জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের কর্তা ব্যক্তিরাও তার পক্ষে আইনী সাফাই গাওয়ার জন্য আর সদা প্রস্তুত থাকবেন না। বিবেচিত হবেন প্রাইভেট সিটিজেন হিসেবে। যাকে বাংলায় বলে ‘আমজনতা’। সকল অপকর্ম মোকাবেলায় একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবেই তাকে আদালতের কাঠগোড়ায় দাঁড়াতে হবে।  প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মামলা আদালতে পেন্ডিং রয়েছে। আমেরিকার সর্বোচ্চ নির্বাহী হিসেবে ইমিউন বা রক্ষাকবচের আওতায় গত ৪টি বছর মামলাগুলো আলোর মুখ দেখেনি। উল্লেখযোগ্য মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে অথনৈতিক দুর্নীতি ও যৌন কেলেংকারি। ২০১৬ সালে নির্বাচনের আগে পর্ণো স্টার স্টরমি ডেনিয়েলসের যৌন হয়রানী নিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে তাকে দেয়া হয়েছিল ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার। যা আদালতে ট্রাম্পের আইনজীবী মাইকেল কোহেন স্বীকারও করেছেন। নিউইয়র্কের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে এখনও এ সংক্রান্ত মামলাটি পেন্ডিং রয়েছে প্রেসিডেন্টের ইমিউনিটি প্রেভিলেজের কারণে। ট্রাম্প অরগানাইজেশনের বিরুদ্ধে রয়েছে ক্রিমিনাল কনডাক্ট। যাতে কিনা তার পরিবারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ইনসুরেন্স ও ট্যাক্স ফ্রড রয়েছে। গত ১০ বছর তার প্রতিষ্ঠানগুলো কোন ফেডারেল ট্যাক্স প্রদান করেনি। মাত্র ২ বছর ৭৫০ ডলার করে ফেডারেল ট্যাক্স দিয়ে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করেছে। রয়েছে নির্বাচনী ক্যাম্পেইন ফাইন্যান্স অনিয়মের অভিযোগ। এনবিসি লিগ্যাল এনালিস্টের মতে, ব্যবসায় মিথ্যা তথ্য প্রদানের কারণে যে কারও জরিমানাসহ এক বছরের জেল হতে পারে। এ ধরনের মিথ্যাচারের ঘটনা ট্রাম্প সার্কেলে ভুরিভুরি।  প্রায় অর্ধ ডজন মহিলা প্রকাশ্যে টাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছে। তাদের মধ্যে কলামিস্ট ই জেন ক্যারোলের অভিযোগ অন্যতম। ২২ বছর আগে একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের ড্রেসিংরুমে ট্রাম্প তাকে ধর্ষণ করে। ইমিউন বেনিফিটের কারণে তার মামলাটি ঝুলে আছে। নিউইয়র্ক এটর্নি জেনারেলের অফিসে ঝুলে আছে ‘সেভেন স্প্রি স্টেট’ মামলা। যা কিনা আপস্টেট নিউইয়র্কে ২১২ একর সম্পত্তির দুর্নীতি। এছাড়াও রয়েছে ৪০ ওয়াল স্ট্রিট বিল্ডিং, শিকাগোর ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল হোটেল ও লস অ্যাঞ্জেলেসে ট্রাম্প ন্যাশনাল গল্ফ ক্লাব মামলা। ক্ষমতার রদ বদলের পর ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ান হস্তক্ষেপ ও ট্রাম্প ক্যাম্পেইনের ষড়যন্ত্র মামলা হতে পারে। যার মূল ভিত্তি হচ্ছে এফবিআই ডিরেক্টর মুলারের রিপোর্ট। যাতে বলা হয়েছে, ট্রাম্প দোষী হলেও এ রিপোর্টের ভিত্তিতে একজেসটিং কোন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে মামলা করা সম্ভব নয়।  এনবিসি লিখেছে, পেন্ডিং কেস, আগামীতে সম্ভাব্য মামলা ও জেল থেকে রক্ষা পেতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার আগে নিজেই নিজেকে পার্ডন ঘোষণা করতে পারেন। যাতে তিনি অতীত সকল দায় থেকে মুক্তি পেতে পাবেন। তবে তা কতটা আইনসিদ্ধ তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ১৯৭৪ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন পদত্যাগের ৪ দিন আগে নিজেই নিজেকে পার্ডন বা ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন। তা নাকচ হয়ে গিয়েছিল। অবশ্য পরবর্তী প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ড নিক্সনকে সাধারণ ক্ষমা দিয়েছিলেন।  নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পার্ডন করবেন? এ প্রশ্নও অনেকে তুলছেন। মার্কিন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০ জানুয়ারির আগে ট্রাম্প পদত্যাগ করে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের কাছে দায়িত্ব দিতে পারে। যাতে সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীর আলেকে ট্রাম্প দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করবেন। ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট পেন্স ট্রাম্পকে পার্ডন করবেন। তা’হলেই ট্রাম্প একটি নিরাপদ, জেল ও মামলামুক্ত ভবিষ্যত জীবন পেতে পারেন। তবে এ পার্ডনের আওতায় শুধু ফেডারেল কোর্টের আওতায় মামলাগুলো বিবেচিত হবে। স্টেটের মামলা বিবেচিত হবে না।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন