চীনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) কোম্পানি ডিপসিকের দ্রুত উত্থানকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি খাতের জন্য ‘সতর্ক সংকেত’ বলে উল্লেখ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনা প্রতিষ্ঠানটি তাদের নতুন এআই মডেল ‘আর১’ উন্মোচন করার পর ওয়াল স্ট্রিটে বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
ডিপসিকের দাবি, তাদের আর১ মডেলটি প্রতিদ্বন্দ্বী মডেলগুলোর তুলনায় অনেক কম খরচে তৈরি হয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের এআই শিল্পের ভবিষ্যৎ ও মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ কৌশল নিয়ে রীতিমতো প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
ডিপসিকের জনপ্রিয়তা হু হু করে বাড়তে থাকার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের দরে বড় ধস নেমেছে। বিশেষ করে, চিপ নির্মাতা এনভিডিয়া প্রায় ৬০ হাজার কোটি ডলার বাজারমূল্য হারিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, যদি কম খরচে একই ফলাফল পাওয়া যায়, তবে এটি আমাদের জন্য ইতিবাচক।
তবে এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সামনে তিনি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনো এআই শিল্পে শীর্ষে রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
ডিপসিক কী?
ডিপসিক একটি চীনা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স কোম্পানি, যার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল দক্ষিণ-পূর্ব চীনের শহর হাংঝুতে।
কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা হয় ২০২৩ সালের জুলাইয়ে। তবে তাদের জনপ্রিয় এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাপ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ছাড়া হয় এ বছরের ১০ জানুয়ারি।
অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর ও ডিপসিকের ওয়েবসাইট থেকে এআই অ্যাপটি বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যাচ্ছে। ফ্রি এই অ্যাপ খুব অল্প সময়ের মধ্যেই অ্যাপ স্টোরে ডাউনলোড হওয়া শীর্ষ অ্যাপে পরিণত হয়েছে। তবে কিছু মানুষ এমনও রিপোর্ট করেছেন, তাদের এই অ্যাপে সাইন আপ করতে ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে।
কী করে এই অ্যাপ?
ডিপসিক জনপ্রিয় হয়েছে এর শক্তিশালী এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট টুলের জন্য। এর মূল প্রতিষ্ঠান বলছে, তাদের নতুন এআই মডেল বাজারের শীর্ষ এআই মডেল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক চ্যাটজিপিটির সমকক্ষ। তবে চ্যাটজিপিটির তুলনায় তাদের এআই মডেল তৈরিতে খরচ হয়েছে বহুগুণ কম।
অ্যাপ স্টোরে দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী, এটি তৈরি হয়েছে ‘আপনার কর্মদক্ষতা বাড়াতে এবং আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে।’
মার্কিন কোম্পানিগুলো কেন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে?
বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক এআই অ্যাপগুলো তৈরিতে যে খরচ হয়েছে, তার চেয়ে অনেক কম খরচ হয়েছে ডিপসিক তৈরিতে। মার্কিন অ্যাপগুলোর তুলনায় কয়েকশ কোটি ডলার কম খরচ হয়েছে ডিপসিক তৈরি করতে। আর খরচের এই তারতম্যের কারণে এআইয়ের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের টিকে থাকা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
ডিপসিকের অ্যাপ তৈরিতে কম খরচ হওয়ার বিষয়টি গত ২৭ জানুয়ারি পুঁজিবাজারের হিসাব বদলে দিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে চিপ তৈরিকারক প্রতিষ্ঠান ও ডেটা সেন্টারের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারে বড় অংকের পরিবর্তন এসেছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়া, যারা এআই পরিচালনার জন্য শক্তিশালী চিপ তৈরি করে থাকে।
সোমবার তাদের বাজার মূল্য কমেছে ৬০ হাজার কোটি ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একদিনের হিসাবে কোনো একটি কোম্পানির জন্য সর্বোচ্চ।
ডিপসিক তাদের এআই’র জন্য এনভিডিয়ার তুলনায় অনেক কম দামি ও কম জটিল প্রযুক্তি ব্যবহার করে। ডিপসিকের সাম্প্রতিক সাফল্য বিশ্বের শীর্ষ এআই চিপ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন এক বাস্তবতার সামনে ফেলেছে।
এতদিন একটা সাধারণ ধারণা ছিল যে, এআই’কে উন্নত করার জন্য বড় বাজেট এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি চিপ অবশ্য প্রয়োজনীয়। তবে ডিপসিকের সাম্প্রতিক সাফল্য এই ধারণাকে এবং ভবিষ্যতে এআইয়ের বাজারকে বদলে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন